পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিক্ষা-দীক্ষার কথা SO 6 নাই। গণিতের যে সকল অতি সূক্ষ্ম বিষয়ের সুত্র আবিষ্কার করিয়া শুভঙ্কর সমস্ত কুট প্রশ্নের সহজ সমাধান করিয়াছেন, অন্যত্র তাহার দৃষ্টান্ত সুলভ নহে। লঙ সাহেব উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে লিখিয়াছিলেন, “১৪০ বৎসর যাবৎ শুভঙ্করের আর্য্যার আবৃত্তিতে অনুমান ৪০,০০০ বঙ্গবিদ্যালয় মুখরিত হইয়া আসিয়াছে। সুতরাং আমাদের ইংরেজী শিশু-বিদ্যালয়সমূহে যে ভাবের শিক্ষা পরবর্তী সময়ে প্রচলিত হইয়াছে তাহার পূৰ্ব্বগৌরর হিন্দুদেরই প্ৰাপ্য।” হিন্দুৱা মানসাঙ্ক বিদ্যায় ওস্তাদ ছিলেন। হিন্দুর এই সুচিরাবলম্বিত sig car mental arithmetic vett পাইয়া শিক্ষিতদের মধ্যে গৌরবান্বিত হইয়াছে। শুধু গণিতের নহে, জ্যোতির্বিদ্যার গুরুতর প্রশ্নগুলি ডাক ও খনার প্রসাদে বাঙ্গালী নিম্নশ্রেণীর লোকেরা এরূপ আশ্চৰ্য্যভাবে সমাধান করিতে পারিত, যাহা ভাবিলে বিস্মিত হইতে হয়। কোন দিন চন্দ্ৰগ্ৰহণ হইবে, তাহা অতি সহজে নিম্নশ্রেণীর লোক গণিয়া কহিতে পারে। “যে যে গৃহের যে রাশি, তার সপ্তমে থাকে। শশী, সেদিন যদি হয় পৌর্ণমাসী, অবশ্য রাহু গ্ৰাসে শশী । দুই তিন পাচ ছয় একাদশে দেখতে হয়।” সহজে প্রশ্নটার উত্তর হইয়া গেল। আর কোন দেশের ইতর জনসাধারণ এভাবে প্রশ্নটির সমাধান করিতে পারে তাহা আমি জানি না । আশ্চর্য্যের বিষয় যোগ ও তন্ত্র সাধারণ লোকের মধ্যে এরূপ বহুলপ্রচার লাভ করিয়াছিল যে, আমরা মনেই করিতে পারি না, অশিক্ষিত অথবা অৰ্দ্ধশিক্ষিত লোকেরা কিরূপে এই দুরূহ সাধনার পথে অগ্রসর হইতে সাহসী হইয়াছিল। সহজিয়াদের বিস্তৃত সাহিত্যের অনেকাংশ সন্ধ্যা-ভাষায় লিখিত, তাহ পূর্বেই লিখিয়াছি। এই সাহিত্যের পাঠক, শ্রোতা ও লেখকগণের অধিকাংশই মুৰ্থ পাড়া গেয়ে লোক-কিন্তু তাহদের সাহিত্যে যেরূপ ভাবে নিশ্বাসপ্ৰশ্বাস নিযান্ত্রিত করিয়া ষটপদ্মভেদের ও সহস্রাবের সূক্ষ্ম সুন্ম বিবরণ আছে, তাহ অতীব বিস্ময়কর। “গোরক্ষাবিজয়” নামক বাঙ্গলা পুস্তকখানি এতদিন অবজ্ঞাত হইয়া নিয়শ্রেণীর কুটিরে পড়িয়াছিল। ইহার লেখক নিম্নশ্রেণীর হিন্দু ও মুসলমান, এবং পাঠকও সেই শ্রেণীর। অথচ এই কাব্যের শেষাংশে গোবক্ষনাথ যে ৩১টি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিয়া গুরু মীননাথের মায়া-মোহ ভঙ্গ করিলেন, তাহ যোগপথের পন্থী-কৃতী সাধক ভিন্ন কেহই উত্তর দিতে পরিবেন না। আমরা সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নাহি ; তথাপি বিশ্ব-পণ্ডিতেরা যখন এম. এ. পরীক্ষার্থীদের পাঠ্যতালিকা হইতে গোরক্ষ-বিজয়ের সেই অংশ বাদ দিতে উদ্যত হইয়াছিলেন, আমি বলিয়া কহিয়া এ বৎসরের জন্য তাহার কতকাংশ রাখিয়া দিয়াছি। এই ৩১টি প্রশ্নের মধ্যে একটি “অজপা কাহাকে বলে, জপে কোন জন ?” এখন জানিতে পারিয়াছি, “অজপা” কথাটি তান্ত্রিক অনুষ্ঠান ও যোগের অতি প্ৰাথমিক কথা, তাহা পূর্বকালে এদেশের আপামর সাধারণ সকলেই বুঝিত। প্রশ্নগুলির আর দুইটি--প্ৰদীপ “নিৰ্বাণ হইলে জ্যোতিটা কোথায় যায়? এবং ধ্বনি ফুরাইয়া গেলে সুর কোথায় বিলীন হয়?” ইত্যাদি। এদেশে মহোৎসবে যেমন ছোট বড় সকলে নির্বিচারে একত্র বসিয়া যায়, জ্ঞানবিস্তারের পরিবেষণেও এদেশের লোকেরা অপর সকলকে বঞ্চিত করিয়া নিজেরা শুধু তাহা ভোগ করিতেন না। অন্ততঃ বৌদ্ধাধিকারের সময়ে এইরূপই নিয়ম ছিল। মাঝে কয়েক শতাব্দীর জন্য গোড়া ব্ৰাহ্মণগণ জানের দ্বার