পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরবত্তী বাদসাহগণ VRA করিতে অনুরোধ করিলেন । কিন্তু মীরজাফর পাথরের মত নিশ্চল থাকিয়া নবাবের সাগ্ৰহ অনুরোধের উত্তরে বলিলেন, “আজ রাত্ৰি হইয়াছে, কাল সমস্ত ব্যবস্থা করা যাইবে।” উত্তরে নবাব বলিলেন, “আজ যুদ্ধ বন্ধ করিলে যে প্ৰমাদ হইবে-রাত্রে শত্রুরা শিবির আক্রমণ করিবে।” মীরজাফর বলিলেন, “সে ভার আমার উপর দিয়া আপনি নিশ্চিন্ত থাকিতে পারেন ।” মুতক্ষরীনের পাদটীকায় লিখিত আছে, “সিরাজ এই অবস্থায় মীরজাফরের সঙ্গে যে সকল কথাবার্তা বলিয়াছিলেন, তাহা বুদ্ধিহীন বা অত্যাচারী রাজার মত আদৌ নহে। সকৎজঙ্গের পরিজনবৰ্গ ও সন্তানগণের প্রতি তিনি যেরূপ সদায় ব্যবহার করিয়াছিলেন এবং গোলাম হুসেনের স্বগণদিগকে তিনি যেরূপ দিয়া দেখাইয়াছিলেন, তাহাতে বুদ্ধি বা বিচক্ষণতার অভাব কিছুমাত্র দৃষ্ট হয় না, তিনি অত্যাচারী ছিলেন——একথা তো একেবারেই বলা চলে না। ইনি বাল্যকালে অত্যধিক স্নেহে লালিতপালিত হইয়া সৎশিক্ষা পান নাই, এবং যখন র্তাহার কিছু কাল স্কুলে থাকা উচিত ছিল,-তখন হঠাৎ তিনি সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হইয়া পড়িলেন।” মোহনলাল পুনৰ্বার বেগে ইংরেজাদিগকে আক্রমণ করিলেন । গোলাম হুসেন এবং রাজীবলোচনা উভয়েই লিখিয়াছেন-ইংরেজের বিপৰ্য্যস্ত হইলেন । জয়লক্ষ্মী নবাবের দিকে সবে মাত্ৰ প্ৰসন্নবদন ফিরাইবেন, তখনই মীরজাফর আদেশ দিলেন, “আজ যুদ্ধ বন্ধ করিয়া দাও।” মোহনলাল তীব্ৰস্বরে বলিয়া পাঠাইলেন, “এই কি যুদ্ধ থামাইবার সময় ? আমি কিছুতেই এই অন্যায় আদেশ পালন করিব না, তাহা হইলে আমার সৈন্যেরা নিরুৎসাহ হইবে, এবং ইংরেজেরা সোৎসাহে পশ্চাৎ হইতে আসিয়া আমাদিগকে ধ্বংস করিয়া ফেলিবে।” নবাবের এই কথাগুলি খুব মনে লাগিল, কিন্তু মীরজাফর বলিলেন, “তাহা হইলে হুজুরের যাহা মৰ্জি, তাহাই করুন— আমি আর কি করিব।” যে ব্যক্তি তাহার কঁধে চাপিয়া তাঁহাকে অতলে ডুবাইবে, অশুভ মুহূৰ্ত্তে শনির কোপে নবাব সেই মীরজাফরকেই আশ্রয় করিলেন। তঁহাকে চটাইতে ভয় করিয়া মোহনলালকে যুদ্ধ করিতে বারংবার নিষেধ করিয়া পাঠাইলেন। নিতান্ত নিরাশ ও বিরক্ত হইয়া মোহনলাল কৃপাণ ত্যাগ করিয়া যুদ্ধক্ষেত্র হইতে হটিয়া আসিলেন। তখন শত্রুরা সোৎসাহে তাহার সৈন্যদিগকে আক্ৰমণ করিল। মোহনলাল চলিয়া গিয়াছিলেন—তখন ইংরেজদের বিজয় সম্পূর্ণ হইল। গোলাম হুসেনের বিবরণানুসারে মোহনলাল বন্দী ও আহত হইয়া দুর্লভরামের হাতে সমপিত হন, তথায় অল্প পরেই তিনি নিহত হন। কিন্তু রাজীবলোচন লিখিয়াছেন—যুদ্ধক্ষেত্রে যখন মীরজাফরের আদেশ বারংবার লঙ্ঘন করিয়াও তিনি যুদ্ধ করিতেছিলেন, তখন মীরজাফরের এক চর পশ্চাৎ ভাগ হইতে গুলি করিয়া তীহাকে নিহত করে। যুদ্ধ সমাপ্ত হইবার পূর্বেই মীরজাফর সৈন্যদল লইয়া ইংরেজদের সঙ্গে মিলিত হইয়াছিলেন। হতভাগ্য নবাব এখন আর রাজপ্রাসাদের লোকজন কাহাকেও বিশ্বাস করিতে পারিলেন না, কে তাহার গলায় ছুরি দিবে, ঠিকানা নাই। তিনি তাহার বেগম। লুৎফুন্নেসা এবং বহুমূল্য কতকগুলি মণিমুক্ত লইয়া মুর্শিদাবাদ ছাড়িয়া চলিলেন। তিনি তাহার