পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

IS e বৃহৎ বঙ্গ দাড়াইয়াছিল, তখন হয়ত এ প্ৰথা প্ৰচলিত ছিল না। এতগুলি রূপকথায় আমরা রমণী ও পুরুষের একত্র পড়াশোনার কথা পাইতেছি, যাহাতে মনে হয় ইহা দেশব্যাপী একটা প্ৰাচীন রীতির প্রতি অঙ্গুলিসঙ্কেত করিতেছে। কিন্তু পাঠশালায় একত্র না পড়িলেও স্ত্রীলোকের পড়াশুনা যে এ দেশে মুসলমানদের সময়েও প্রচলিত ছিল, তাহার অনেক প্ৰমাণ পাওয়া গিয়াছে । আমরা গাগী, মৈত্ৰেয়ী, খনা, অরুন্ধতী প্রভৃতি বিশ্ববিশ্রাতা ইতিহাস-পূর্ব যুগের পণ্ডিত্যাদিগকে লইয়া টানাটানি করিব না। কালিদাস। তঁহার স্ত্রী ভোজয়াজের কন্যার নিকট স্বীয় মুর্থতার জন্য বিড়ম্বিত হইয়াছিলেন, কিংবা বিদ্যার ন্যায় রাজকুমারীরা পণ করিয়া বসিতেন যে, যে তঁহাদিগকে বিচারে পরাস্ত করিতে পরিবে, তঁাহাকেই বিবাহ করিবেন-এই সকল গল্পকেও ইতিহাসের পৃষ্ঠায় স্থান দিব না। কিন্তু মধ্যযুগে আমরা চণ্ডীদাসের প্রণয়িনী রামী, শিখী মাইতীর ভগিনী মাধবী এবং চন্দ্রাবতী প্ৰভৃতি কবিদিগের লেখার সহিত পরিচিত হইয়াছি। চণ্ডীকাব্যে দেখা যাইতেছে যে বণিকের বধুরাও লিখিতে পড়িতে জানিতেন, পল্লীগীতিকায় জেলে কৈবৰ্ত্তের কন্যা মলুয়া ও খুলনা পত্ৰাদি লিখিতে পারিতেন—এরূপ উল্লিখিত আছে। ইহার সকলগুলিই গল্প কিনা, কিংবা ইহাদের কোন কোন কাহিনী সত্যমূলক, তাহা নির্ণয় করিবার অবসর আমাদের নাই। যাহারা শিল্পবিদ্যায়-সঙ্গীতে এবং অপরাপর কলাবিদ্যায় এতটা পারদর্শী ছিলেন, তাহারা যে লেখাপড়া জানিতেন না, এমন মনে হয় না । আমরা গত একশত-দেড়শত বৎসর পূর্বের অনেক শিক্ষিতা মহিলার কথা জানি-র্তাহাবা শুধু লেখাপড়া জানিতেন না—কিন্তু অসাধারণ পণ্ডিত বলিয়া খ্যাতি লাভ করিয়াছিলেন। ফরিদপুর যপসা গ্রামনিবাসী লাল রামগতি সেনের কন্যা বিদুষী আনন্দময়ী দেবীর নাম সুপরিচিত। ইনি পলাশী যুদ্ধের সময়ে জীবিত ছিলেন। ইনি অথৰ্ব্ববেদ হইতে যজ্ঞকুণ্ডের আকৃতি আঁকিয়া রাজা রাজবল্লভকে র্তাহার যজ্ঞের জন্য দিয়াছিলেন। বেদনির্দিষ্ট সেই যজ্ঞকুণ্ডের খসড়া পণ্ডিতমণ্ডলী কর্তৃক গৃহীত হইয়াছিল। তাহার খুল্লতাত জয়নারায়ণ সেন যে হরিলীলা” নামক কাব্য রচনা করেন, তাহাতে ইহার অনেক পদ আছে, তাহাতে সংস্কৃতে র্তাহার অসামান্য অধিকার প্রমাণ করে। ষোড়শ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি চন্দ্রাবতীর নাম এখন সুপরিচিত। ইনি সংস্কৃতে বুৎপন্না ছিলেন, এবং মলুয়া, কেনারাম প্রভৃতি অপূৰ্ব্ব গীতিকা রচনা করিয়াছিলেন এবং পিতার আদেশে রামায়ণের পন্যানুবাদও করিয়াছিলেন। পূর্ববঙ্গ-গীতিকার ১ম ও ৪র্থ খণ্ডে এই কবির সম্বন্ধে অনেক কথা লিখিত হইয়াছে এবং তঁহার রচিত কাব্যগুলিও সঙ্কলিত হইয়াছে। বঙ্গদেশের পল্লীসাহিত্য খুজিলে আমরা বহু রমণী-কবির রচনা পাইতে পারি। কিন্তু সংস্কৃতে অসাধারণ পাণ্ডিত্য ১০০ বৎসর পূর্বেও কোন কোন বঙ্গীয় মহিলার আয়ত্ত ছিল, তাহার পরিচয়ও কিছু কিছু পাওয়া যাইতেছে। শুধু চন্দ্রাবতী এবং আনন্দময়ী নহেন, বঙ্গদেশে অপেক্ষাকৃত আধুনিক কালেও এমন সকল পণ্ডিত রমণী ছিলেন, যাহারা বিদ্বৎসমাজে বিশিষ্ট স্থান পাইবার যোগ্য। ১৮৫১ খৃঃ অব্দের ১৯শে এপ্ৰিল তারিখের “সম্বাদ-ভাস্কর” নামক পত্রিকায় দ্রবময়ী দেবীর সবিস্তার উল্লেখ আছে। ইহার কাহিনী আমার ছাত্ৰ শ্ৰীযুক্ত যতীন্দ্ৰ চন্দ্রাবতী, আনন্দময়ী, দ্রবময়ী।