পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিক্ষা-দীক্ষার কথা S6S ইংরেজের দ্বারা লিখিত বলিয়াই মনে হওয়া স্বাভাবিক ছিল।” জন ষ্টুয়ার্ট মিলের ভারতবর্ষের ইতিহাসের সুখ্যাতি করিয়া বেন্থাম রাজাকে লিখিয়াছিলেন,-“মিলের ইংরেজী লেখাটা বদি আপনার মত সুন্দর ও নিখুত হইত, তবে আর কিছু বলিবার থাকিত না ।” বিলাতের তৎকালের প্রসিদ্ধ কবি ক্যাম্বেল রামমোহনকে বিশেষ ভক্তি করিতেন। তিনি যতদিন ইংলণ্ড ছিলেন, ততদিন সেই দেশের আভিজাত্য এবং বিদ্যাদপিত ইংরেজ সমাজ তঁহাকে গুরুর ন্যায় সম্মান করিয়া আতিথ্য দেখাইতে ব্যস্ত হইয়াছিল । তিনি ইংলেণ্ডেশ্বরের সভায় এবং ফরাসী রাজ লুই ফিলিপের প্রাসাদে সৰ্বোচ্চ সন্মান পাইয়াছিলেন । এই বাঙ্গলার এক নগন্য প্রদেশ রঙ্গপুর-তথাকার কালেক্টরের সেরেস্তাদার, যিনি তৎকালের বিধি অনুসারে কেরানিগিরি হইতে উচ্চতর কোন পদের দাবী করিতে পারিতেন না, তিনি এত বড় হইয়াছিলেন যে সমস্ত সভ্য জগৎ সসন্ত্রমে তাহার নিকট মাথা নোয়াইয়াছিল। এতদেশীয় পণ্ডিতগণ মুকুটহীন রাজশ্ৰীর” প্ৰভাবে চিরকাল সমস্ত জগতের উপর রাজত্ব করিয়া আসিয়াছেন। কুটিরবাসী এক নগন্য পল্লীর পণ্ডিতকে দেখিয়া পণ্ডিতশিরোমণি কেরি প্রভৃতি পাশ্চাত্ত্য প্রথিতযশা ব্যক্তি তাঁহাদের বেতনভূক সেই দরিদ্র ব্যক্তিকে তৎকালীন জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ পণ্ডিতগণের একজন বলিয়া সংবদ্ধিত করিয়াছিলেন । বাঙ্গালী পণ্ডিতের মস্তিষ্কের অপূর্ব সৃষ্টি-নব্যান্যায়ের কূটতর্কের মধ্যে এখনও যুরোপীয় পণ্ডিতগণ মাথা প্ৰবেশ করাইতে পারিতেছেন না। হে ভারতবাসী । চারিদিকে বিপদজাল ঘিরিয়া ধরিয়াছে, উদ্ধে মহামেঘের উদামলীলা । এই দুৰ্য্যোগের গভীর নিশার গাঢ় অন্ধকারে পথ দেখা যাইতেছে না ; কিন্তু যুগে যুগে নব নব প্ৰতিভার স্ফুরণে, নানক, কবির, তুকারাম, চৈতন্য, রামকৃষ্ণ, রামমোহন, গান্ধী, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্ৰ প্ৰভৃতি বিশ্ববিশ্রুত পুরুষবরদিগের অভু্যদয়ে কি মনে হয় না যে, এই তপস্যার ক্ষেত্রে- এই যজ্ঞস্থলে এখনও হোমাগ্নি জলিতেছে, এখনও আহিতাগ্নিকের চির জ্যোতিষ্মান বহ্নিদীপ্তি হেথায় নির্বাপিত হয় নাই ? এই যুগের মুক্তিমন্ত্র শিখাইবার যোগ্য কোন পুরোহিত আসিবেন, কি আসিয়াছেন ; তাহার শ্ৰীমুখোচ্চারিত বাণীর প্ৰত্যাশায় সমস্ত দেশ স্তম্ভিত ভাবে প্ৰতীক্ষা করিতেছে। এই শিক্ষাপ্রসঙ্গ শেষ করিবার পূর্বে ১৮০০ খৃষ্টাব্দে কলিকাতায় স্থাপিত ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের সম্বন্ধে আমরা কয়েকটি কথা বলিব । ভারতবর্ষের প্রাদেশিক ভাষাশিক্ষার উপর এই বিদ্যালয় জোর দিয়াছিল, বস্তুতঃ ইহা খুবই স্বাভাবিক ছিল। এ কথাটা ভাবিতে পারা যায় না যে, যাহারা কোটী কোটী লোকের ভাগ্যনিয়ন্ত শাসনকৰ্ত্তা, তাহারা সেই দেশের ভাষা না জানিয়া কৰ্ম্মক্ষেত্রে কাজ কি করিয়া সুসম্পন্ন করিতে পারেন । এই প্ৰাদেশিক ভাষা অগ্ৰাহ করাতে শিক্ষাশালাগুলিতে নানারূপ বিভ্ৰাট উপস্থিত হইয়াছে। এদেশের লোকেরা মৌলিক চিন্তাশীলতার প্রতিষ্ঠা একরূপ হারাইতে বসিয়াছে। গণিত পড়িবে গণিতের ভাষা ইংরেজী ; ইতিহাস, বিজ্ঞান, দর্শন, উদ্ভিদবিদ্যা, ছায়, ভিষকৃশাস্ত্ৰ প্ৰভৃতি সমস্তই ইংরেজীতে শিখিতে হয়। ফলে প্ৰত্যেক বিষয় শিখিতে সময়ের অৰ্দ্ধেকটা যায়। তৎসম্বন্ধীয় ভাষাটা দখল করিতে । এমন কি