পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WIMP বৃহৎ বঙ্গ দিয়াছিলেন। পাঠানদের সময়ে হিন্দুর প্রকৃত দাসত্ব আরম্ভ হয় নাই। পূর্বকালে জরাসন্ধ ও পৌণ্ড, বাসুদেব যেরূপ মথুৱা, ও দ্বারকার বিরুদ্ধে অভিযান করিয়াছিলেন, ষোড়শ শতাব্দীর বঙ্গের নগণ্য জমিদারেরাও সেইরূপ দিল্লীশ্বরের বিরুদ্ধে অস্ত্ৰধারণ করিয়া যুদ্ধোদেযাগ করিয়াছিলেন। এমন কি প্রতাপাদিত্য মানসিংহকে পরাস্ত করিয়া আগ্রার রাজধানী পৰ্য্যন্ত যাইবেন, ভারতচন্দ্ৰ কবি তাহার এই ইচ্ছা আভাসে জানাইয়াছেন (“ যমুনার জলে ধোব এই তরবার” ), দিল্লী, মথুৱা প্ৰভৃতি অঞ্চলের প্রতি এই বিদ্বেষ বাঙ্গালীর চিরসংস্কারাগত। মহারথীরা পূর্বকাল হইতে পূৰ্ব্বভারতকে ভয় করিয়া চলিতেন। জগজ্জয়ী আলেকজাণ্ডার পূৰ্বাঞ্চলের নাম শুনিয়া পৃষ্ঠভঙ্গ দিয়াছিলেন। স্বয়ং মঃ ইবন ব্যক্তিয়ার খাঁ এদেশের স্বাধীনতা মাত্র হরণ করিয়া আরো পূর্বে অভিযান করিবার চেষ্টায় নানারূপে লাঞ্ছিত হইয়া প্রাণ হারাইয়াছিলেন। এদেশ ইতিহাসের পূর্বযুগ ইহতে ইন্দ্ৰপ্ৰস্থের আনুগত্যের বিরোধী। পুরাণের affNSE \e svg যুঁগ ছাড়িয়া দিলেও ইদানীং কালে প্রতাপাদিত্য, তৎপুত্ৰ উদয়াদিত্য, fritf মুকুন্দরাম, তৎপুত্ৰ সত্ৰাজিৎ এবং কেদার রায়, ইশা খা, ফিরোজ খাঁ সেই ইন্দ্ৰপ্ৰস্থ-বিরোধী পতাকা বহন করিয়া প্ৰাণ দিয়াছেন, কিন্তু পাণ ছাড়েন নাই । পাঠান-রাজত্ব পৰ্য্যন্ত হিন্দুদিগের এই স্বাধীনতার চেষ্টা সৰ্ব্বত্ৰ চলিয়াছিল। পাঠানেরা ভূম্যধিকারী ছিলেন না, তাহারা ছিলেন রণক্ষেত্রের বীর। ---সংগ্রামবিজয়ী। কৃষি-ব্যবসায়, বাণিজ্য, দেশের উৎপাদিকা শক্তি এবং তজ্জাত অৰ্থাগম—এসকল বিষয় অসহিষ্ণু, সততকৃপাণপাণি, রূণজয়ী বীরগণের কল্পনাকে আকর্ষণ করিতে পারে নাই। তঁহারা ব্যবসায়-বাণিজ্য জানিতেন না ; কি জমির কত আয় হইতে পারে, রাজস্ব কত হওয়া উচিত—এসকল লইয়া তাহারা মাথা ঘামাইতেন না। অর্থের প্রয়োজন হইলে নিকটবৰ্ত্তী কোন রাজভাণ্ডার বা দেবমন্দির লুণ্ঠন করিতেন, তাহাতে র্তাহাদের ঐহিক-পারিত্রিক উভয় প্রকারের সুফল লাভ হইত। শুধু শের সাহ ও হুসেন সাহ জমিজমার আত্মসম্বন্ধে খবর রাখিতেন, অপরাপর পাঠান নবাবের দিনরাত্র যুদ্ধের উদেযাগ ও সেই চিন্তাই করিতেন । যাহারা অর্থের চিন্তা হইতে মুক্ত থাকেন, তাহদের মন স্বভাবতঃই উদার হয়। পাঠান নবাবদের কতকটা সেরূপ উদারতা ছিল । এই সুযোগে এদেশে হিন্দুৱ\ বাণিজ্যাদি দ্বাঝ\ বিপুল অৰ্থশালী হইয়\উঠিয়ছিলেন । সেই ধনকুবেরদের শেষ দীপশিখা পরবন্তী কালে জগৎশেঠের গৃহ হইতে জলিয়াছিল। ঐতিহাসিকেরা লিখিয়াছেন, জগৎ শেঠের মত ধনী তখন পৃথিবীতে ছিল না। পাঠানাধিকারে হিন্দু শিল্পিগণই হিন্দু-মুসলমান সকল নৃপতিবৃন্দ ও গণ্যমান্য লোকের উৎসাহ পাইত। বিদেশ হইতে পাঠান। নবাবের শিল্পী বেশী আনাইয়াছেন বলিয়া মনে হয় না। যাহারা প্ৰস্তর ও স্বর্ণরৌপ্যের বিগ্ৰহ নিৰ্ম্মাণ করিত, পাঠানদের অত্যাচারে তাহারা একেবারে উন্মলিত হইয়াছিল। হাভেল সাহেব পরিষ্কাররূপে প্ৰতিপন্ন করিয়াছেন যে, ভারতবর্ষে মোগল ও পাঠানশিল্প বলিয়া যাহা সচরাচর কথিত হইয়া থাকে, তাহা বৌদ্ধ ও হিন্দু শিল্পেরই মূলতঃ রূপান্তর। হি শিল্প।