পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৃহৎ বঙ্গ مطياSNج ইহাদের যেমনই উচ্চশিক্ষা, তেমনই করুণরস; পাঠক কখনও হাসিবেন এবং কখনও কঁদিবেন। এবং এক সঙ্গে রৌদ্র-বৃষ্টির খেলা-আলো ও ছায়া-ৰ্তাহার মুখে চোখে দেখা যাইবে । মাঝে মাঝে অলৌকিক ঘটনা থাকাতে বালকদের কল্পনা-শক্তি উদ্বোধিত হইবে। গীতিকথাগুলির মধ্যে মালঞ্চমালা, কাঞ্চনমালা, আন্ধা বন্ধু শুষ্ঠােমরায়, নছর মালুম, শঙ্খমালা, কাজলরেখা, ধোপার পাট প্রভৃতি কয়েকটি প্রথম শ্রেণীর। ইহাদের মত গল্প অন্য কোন ভাষায় আছে কিনা জানিনা। কারণ যে জাতির মসলিন সুন্ম শিল্পের অপ্ৰতিদ্বন্দী সামগ্ৰী, যাহাঁদের নব্যান্যায় সুন্ম বুদ্ধিবৃত্তির অতুলনীয় নিদর্শন, সেই জাতি ভিন্ন সূক্ষ্ম সৌন্দর্ঘ্যের জাল বুনিয়া আর কে এরূপ গল্প রচনা করিবে ? মনে হয়, উপনিষৎ, বৌদ্ধ জাতক, হিন্দু পুরাণ, রামায়ণাদি কাব্য প্রভৃতি সকলের রস নিংড়াইয়া এই গীতিকথা-গুলি প্ৰস্তুত করা হইয়াছে। ইহা বাঙ্গলার গাৰ্হস্থ্য জীবনের মৰ্ম্মকথা যেরূপভাবে প্ৰকাশ করিয়া দেখাইয়াছে তাহার তুলনা নাই। রূপকথা শুধুই ছেলেদেব আমোদ-প্ৰমোদের জন্য রচিত। ২২ জোয়ান ও ২৩ জোয়ানের কথা প্রভৃতি এই শ্রেণীর। ইহা সমস্তই গদ্যে রচিত। গীতি-কথার শ্রেষ্ঠত্ব ইহাদের নাই। সম্ভবতঃ বঙ্গীয় রূপকথাই সমুদ্র লঙ্ঘন করিয়া পাশ্চাত্ত্যদেশ বিজয় করিয়াছে। এসম্বন্ধে আমরা Folk Literature নামক পুস্তকে বিস্তারিত আলোচনা করিয়াছি । পল্লীগীতিক-ইহাদের খুব প্ৰাচীন নিদর্শন পাওয়া যায় নাই। যেগুলি পাওয়া গিয়াছে, তাহাদের কোনটিই মুসলমান-রাজত্বের পূর্বের নহে। সম্ভবতঃ পাল-রাজাদের প্রশংসা-সুচক যে সকল গাথা প্ৰচলিত ছিল— পল্লীগীতিকাগুলি সেই ধারাটি রক্ষা করিয়াছে। গঙ্গার আদি খুজিতে যেৰূপ হরিদ্ধারে যাইতে হয়, এই পল্লীগাথাগুলির উৎপত্তি নির্দেশ করিতে হইলেও আমাদিগকে সেইরূপ সুপ্রাচীন হিন্দুরাজত্বে যাইতে হইবে। ইহাদের ভাব ও চরিত্রাঙ্কন সমস্তই নবব্রাহ্মণ্যের বিরোধী। ইহাদের অনেকগুলিতে মেয়েরা যৌবনে উপস্থিত হইয়া নিজেরা বর নিৰ্ব্বাচন করিয়া বিবাহ করিতেছেন। নিজের মতের সঙ্গে অভিভাবকের নির্বাচনের গরমিল হইলে তঁাহারা মনেও দ্বিচারিণী হইতে স্বীকৃত হন নাই, স্বীয় প্রণয়ীর গলেই বরমাল্য দিয়াছেন। ইহাদের কোন কোনটির মধ্যে সমুদ্ৰ-যাত্রার বর্ণনা অতি চমৎকার। ব্ৰাহ্মণদিগকে এই সকল পল্লীগাথায় কোন স্থান দেওয়া হয় নাই এবং সংস্কৃত অলঙ্কার-শাস্ত্রের নববিধানগুলি ইহারা অগ্ৰাহ্য করিয়াছে। সমস্ত পল্লীগাথা-সাহিত্যে একটা আশ্চৰ্য্য কূৰ্ত্তি ও স্বাধীনতার হাওয়া বহিয়া যাইতেছে। এই স্মৃৰ্ত্তি ও স্বাধীনতা একদল গোড়া ব্ৰাহ্মণের চক্ষুশূল হইয়া উঠিয়াছে। তঁহারা গাথাগুলি হিন্দুবাড়ীতে এখন আর গাহিতে দিতেছেন না, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুসলমান গায়কগণ ইহাদিগকে রক্ষা করিয়া আসিয়াছে। ভূতপূর্ব ডিরেক্টার ওটেন সাহেব বলিয়াছিলেন যে, ধূমাচ্ছন্ন, বালুময় সহরের ধূসর আকাশ ছাড়িয়া হঠাৎ পদ্মার অবাধ হাওয়া ও আলোর মধ্যে আসিলে মন যেরূপ প্ৰফুল্প হইয়া উঠে, কৃত্রিম সাহিত্যের গওঁী ছাড়িয়া এই পত্নীসাহিত্যের সুখদ রাজ্যে আসিলে তেমনই আনন্দ হুয়,