পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিক্ষা-দীক্ষার কথা rty's বাদশাহদের অন্দর মহলে ছবি যাইবে, বেগম, বাদাসা, নবাব ও রাজপুরুষদের ছবি আঁকিতে হইবে, চিত্রকর তুলি ধরিয়া রং ঘষিতে ঘষিতে বর্ণের ভিতর এরূপ পরিমার্জনা, এরূপ অলৌকিক লাবণ্য ফুটাইয়া তুলিয়াছে যে, তাহার সমকক্ষতা করা সহজ নহে। চিত্রকর জানে, ছবিখানি ভাল হইলে তাহার আজীবনের ভরণপোষণের ব্যবস্থা হইয়া যাইবে, বিশ্ৰী হইলে হয়ত তাহার মুণ্ড যাইবে-এইজন্য নূৰ জাহান, মমতাজ, জাহাঙ্গীর, সাজাহান প্ৰভৃতির ছবি হাতীর দাতের উপর আঁকিতে যাইয়া তাহারা যত্নের কোন ত্রুটি করে নাই। এক কথায় বলিতে গেলে তাহারা প্ৰাণপণ করিয়াছে। কিন্তু এত যত্নের আঁকা ছবি কি সেই আধ্যাত্মিক সম্পদ দিতে পারিবে, যদ্বারা হিন্দু বা বৌদ্ধ শিল্পী কোন দেবতা বা দেবপ্রতিম ব্যক্তির মূৰ্ত্তিতে সেই দেবত্ব পরিস্ফুট করিয়া তুলিয়াছে ? দৃষ্টান্ত স্থলে বুদ্ধের সেই অনির্বচনীয় মূৰ্ত্তির কথা বলা যাইতে পারে, যাহাতে অজন্তাগুহা উজ্জ্বল হইয়া আছে।--যেখানে কুলারমণী ভিক্ষা দিতে আসিয়া মুগ্ধ হইয়া দাড়াইয়া আছেন। র্তাহার শিশুপুত্রের হাতে ভিক্ষাভাণ্ড, সেই অলৌকিক প্ৰভাসম্পন্ন ব্যক্তিকে দেখিয়া শিশু ভুলিয়া গিয়াছে; ভিক্ষা দেওয়ার কথা যেন মনে নাই; কিংবা চৈতন্যদেবের গঙ্গার কুলে সেই অপূৰ্ব্ব নৃত্যের ছবিখানি, যাহাতে র্তাহার মূৰ্ত্তি দেখিয়া মাঝি লাগি হাতে দাড়াইয়া আছে-নৌকা বাহিতে ভুলিয়া গিয়াছে, নৌকার স্বামীর হাতের হুক হইতে কন্ধে পড়িয়া গিয়াছে, তাহার হুস নাই; অথবা কাঠের উপর সেই অপুৰ্ব্ব মাতৃমূৰ্ত্তি—যাহার মাথার মুকুট মাতৃগরিমার দ্যোতনা করিতেছে, অঙ্ক স্থিত শিশুর স্তন্যদানের সময়ে তাহার ভাবগম্ভীর মুখে দেহের মহিমা ফুটিয়া উঠিয়াছে। মোগল আর্ট অতি সুচিন্তিত, অত সুদক্ষ কারিগরী ও সাবধানতার পরিচায়ক হইয়াও কি ভক্তের বা সাধকের একটানে অবলীলাক্রমে আঁকা ছবির সমকক্ষতা করিতে পারিয়াছে ? শুক্রনীতি মানুষের ছবি আঁকিতে নিষেধ করিয়া শুধু দেবতার ছবি আঁকিতে উপদেশ দিয়াছে ; কেন এই নিষেধ-বিধি তাহা পূর্বোক্ত বিষয়টি আলোচনা করিলেই বুঝা যাইবে । সকলেই অবগত আছেন। আরঙ্গজেবের অত্যাচারে আগ্রার শিল্পীরা রাজধানী ত্যাগ করিয়াছিল ! হাভেল সাহেব বলিয়াছেন।--তাহারা রাজপুতনায় যাইয়া রাজাদের আশ্রয় লাইল। এইখানে তাহারা যে সকল ছবি আঁকিয়াছে তাহা কতকটা মোগল-শিল্পের পরিচ্ছন্ন ভাব ও কতকটা হিন্দুর আধ্যাত্মিকতা বজায় রাখিয়াছে। মানসিংহের পর হইতে রাজপুতনার সঙ্গে বাঙ্গালীদের একটু বেশী মেশামিশি হইয়াছিল। সপ্তদশ শতাব্দীতে সংগ্ৰামসিংহ একেবারে বাঙ্গালীর সঙ্গে মিশিয়া বাঙ্গালী হইয়া গিয়াছিলেন । স্বয়ং মানসিংহ কুচবেহারের রাজকন্যা এবং কেদার রায়ের কন্যা বিবাহ করেন, ইহা ছাড়া তিনি বঙ্গদেশ হইতে আরও অনেক রমণী লইয়া গিয়া অন্দরমহলে পুরিয়াছিলেন। মোগল বাদশাগণ প্রায়ই বহু বিবাহিত পত্নী ও বহু উপরাজী অন্দরমহলে রাখিতেন, মানসিংহ এ বিষয়ে তাহার। প্ৰভুদের অনুকরণ করিয়াছিলেন। সনাতন ও জীবগোস্বামীর কৃপায় রাজ রাজপুত-শিল্প। পুতনার অনেক রাজা গৌড়ীয় বৈষ্ণবধৰ্ম্ম গ্ৰহণ করিয়াছিলেন। তাহারা বাঙ্গলাদেশ হইতে ব্ৰাহ্মণ লইয়া গিয়া পুরোহিত নিযুক্ত করিতেন, এইভাবে