পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিক্ষা-দীক্ষার কথা b°I(' ভগবান, কিন্তু কোনদিকে নৌকা চলিবে, তাহার নিয়ন্ত ভগবান স্বয়ং হাল ধরিয়া আছেন। অর্থাৎ পুরুষকারের কিছু ক্ষমতা আছে-তােহা দাড় বাহা পৰ্যন্ত, কিন্তু দৈবই নিয়ন্তা ; যে ক্ষমতাটুকু আছে, তাহা ব্যবহার না করিয়া নিশ্চেষ্ট হইয়া থাকা উচিত নহে। আর মানবজীবনরূপ তরণী, তাহা তো তুফানের মধ্যে চলিবেই, কোন নৌকা এমন নাই, যাহা তুফানের হাতে পড়ে নাই। তুফানের দিকে লক্ষ্য করিতে নাই, তাহা হইলে ভয় পাইয়া নিশ্চেষ্ট হইয়া পড়িবে। তুফানে নৌকা চালাইবেন যিনি তিনি তো কর্ণধার-হাল ধরিয়া আছেন, উহাকে বিশ্বাস করিয়া তুমি দাড় বাহিয়া যাও। উপনিষদের “স ন বন্ধুর্জনয়িতা স এব বিধাতা” পদের ভাব গানের শেষ ছত্রটিতে স্পষ্ট । সহজিয়াদের অনেক কথাই ‘সন্ধ্যাভাষায়’ লিখিত, এই ভাষাভিজ্ঞ ভিন্ন কাহারও বুঝিবার সাধ্য নাই। শব্দের সাধারণ যে অর্থ, অনেক সময়ে সন্ধ্যাভাষায় তাহ ভিন্নার্থবোধক । সহজিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত না হইলে তাহারা সে সকল কুট অর্থ কাহাকেও বলিবে না। সমস্ত ধৰ্ম্ম ও সমাজের সংস্কারগুলি পদদলিত করিয়া যে সকল মত অসামান্য মৌলিকতা দেখাইয়া অতিরিক্ত সাহসিকতার সহিত কথিত হইয়াছে তাহ সাধারণ লোক শুনিলে বিদ্রোহী হইবে—-এজন্য সহজিয়ারা সন্ধ্যাভাষার সৃষ্টি করিতে বাধ্য হইয়াছিল। “সে দেশের কথা, এ দেশে কহিলে, লাগিবে মরমে ব্যথা”-চণ্ডীদাস । বাঙ্গলাদেশের সহিত পরিচয় যতই ঘনিষ্ঠ হইবে, ততই নিম্নশ্রেণীর প্রতি শ্রদ্ধা বেশী হইবে । আমরা বারংবার বলিয়াছি-ইহারা আমাদের জাতির নিজস্ব ভাব বজায় রাখিয়াছে। উৰ্দ্ধতন পৰ্য্যায়ে বিদেশীর প্রভাবের ঝড়,-পাণ্ডিত্যের দৰ্প, সংস্কারের याँ अक्लांद्र ठशकिfथड निभायी। বোঝা, এবং নানারূপ আবির্জন জুটিয়া সমস্ত প্রশ্ন জটিল ও দুরূহ করিয়া ফেলিয়াছে, কিন্তু নিমে শুমলশস্ত্যপূর্ণ-নিত্য সজীব তরুগুল্মময় সবুজ পল্পী-এখানেই বঙ্গলক্ষ্মী তাহার ধন-ভাণ্ডার রাখিয়াছেন। এখানেই বঙ্গের চারুশিল্প-অজান্তার শেষ চিহ্ন, এখানেই নিরক্ষর কবির অপুর্ব পল্পী-গীতি, রায়বেশে, বাউল ও বৈষ্ণব নৃত্য, এখানেই সহজিয়ার সুনিৰ্ম্মল অদ্বিতীয় প্রেমের আদর্শ-কিছুদিন পূর্বেও ছিল। পাশ্চাত্ত্য বন্যায় আজ সেই রত্নভাণ্ডার চলিয়া যাইবার পথে। যদি বাঙ্গলার পল্লী-গীতিকা, মনোহর সাই কীৰ্ত্তন, সহজিয়ার আদর্শ প্ৰেম, রায়বেশে নাচ, পল্লীর শিল্পকলা চলিয়া যায়, তবে বাঙ্গলার ভৌগোলিক তত্ত্ব জানিয়া আমরা কি করিব ? বাঙ্গলাদেশ তো তাহা হইলে লুপ্ত হইল! কতকগুলি গিল্টনী করা বিদেশী শিক্ষার ফলে এদেশের কি গৌরব থাকিবে ? যাহা বিদেশের নকল, তাহা তো নকল ছাড়া কিছুই নয়। জগতের শিক্ষা-দীক্ষায় বাঙ্গালীর যে সকল অসাধারণ দান ছিল—তাহা লুপ্ত হইলে বাল্যলাদেশকে অন্য যে নাম দাও, তাহাতে আপত্তি নাই, কিন্তু “বাঙ্গল-সোনার বাঙ্গলা” নাম দিয়া সেই পবিত্র নামের অবমাননা করিও না। বিদেশী শিক্ষা-সঞ্জাত উপেক্ষা ও ঘূণায় এই কিঞ্চিৎ অধিক অৰ্দ্ধশতাব্দীর মধ্যে বাঙ্গলার मठ ।