পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b's বৃহৎ বঙ্গ তাহা বৃন্দাবনে গাওয়া হইত। বঙ্গীয় কবি ও চিত্রকরেরা বাঙ্গালী কর্তৃক নবভাবে সৃষ্ট বৃন্দাবন তীর্থে নিশ্চয়ই যাতায়াত করিতেন। কাঙ্গড়ার চিত্রগুলির উপর বাঙ্গালীর এরূপ বেশী প্রভাবের কারণ সহজেই অনুমান করা যায়। বৌদ্ধযুগে শিক্ষা সাৰ্ব্বজনীন ছিল। যে কোন জাতির লোক শ্রমণ হইতে পারিতেন। বৌদ্ধ ভিক্ষু সৰ্ব্ববর্ণের মধ্যে দৃষ্ট হইত। বৌদ্ধ-সংস্কারগুলি কতক পরিমাণে এখনও বৈষ্ণবদিগের মধ্যে প্ৰচলিত দেখা যায়। যে কোন জাতি এখনও বৈষ্ণব হইতে পারেন। মুসলমানদের জন্যও তাহারা অর্গল বদ্ধ করিয়া রাখেন নাই। চৈতন্য-যুগের কথা ছাড়িয়া দিলে পরবর্তী যুগেও এই উদারতা অনেক পরিমাণে বজায় ছিল এবং এখনও আছে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে গঙ্গারাম মৈত্র নামক কুলীন ব্ৰাহ্মণ এক মুসলমানী ও তাহার ভ্রাতা আবদুলকে বৈষ্ণব করিয়া ভুষণা ও রূপদয়াল নাম রাখিয়াছিলেন। কিন্তু ইহা লইয়া বৈষ্ণব-সমাজে কোন বিশেষ গোলমাল হয় নাই । ( সামাজিক ইতিহাস, ১৫৪ পৃঃ ) মুসলমান হরিদাস, মুসলমানভাবাপন্ন এবং সম্পূর্ণরূপে জাতিচু্যত রূপ-সনাতন বৈষ্ণব-সমাজের শীর্ষস্থানীয় হইয়াছিলেন। মুসলমান সেনাপতি এবং আরবী পারসী প্ৰভৃতি শাস্ত্রে সুপণ্ডিত বিজলী খাঁ, শ্ৰীবাসের বাড়ীর মুসলমান দাবজী প্রভৃতির বৈষ্ণব-ধৰ্ম্মের প্রতি প্ৰবল অনুরাগ চৈতন্য প্রভুর সময়েই তাহার প্রভাবে ঘাঁটিয়াছিল। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমভাগে শুষ্ঠামানন্দ ধারেন্দা-বাহাদুরপুর নামক স্থানে শের খা নামক শক্তিশালী মুসলমান দাসু্যকে বৈষ্ণবধৰ্ম্মে দীক্ষিত করিয়াছিলেন। নিম্নজাতি বৈষ্ণবদলে এত ঢুকিয়াছিল যে, তাহারাই এখন “জাত-বৈষ্ণব’ দলের প্রধান শক্তি। সহজিয়া বৈষ্ণবদলে হিন্দু, খৃষ্টান, মুসলমান সৰ্ব্বজাতির একটা উৎকট সমন্বয় হইয়াছিল। সমাজের নিম্নস্তরে সহজিয়ারা বৌদ্ধ-সংস্কার এখনও বজায় রাখিয়াছে। সহজিয়াদের গুরু অনেকেই মুসলমান ছিলেন। ঢাকা জেলায় রোয়াইল গ্রামের নিকট খাবার বাসী পঞ্চুফকির মুসলমান-শত শত হিন্দু তীহার শিষ্য। সহজিয়াদের সাহেব-ধনী সম্প্রদায়ের গুরু ছিলেন মুসলমান। তঁহারই নামে সম্প্রদায়টির নাম হইয়াছে। কৃষ্ণনগরের নিকট সালিগ্ৰাম, দোগাছিয়া প্ৰভৃতি অঞ্চলে ইহাদের প্রধান আডিডা। ইহারা জাতিভেদ একেবারেই মানেন না। হিন্দু ও মুসলমান এক থালায় বসিয়া খান। ইহারা বিগ্রহ পূজা করেন না এবং নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি এরূপ গাঢ় রূপে অনুরক্ত যে পরস্পরের জন্য প্ৰাণ দিতেও প্ৰস্তুত হইতে পারেন। দরবেশী সম্প্রদায় সনাতনকর্তৃক স্থাপিত হইয়াছিল এরূপ প্ৰবাদ আছে। রামকেলীর নিকট চৈতন্যের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর হুসেন সাহের মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করিয়া পলায়নপর সনাতন কিয়াৎকালের জন্য দরবেশের ছদ্মবেশ পরিগ্ৰহ করিয়াছিলেন, এই হেতুতে প্রবাদটির উৎপত্তি হইয়া থাকিবে। দরবেশী সম্প্রদায়ের মূল শিক্ষা-“কেয়া হিন্দু কেয়া মুসলমান। মিলা-জুলকে কর সাইজীকো নাম।” (হিন্দুই কি মুসলমানই বা কি, একত্র মিলিত হইয়া সঁাইজীর নাম কর।) এখানে সঁাইজী শব্দ দ্বারা সনাতন গোস্বামীকে বুঝাইতেছে। (সাইজি গোসাইজি শব্দের অপভ্ৰংশ )। হজরতি সম্প্রদায়ের নেতা হিজরতের বাড়ী ছিল সর্বধৰ্ম্মের সমন্বয়-চেষ্টা ७ मश्ख्म्रिा ।