পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিক্ষা-দীক্ষার কথা b's)> কোনরূপ কৃতজ্ঞতা বা কৃতিত্বের পরিচয়-প্রদর্শনের দৃষ্টান্ত না পাইলে সহজে স্বরাজ্য-তাড়িত রাজকুমারকে পাৰ্ব্বত্যদেশের হিন্দুরা রাজপদে বরণ করিয়া লইবে কেন ? মঃ ইবন ব্যক্তিয়ার খিলজী শুনিয়া আসিয়াছিলেন আৰ্য্যাবৰ্ত্তে লক্ষ্মণসেন অপর সকল রাজার ধৰ্ম্মগুরু ছিলেন । সম্ভবতঃ এই আভিজাত্যের ফলে এবং সুরসেনের রণনৈপুণ্য কিংবা অপর কোন মহৎ গুণের পরিচয় পাইয়া ভূস্বৰ্গ কাশ্মীর ও অপরাপর দেশের লোকেরা মুসলমানকর্তৃক নিহত পূৰ্বরাজগণেীয় বংশধরের অভাবে, ইহার পুত্ৰগণকে স্বীয় স্বীয় রাজ্যের অধিকার ছাড়িয়া দিয়াছিলেন। বাজ হইয়া ইহারা অবশ্যই ঐসব দেশে বাঙ্গালী ভাস্কর ও বাঙ্গালী চিত্রকর লইয়া গিয়াছিলেন। শিল্পবিদগণ যাহাকে “কাঙ্গড়া কলম” নাম দিয়াছেন, তাহা খুব সম্ভব “বাঙ্গলা কলম।” বাঙ্গালী চিত্রকরেরাই এই চিত্রশালার প্রতিষ্ঠাতা। তাহা না হইলে কালীঘাটের প্রাচীন চিত্ৰপটগুলির সঙ্গে কাঙ্গড়া চিত্রপটের এরূপ আশ্চৰ্য্য সাদৃশ্য কেন হইবে ? আমরা একখানি মহাদেবের চিত্রে ও পরীর চিত্রে এবং অপরাপর কালীঘাটের চিত্রে যে অদ্ভূত লীলায়িত কালীর রেখাঙ্কন দেখিয়াছি, কাঙ্গড়ার অনেক চিত্রে ঠিক তাহাই আছে। বাঙ্গালী চিত্ৰকরেব কালীর রেখাগুলি সুস্পষ্ট ও তাহদের বঙ্কিমত্ব কাঙ্গড়ার ঐরাপ রেখাঙ্কন হইতে স্পষ্টতর। কাঙ্গড়ার সমীপবৰ্ত্তী দেশগুলির রাজপুত কি মোগল-শিল্পে কৃষ্ণরেখার এই লীলায়িত ভাব আদৌ নাই। কাঙ্গন্ডার চিত্রগুলির গণতন্ত্রতাও বাঙ্গালী চিত্রের অনুকুল । মোগলচিত্রের বাদসাহী ভাব এবং রাজপুত চিত্রেব দেবভাবের প্রাধান্য কাঙ্গড়াবা চিত্রে নাই। রাজপুত চিত্রের দেবতারা আসন জুড়িয়া বসিয়া থাকেন, তাহারা খুব সুন্দর হইলেও নড়াচড়াটা তাঁহাদের স্বভাববিকদ্ধ। কাঙ্গড়া ও বাঙ্গলার চিত্রে যে গতিশীলতা আছে-তােহা অনেকটা একরূপ । মোগলদের কতকগুলি চিত্রে বিশেষ একটা শিকার-চিত্রে গতি সুচিত হইয়াছো-কিন্তু সে গতিও যেন একটু সন্ত্রমাত্মক।। হরিণের ছুটিয়াছে-ক্ষিপ্ৰগতিতে, কিন্তু যে চাহনী তাহারা পশ্চাতে নিক্ষেপ করিতেছে তাহাতেও যেন শিকারী রাজকুমারের প্রতি একটা বিস্ময়বিমূঢ় আবেশ আছে। কাঙ্গড়াবা বৈষ্ণব চিত্রগুলি বাঙ্গালীর হাতের ছবির ন্যায়। এই চিত্রকরদের পূৰ্ব্বপুরুষেরা বাঙ্গলার লোক—এই ধারণার অনেক কারণ আছে। ১৯২১ সনের ‘রূপম৷ পত্রিকায় প্রকাশিত কাঙ্গড়ার একখানি স্বাধীনভাির্তৃকার ছবি লাহোর মিউজিয়ামে আছে। ভূতপূৰ্ব্ব স্কুল ইনস্পেক্টর এবং কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্ৰীযুক্ত নলিনীমোহন সান্যাল, এম. এ. মহাশয় তাহার “ভক্তপ্রবর মহাকবি সুরদাস” নামক পুস্তকের ভূমিকায় ( // পৃষ্ঠাষ )। সেই ছবিখানি সম্বন্ধে লিখিয়াছেন :-"এই ছবিতে বাঙ্গালী বৈষ্ণব কবিগণের গীতের ভাব এত সুস্পষ্ট যে বিস্মিত না হইয়া পারা যায় না।” বাঙ্গালীর সঙ্গে আৰ্য্যাবর্তের অপরাপর দেশের যে -ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ বা মেশামোশি ছিল ইতিহাসে তাহা উল্লিখিত হয় নাই। বৃন্দাবনে রূপ, সনাতন ও জীব গোস্বামীরা বৈষ্ণব-ধৰ্ম্ম নানা ভাবে প্রচার করিয়াছিলেন। গোবিন্দদাস তাহার পদ রচনা করিয়া জীব গোস্বামীর নিকট বৃন্দাবনে পাঠাইতেন। ঐ পদগুলি গোস্বামী মহাশয়ের নিকট বড়ই উপাদেয় মনে হইত। ব্ৰজবুলিতে লিখিত হওয়াতে