পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bb বৃহৎ বজা ইহার পূর্বেই একটি বচনে পাই সোম ও শুক্র বার বাদ দিয়া নূতন কাপড় পরিবে, রবিবারে ও মঙ্গলবারে খেউরি হইবে না, জলপথে বিদেশে যাইতে হইলে অনেক অশুভ দিন বর্জন করিতে হইবে । কতকগুলি নিষিদ্ধ দিনে রাজকালিয়ে কাপড় দিতে নাই ; কিন্তু এইবার শৃঙ্খলিত পুরুষ বন্ধন ছিন্ন করিয়া মুক্ত হইয়া বলিতেছেন-যখন রাজক আসিবে, তখনই কাপড় দিবে-তাহাতে দিন-ক্ষণ নাই। নাপিত পাইলেই খেউরি হইবে এবং লাফাইয়া সমুদ্র পার হাইও, তাহাতে দিন-ক্ষণ দেখিতে হইবে না। জলের মধ্যে গঙ্গাজল শ্রেষ্ঠ, এবং বলের মধ্যে বাহু বলই শ্রেষ্ঠ, গ্ৰহাদির বল কিছুই নহে। খনা বলিতেছেন। ওসকল শাস্ত্রের বচনে কেবল বুদ্ধি নাশ করে এবং উহারা নিরর্থ। আশ্চর্য্যের বিষয় অন্যান্য প্রাকৃতিক উপদ্রবের মত, ভূমিকম্প সম্বন্ধেও কতকগুলি পূর্ব লক্ষণ নির্দিষ্ট হইয়াছে, যথা-“ভন ভন ক’রে উড়ে মশা । এক চাপড়ে শতেক মরে সে দিন মেদিনী নড়ে ॥” ( মশার যদি এরূপ বাহুল্য হয় যে, এক চাপড়ে একশটি বিনষ্ট হয়-সেই দিন ভূমিকম্প হইবে, জানিবে।) এইভাবে বন্যা ও ঝড়ের সুচনা, দুভিক্ষ ও মহামারির সুচনা প্ৰভৃতি ব্যঞ্জক অনেক প্ৰবচন আছে। ধান, চাল হইতে সুরু করিয়া মাষ কলাই প্ৰভৃতি বিবিধ ডাল, কচু, পান, বেগুন, কলা, আম, কঁাটাল প্ৰভৃতি বিবিধ ফল উৎপাদন করিবার উপযোগ্য আবহাওয়া এবং শস্য ও ফলের ব্যাধি নষ্ট করিবার উপায়-বাঙ্গলার কৃষিতত্ত্বের সমস্ত কথাই অতি সংক্ষেপে খনা দিয়াছেন। ডাকের বচনেও এ সকল কথা আছে, কিন্তু তাহাতে নরনারীর চরিত্রের অন্তদৃষ্টি সম্বন্ধে প্ৰবচনই বেশী । মৎসঙ্কলিত বঙ্গসাহিত্য-পরিচয়ের প্রথম খণ্ডে উহা বিস্তারিতভাবে আলোচিত হইয়াছে। আমাদের দেশের নিয়শ্রেণীর লোকদিগের শিক্ষা-দীক্ষা সম্বন্ধে বিদেশী লোকেরা অনেকেই মতামত প্ৰকাশ করিয়াছেন । উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে ইংরেজদের মন আমাদের উপর অনেকটা সদায় ছিল ; তখন তঁহারা আমাদের দোষগুণ উভয়ই সরলভাবে ব্যক্ত করিতেন । কেরি, ওয়ার্ড ও মার্সম্যান এদেশের রীতিনীতি অনেক সময়ে অতিরিক্ত ভাবে নিন্দা করিয়াছেন।--তাহাদের খৃষ্টধৰ্ম্ম প্রচারের সুবিধার জন্য ! কিন্তু এদেশের ভাল দিকটাও তেঁাহারা দেখিয়াছিলেন ; তখনও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও কুটিরাষ্ট্রনীতি ইংরেজ কি দেশীয় সমাজে প্ৰবেশ করে নাই। মিস মেওর মত লোক তখন একটিও ছিল না, বরঞ্চ এদেশের উচ্ছসিত প্ৰশংসা করিতে কত এলফিনষ্টন, ফাগুসন, উইলসন, কোলব্রুক লেখনী ধারণ করিয়াছিলেন। এখনও মহামনা গ্ৰীয়ারসন জীবিত আছেন-তুলসীদাসের প্রতি শ্ৰদ্ধায় যাহার সমকক্ষ কেহ নাই। সংস্কৃত কলেজের ভূতপূর্ব অধ্যক্ষ কাউএল সাহেব মুকুন্দরাম কবিকঙ্কণের চণ্ডী গাড়িয়া বিমুগ্ধ। তিনি এই কবিকে কখনও চসার এবং কখনও ব্লেকের সঙ্গে তুলনা করিয়া উচ্চাসন দিয়াছেন এবং স্বয়ং চণ্ডীকাব্যের অনেকাংশ ইংরেজী পদ্যে অনুবাদ করিয়াছেন । হটন তাহার বাঙ্গলার অভিধানের (বাঙ্গলা হইতে ইংরেজী ; ইহা একখানি প্ৰসিদ্ধ গ্ৰন্থ) বিদেশীর অভিমত ।