পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নাসিরুদ্দিন ও পরবর্তী পাঠান-রাজগণ V8\S0 কিন্তু মুসলমান ঐতিহাসিকদের বর্ণিত বিবরণের সহিত রাজসাহীতে প্ৰচলিত কিংবদন্তীর কোন কোন বিষয়ে অনৈক্য দৃষ্ট হয়। এই অনৈক্য রাজাদের নাম সম্বন্ধে হওয়া স্বাভাবিক,- ইতিহাস সম্বন্ধে অজ্ঞতা-নিবন্ধন জনসাধারণ এক রাজার কথা মাঝে মাঝে অন্য এক রাজার ঘাড়ে চাপাইয়া দিয়া থাকে। শ্ৰীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু এবং দুর্গাচরণ সাপ্ল্যাল উভয়েই কালসম্বন্ধীয় সমস্যার সমাধান করিতে না পারিয়া দুইজন কালাপাহাড় পরিকল্পনা করিয়াছেন। আমার মনে হয়। উক্ত দুই গ্ৰন্থকারই এসম্বন্ধে ভ্ৰম করিয়াছেন । কালাপাহাড় বাঙ্গলায় একজন মাত্র ছিলেন, তিনি দ্বিতীয় রূপ ধারণ করিয়া অবতীর্ণ হন নাই। সোলেমান খাঁ ও দাউদ খাঁর রাজত্বকালেই কালাপাহাড়ের সমস্ত সামরিক অভিযান হইয়াছিল। সোলেমান খার রাজত্বকালে ( ১৫৬৪-১৫৭২ খৃঃ) কালাপাহাড় উড়িষ্যার রাজা মুকুন্দ দেব ও তঁহার বিদ্রোহী সামন্তরাজ রঘুভঞ্জ ছোট রায় উভয়কেই পরাস্ত করিয়া নিহত করেন। মনোমোহন চক্ৰবৰ্ত্তী লিখিয়াছেন ঐ ঘটনা ১৫৬৮ খৃঃ হইয়াছিল (রাখালদাসবাবুর বাঙ্গালার ইতিহাস ২য় ভাগ-১৩২৪ বাং ৩৬৭ পৃঃ) । তখন সোলেমান কররানী বঙ্গের বাদসহ। ১৫৬৮ খৃঃ অব্দে কালাপাহাড় কোচবেহার-রাজভ্ৰাতা সুপ্ৰসিদ্ধ চিলারায় (শুক্লধ্বজকেও) পরাস্ত করেন। ১৫৭৫ খৃষ্টাব্দে তিনি কাকশালদিগকে পরাজিত করিয়াছিলেন ; তখন দাউদ খা বঙ্গেশ্বর। সুতরাং আমরা কালাপাহাড়েব প্ৰায় সমস্ত সামরিক বিজয় এই দুই নৃপতির রাজত্ব কালে সংঘটিত হইয়াছিল, এরূপ দেখিতে পাইতেছি। কিন্তু যদি বরাবক খাঁর কন্যাকে কালাপাহাড় বিবাহ করিয়া থাকেন এবং বেলোল লোদির পক্ষ হইয়া জোয়ানপুরের নবাবের বিরুদ্ধে অস্ত্ৰধারণ করিয়া থাকেন, তবে পূর্বোক্ত ঘটনাগুলির সঙ্গে তাহার কালের একটা সামঞ্জস্য করা কঠিন হয়। ঐ ঘটনাগুলি সমস্তই ১৫৬৮ হইতে ১৫৭৫-এই সাত বৎসর কাল ব্যাপক , এদিকে বেলোল লোদি দিল্লীর সিংহাসনে ১৪৫১ খৃঃ হইতে ১৪৮৮ খৃষ্টাব্দ পৰ্য্যন্ত অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং বরাবক সাহার বঙ্গের রাজত্ব কাল ১৪৫৯-৭৪ খৃঃ পৰ্যন্ত। উড়িষ্যা ও কোচবেহার রাজ-ঘটিত ব্যাপার এই দুই বাদসাহের রাজত্বের এক শতাধিক কাল পরে সংঘটিত হইয়াছিল । এদিকে আবার সান্ন্যাল মহাশয় লিখিয়াছেন যে কালাপাহাড় ৩৪ বৎসর বয়সে নিরুদ্দেশ্য হন, তখন দুলারী বিবির গর্ভে র্তাহার একটি মাত্ৰ কন্যা সন্তান জন্মিযাছিল। এই প্রশ্নের উত্তর দুরূহ দেখিয়া লেখকগণ দুইজন কালাপাহাড়েব প্রবাদের পরিকল্পনা করিয়াছেন । সান্ন্যাল মহাশয় দ্বিতীয় কালাপাহাড়ের সম্বন্ধে বিশেষ কোন সংবাদ খুজিয়া পান নাই। যাহা কিছু লিখিয়াছেন তাহা একই কথায় পুনরুক্তির মত শোনায়। দুই ভিন্ন স্থানে একই প্ৰবাদ প্রচলিত থাকিলে যেটুক প্রভেদ থাকিতে পারে এই পার্থক্য প্ৰায় সেইরূপ । তিনি লিখিয়াছেন “দ্বিতীয় কালাপাহাড়ের বৃত্তান্ত সম্পূর্ণ বলিবার উপায় নাই। তাহার পূর্ব নাম কি ছিল এবং শিক্ষা কতদূর হইয়াছিল এবং তাহার পিতার নাম কি ছিল কিছুই জানা যায নাই” ( সামাজিক ইতিহাস ১১৩ পৃ: ) । “দ্বিতীয় কালাপাহাড়ও প্রথম কালাপাহাড়ের ন্যায় সুন্দরাকৃতি ও বলবান পুরুষ ছিলেন। উভয়েই ব্ৰাহ্মণ-সন্তান এবং মুসলমান হইয়া মুসলমানী বিবাহ করিয়াছিলেন। উভয়েই