পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8O বৃহৎ বঙ্গ ঢাকার রিপুকরেরা মসলিনের ছেড়া জায়গাগুলি এমন সুন্দরভাবে মেরামত করিতে পারে যে তাহাতে রিপুর চিহ্নমাত্র থাকে না । টেলর সাহেব "* লিখিয়াছেন ঢাকার রিপুকর্মীরা অহিফেন খাইয়া ৱিণু করিতে বলে, তাহাতে নাকি তাহদের কাজের নেশা বাড়িয়া যায় এবং রিপু, উৎকৃষ্ট হয় (Topography of Dacca, p. 76 ) সুতা কাটার দুই প্ৰধান যন্ত্র চরকা ও ডলনি কাঠি। খুব ভাল মসলিলেন সুত ডলন কাঠি দিয়া তৈরী করিতে হয়। দশইঞ্চি দৈর্ঘ্য একটি সুইচের নিম্নভাগে ক্ষুদ্র গোলাকৃতি মৃত্তিকা রাখিয়া দেওয়া হয়, উহাকে “ডলন কাঠি” বলে। টেকে চালাইবার সময় হাত ঘামে ভিজিলে খড়ির গুড়া দিয়া ঘাম শুকাইয়া লইতে হয়। ডলন কাঠির সাহায্যে দুই আঙ্গুলে টেকে ঘুরাইতে বেশ ভার বোধ হয়। কিন্তু এ সম্বন্ধে অধিক লেখা নিম্প্রয়োজন, যেহেতু সুতা ও কাপড়ের প্রস্তুত-প্ৰণালী স্বচক্ষে না দেখিলে ইহার একটা পরিষ্কার ধারণা করা অসম্ভব । ঢাকার মসলিন বহু প্ৰাচীন এবং ঐতিহাসিক যুগের প্রারম্ভেই ইহার খ্যাতি জগন্ময় প্রচারিত হইয়াছিল। সুদীর্ঘ যুগের পরেও জগতের ঈশ্বর সমকক্ষ দিল্লীর ঈশ্বরের উত্তরকালে এই কারবারটা বিশেষভাবে উৎসাহিত করিয়াছিলেন । দিল্লীশ্বরগণ ময়ুরসিংহাসনে বসিতেন, তাজমহলের সৃষ্টি করিতেন, মসলিন পরিতেন এবং যমুনার নীলসলিলে দেওয়ানী খাসের প্রতিবিম্ব দশন করিতেন ; এই যুগে ইহাদের কোনটির মতই কিছু হয় নাই। ঢাকার মসলিন সম্বন্ধে ১৮৬০ খৃঃ অব্দে রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র ‘শিল্পিক দর্শন’ নামক পুস্তকে যে প্ৰবন্ধটি প্ৰকাশিত করিয়াছিলেন, তাহার অনেকাংশ নিয়ে উদ্ধৃত হইল - “ঢাকাই বস্ত্ৰ সকলেরই প্রিয় ; অপিচ হিন্দুদিগের শিল্পকৰ্ম্মনৈপুণ্য বিষয়ে এই অনুপম বস্ত্ৰ এক মহাতী ধ্বজ। পৃথিবীর সর্বত্র সকল পারদশা তত্ত্ববায়েরা ইহার তুল্য বস্ত্ৰবয়নে বহুকালাবধি যত্নশীল আছে ; কিন্তু আম্মদেশীয় এই জয়পতাকার গৰ্ব্ব খর্ব করিতে অস্থাপি কেহই সক্ষম হয় নাই। ঢাকাই বস্ত্ৰ যৎপরোনাস্তি সামান্য যন্ত্ৰে প্ৰস্তুত হয়, কিন্তু এই সামাজ যন্ত্র ও তদ্ব্যবহারকর্তৃদের কি আশ্চৰ্য্য ক্ষমতা, যে বিলাতের অদ্বিতীয় শিল্পকুশল ব্যক্তিরা বহুমূল্য বাষ্পীয় যন্ত্রসহকারেও তাদৃশ সূক্ষ্মবন্ত্র প্রস্তুত করণে পরাস্ত হইয়াছে। দুই সহজ বৎসর পূর্বে এই অনুপম বস্ত্ৰ প্ৰাচীন রোম রাজ্যে প্ৰসিদ্ধ হইয়া হিন্দুদিগের শিল্প-সাফল্যের অনির্বচনীয় প্রমাণ স্বরূপ গণ্য ছিল ; এবং অধুনা ইংলণ্ডদেশের তত্ত্ববায়দিগের তিরস্কার স্বরূপ জনসমাজে বিখ্যাত আছে। জনৈক যুরোপীয় শিল্পকার ইহার প্রশংসায় কহিয়াছিলেন যে “বোধহয় ইহা বিদ্যাধরী ও অপরােরা বপন করিয়াছে ; এতাদৃশ সুন্নবস্ত্ৰ মনুম্ভের স্থূল হতে সম্ভাবে না ।” ফলতঃ এই প্ৰশংসা অপ্ৰযোজ্য নহে ! “ঢাকা প্রদেশের সর্বত্র এই উত্তম বস্ত্ৰ প্ৰস্তুত হয় ; পর্যন্ত পশ্চাৎ লিখিত নগন্ন সকল ইহার প্রধান বাণিজ্য স্থল ; অন্যথা : ঢাকা, সুবর্ণগ্ৰাম, ডুমর, তিতাবাদী, অঙ্গলবাড়ী ও ৰজেৎপুর । এই সকল নগরী মধ্যে ঢাকা সৰ্ব্বেতোতাৰে সুপ্ৰসিদ্ধ। এভন্নগরীয় বািণজ্যিৰ্থ চরকা ও ডালন কাঠি ।