পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিক্ষা-দীক্ষার কথা dà যাইয়া তত্তৎস্থল পরিদর্শন করা দরকার-এই দেববিগ্রহের সহিত অনেক সময় প্রাচীন ইতিহাসের কথা জড়িত আছে। যাহারা বাঙ্গলার ইতিহাসের গবেষণা করেন, আমি তাহাদিগের দৃষ্টি এইদিকে আকর্ষণ করিতেছি। বাঙ্গলার চাষাদিগের শিক্ষা-দীক্ষা সম্বন্ধে অনেক কথা এই পুস্তকে লিপিবদ্ধ হইয়াছে। ইহাদের সম্বন্ধে আর একটি কথা বলা দরকার। ইহাদের একখানি নিজস্ব শাস্ত্ৰ আছে,- তাহা ইহাদের কাছে বেদের ন্যায় ; নিত্য-নৈমিত্তিক জীবনযাত্রা সম্বন্ধে এই শাস্ত্রের অনুশাসন তাহারা সর্ববিষয়ে মানিয়া চলে। এই শাস্ত্র তাহারা লিখিত আকারে শিখে না।-- ইহা তাহদের মুখে মুখে কত যুগ হইতে চলিয়া আসিয়াছে। ভাষা অবশ্যই রূপান্তরিত হইয়াছে এবং যুগে যুগে নূতন কথার সংযোজনা হইয়াছে-তথাপি ইহা খৃষ্টীয় অষ্টম ও নবম শতাব্দী হইতে চলিয়া আসিয়াছে বলিয়া মনে হয়। যখন বাঙ্গলার সমস্ত লোকই কৃষিকাৰ্য্য করিত ও বীজ বপন, বাণিজ্যের আরম্ভ অথবা শুভকাৰ্য্য অনুষ্ঠানের জন্য গ্ৰহ-উপগ্রহের মুখের দিকে চাহিয়া থাকিত-এই শাস্ত্র তখন হইতে বিরচিত হইতে আরম্ভ হইয়াছে। ইহা অনেক সময়েই একান্ত নিভুল এবং চাষীদের সূক্ষ্ম অন্তদৃষ্টি ও বাঙ্গলার ঋতুভেদে উৎপাদিকা শক্তির বৈষম্য এবং আবহাওয়া প্ৰভৃতির গভীর অভিজ্ঞতার পরিচায়ক । এই প্ৰবচনগুলি ডাক ও খনার বচন বলিয়া প্ৰসিদ্ধি লাভ করিয়াছে। বাঙ্গলার দুর্ভাগ্য যে বিলাত হইতে যে সকল বাঙ্গালী কৃষিতত্বের উপাধি লইয়া এদেশে আসেন, কিংবা র্যাহারা বোম্বাই সহরে যাইয়া কৃষিবিজ্ঞানে পারদর্শী হন—তঁাহারা এতদ্দেশের সম্পূর্ণ উপযোগী এবং বাঙ্গলার অবস্থার সহিত সম্যক পরিচিত “ডাক ও খনার” এই অভ্ৰান্ত শাস্ত্রকে নিতান্ত উপেক্ষা করেন। গণিতের পণ্ডিতেরা যেরূপ শুভঙ্করী। আৰ্য্যার কোন খবরই রাখেন না, কৃষিবিষয়ক বিজ্ঞানবিদ এদেশের পণ্ডিতেরাও তােক-খনার কোন তত্ত্বই অবগত নহেন। যাহা লইয়া উক্ত বিষয়গুলির হাতেখড়ি হওয়া উচিত, সেই উপকরণ অগ্ৰাহ করাতে এই পণ্ডিতগণের শিক্ষার ভিত্তি চিরকালই কঁচা থাকিয়া যায়। ডাক ও খনার সহস্ৰ সহস্ৰ প্ৰবচন এখনও পল্লীগ্রাম খুজিলে উদ্ধার করা যাইতে পারে। কয়েকটি প্রবচন নিয়ে উদ্ভূত করিতেছি । ( ১ ) চৈত্রে কুয়া ( -স্যা ) ভাদ্রে বান। নরের মুণ্ড গড়াগড়ি যান। (চৈত্রে কোয়াসা ও ভাদ্রে বান হইলে মড়ক লাগে । ) ( ২ ) পূর্ণ আষাঢ়ে। দখিনা বয়। সেই বছর বন্যা হয় । ( দখিনা = দক্ষিণা হাওয়া । ) (৩) পৌষে গরমি বৈশাখে জাড়া। প্ৰথম আষাঢ়ে ভরবে গাড়া । ( পৌষ মাসে যদি গরম হয় এবং বৈশাখ মাসেও যদি শীত থাকে, তবে সে বৎসর আষাঢ়ের প্রথম দিকেই ভয়ানক বর্ষ হইবে । ) ( ৪ ) কোদালে কুডুলে মেঘের গা। মধ্যে মধ্যে দিচ্ছে বা । বলগে চাষারে বাধতে আল। আজ না হয় জল হবে কাল । ( কোদাল ও কুড়ুল দিয়া কোপাইলে যেরূপ হয়, যখন মেঘগুলি সেইরূপ ছিন্ন হয় এবং তখন যদি মাঝে মাঝে হাওয়া দেয়, তবে বৃষ্টি আসন্ন বুঝিতে হইবে, সুতরাং তখনই চাষীদের বৃষ্টি ধরিবার জন্য ক্ষেতে আইল বাধিয়া রাখা উচিত। ) (৫ ) যদি বরে আগনে, রাজা নামেন মাগনে। যদি বরে পৌযে, কড়ি হয় তুষ্যে। যদি বরে মাঘের শেষ, ধন্য রাজার পুণ্য দেশ।