পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VNO- বৃহৎ বঙ্গ তখন তাহার সূক্কণী ও লেলিহান জিহবা হয়ত জলাদ্ৰ হইয়াছিল । কিন্তু যখন বস্তাগুলি নামানো হইল, তখন তাহা চিরিয়া ফেলিয়া গুলি বাহির করিয়া দোলার সৈনিকগণ গুলি ছড়িতে আরম্ভ করিল-অকস্মাৎ মহিলা-বেশী শত শত যোদ্ধা ঘোমটা খুলিয়া শাণিত খড়গ লইয়া ব্যান্ত্রবৎ রোটাস দুর্গের প্রহরীদিগকে বধ করিতে লাগিল-তখন রোটাস-রাজ পলাইতে পথ পাইলেন না । বন্য ব্যাস্ত্ৰ শোরের সৈন্যগণের হস্তে ধানলুব্ধ রাজা নিহত হইলেন । রোটাস দুর্গের মত এরূপ অজেয় দুর্গ ভারতবর্ষে আর দ্বিতীয়টি ছিল না। একটি পাহাড়ের উচ্চ চুড়ায় এই দুর্গ নিৰ্ম্মিত, অতি বন্ধুব ও দুরারোহ দুই মাইল ব্যাপী এক সরু পথ বাহিয়া এই দুর্গের প্রথম তোরণে প্ৰবেশ করিতে হয়। তোরণ তিনটি- একটির বহু উৰ্দ্ধে আর একটি—এই ভাবে স্থিত। প্ৰত্যেকটি তোরণ অনেকগুলি কামান ও বড় বড় প্ৰস্তর খণ্ড কর্তৃক সুরক্ষিত। সর্বোদ্ধে দুর্গের চতুষ্কোণ সীমারেখা দশ মাইলের অধিক স্থান ব্যাপক-তন্মধ্যে নগর, গ্রাম ও শশুক্ষেত্ৰ আছে, কয়েক ফুট নিচেই সুনিৰ্ম্মল জলধারা। এক দিকে দুরারোহ উচ্চনীচ বন্ধুর একটা দুৰ্গম পাৰ্বত্য প্রদেশের উপান্তে শোণি নদী,-অপর দিকেও অপর একটি নদী-এই দুই নদী সুদীর্ঘ পথ অবতরণ করিয়া নিম্নের দিকে সুগভীর উপত্যক ভূমিতে মিলিত হইয়াছে। এই ভূমি এরূপ ঘন তরুসস্কুল অরণ্যপরিপূরিত যে উহাতে কোন ব্যক্তির প্রবেশ অসম্ভব হইতেও অসম্ভব । এই একান্ত নিরাপদ নিভৃত স্থানে স্বীয় পরিবার ও ধন্যরাশি সুরক্ষিত করিয়া শের সাহ কৰ্ম্মনাশা তীরে হুমায়ুনের সঙ্গে কোরান স্পর্শ করিয়া যে সন্ধি করিয়াছিলেন তাহা একটা খেলনার ন্যায় ভাঙ্গিয়া ফেলিয়া অতকিত ভাবে সম্রাটকে পরাজিত ও বিপৰ্য্যস্ত করিয়া ছিলেন, তাহা পূর্বেই লেখা হইয়াছে। সকল দিক্‌ হইতে দেখিলে শের সাহের তুল্য প্ৰতিভা-সম্পন্ন কৰ্ম্মবীর এবং যোদ্ধা ভারতবর্ষে তখনকার দিনে আর ছিল না। তাহার কথার কোন মূল্য ছিল না।--তাহার সন্ধি ভাবী কোন চক্রান্তের অভিসন্ধি ভিন্ন আর কিছু বলা যায় না। র্তাহার কোরান স্পর্শ কতক গুলি কাগজ ছোয়া অপেক্ষা গুরুতর কিছু ছিল না। তথাপি তিনি হুমায়ুনকে দিল্লী পৰ্যন্ত তাড়াইয়া লইয়া সমস্ত হিন্দুস্থান অধিকার করার পর যে ন্যায়পরতা, ক্ষমা, ও শাসন-দক্ষতা দেখাইয়া ছিলেন তাহ প্ৰকৃতই প্ৰশংসনীয় । শের সাহের ন্যায়পরতা ও বিবিধ গুণরাশি সাৰ্ব্বভৌম রাজপদ পাইবার পর হইতে আরব্ধ হইয়াছিল। দিল্লীর সিংহাসন লাভ করিয়া শের সাহ বাঙ্গলার মসনদে খিজির খাঁ নামক শাসন কর্তা নিযুক্ত করিলেন। এই ব্যক্তি ভূতপূৰ্ব্ব বঙ্গেশ্বর মহম্মদ সাহের কন্যাকে বিবাহ করিয়া খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করিতে লাগিলেন, তিনি খুব রাজকীয় ভাবে চলাফেরা করিতে লাগিলেন, এবং মহম্মদ সাহের আত্মীয় ও ওমরাহগণকে বশীভূত করিলেন । লোকে কাণাকণি করিতে লাগিল যে ইহার অভিসন্ধি ভাল নহে । শের সাহ অত্যন্ত সন্দিগ্ধ প্ৰকৃতি ছিলেন, তিনি সংবাদ পাইয়া ব্যাঙ্গলায় চলিয়া আসিলেন । সম্রাট হইবাব পূৰ্কেব ও পরে। খিজিব খাঁ ।