পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sbro বৃহৎ বঙ্গ বংশীদাসের কন্যা চন্দ্রাবতী পিতার আদেশে পল্লীগাথার আকারে যে সংক্ষিপ্ত রামায়ণখানি রচনা করেন, তাহা এখনও পূর্ববঙ্গের কোন কোন স্থানে পলীবাসিনীগণ বিবাহ-বাসরে গ থাকেন। মাইকেল মধুসুদন সীতা-সরমার কথোপকথনের অংশটি চন্দ্রাবতীর রামায়ণের একটি স্থল হইতে গ্ৰহণ করিয়াছেন বলিয়া মনে হয় । সহজ সরল কবিত্বপূর্ণ ভাষায় মনের কথা করুণ ও মৰ্ম্মস্পর্শী ভাষায় লিখিতে চন্দ্রাবতী সিদ্ধহস্তা। র্তাহার অসম্পূর্ণ রামায়ণ সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্ৰকাশ করিয়াছেন। ( পুৰ্ব্ববঙ্গ-গীতিকা, চতুর্থ খণ্ড, ২য ভাগ ) { কিন্তু এই রামায়ণগুলির মধ্যে সৰ্ব্বাপেক্ষা বেশী মৌলিকত্বের দাবী কবিচন্দ্রের। ইহার নাম শঙ্কর, উপাধি ‘কবিচন্দ্ৰ” । বাঙ্গলার রামায়ণে ‘অঙ্গদের রায়বার’ ‘তরণী সেন ও বীরবাহুর যুদ্ধের পালা’ প্ৰভৃতি অংশ কবিচন্দ্রের লেখা। কবির সম্মুখে চৈতন্য ও নিত্যানন্দ ভগবানের অবতার হইয়া লীলা করিয়া গিয়াছিলেন । জগাই, মাধ্যাই, নরোজী, ভীলপন্থ প্রভৃতি দানব-প্রকৃতি লোকেরা ইহাদের কৃপা-স্পর্শে উদ্ধার পাইয়া গেল। এই সকল জীবন্ত ঐতিহাসিক ঘটনা কবির হৃদয়পটে গাঢ় বর্ণে অঙ্কিত হইয়াছিল। তৎকৃত রামায়ণে সেই সকল চিত্র প্রতিফলিত হইয়াছে। বাল্মীকির যুদ্ধ-কাণ্ডটাকে তিনি ভক্তির কুঞ্জ বা সংকীৰ্ত্তনভূমিতে পরিণত করিলেন। রাক্ষসগণ জগাই-মধাইএর ন্যায় রাম-লক্ষ্মণের প্রতি অন্ত্র ছুড়িয়া শেষে অনুতাপের উচ্ছাসে স্তোত্র আবৃত্তি করিতে বসিল, কেহ কেহ বা রামনামের ছাপ স্বীয় অঙ্গ ও রথের চতুঃপার্শ্বে অঙ্কিত করিয়া রণভূমিতে কীৰ্ত্তনভূমির অভিনয় করিতে লাগিল। একটা জীবন্ত ঐতিহাসিক ঘটনার ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়াতে এই সকল বিষয়ের বিসদৃশতা আমাদের চোখে ঠেকে না । যিনি যুদ্ধ করিবেন, তাহার বৈষ্ণবোচিত অশ্রবিসৰ্জন এবং যিনি শত্ৰু তিনি তঁহাকে ক্ৰোড়ে ধারণ করিয়া ভক্তি ও ক্ষমার লীলাপ্রদর্শনের মধ্যে যে অসামঞ্জস্য ও বিদ্রোপের উপযোগী উপাদান আছে-তােহা আমাদিগের এই সকল কাহিনীর যথার্থ রস উপভোগ করিতে বাধা জন্মায় না। মানুষতো চিরদিনই স্রষ্টার সহিত যুদ্ধ করিতেছে—তাহার বিধি নিতা লঙ্ঘন কবিতেছে অথচ অনুতপ্ত হইয়া তাহারই পদে আত্মসমর্পণ করিতেছে। কবিচন্দ্রের বর্ণিত কাহিনীর মধ্যে শুধু বৈষ্ণব ইতিহাসের অংশ নহে, পূর্বোক্ত সনাতন ধৰ্ম্মের উপাদান থাকাতে উহা চিরকাল হৃদয়স্পৰ্শী ও সুখপাঠ্য হইয়া থাকিবে । ‘অঙ্গদের রায়বারের” মধ্যে যে পরিহাস-রসিকতা আছে, তাহা বিশেষ মার্জিত রুচির পয়িচায়ক না হইলেও উহ। তৎকালোপযোগী হইয়াছিল। এই মৌলিকত্বই কবিচন্দ্রের বাহাদুরী। দুঃখের বিষয়, তথাকথিত ‘কৃত্তিবাসী” রামায়ণ কবিচাঙ্গের সমস্ত রচনাগুলি বেমালুম আত্মসাৎ করিয়া এবং নিজ দেহে কৃত্তিবাসের নামের শিলমোহর লাগাইয়া তাহারই স্বত্ব সাব্যস্তপূর্বক আজ পৰ্য্যন্ত সমানে বাজারে চলিতেছে। রামানন্দ ঘোষ নামক একব্যক্তি বৰ্দ্ধমান হইতে ‘রামলীলা” নামক একখানি রামায়ণ প্ৰণয়ন কবেন। উহা ১৬৯৪ খৃঃ অব্দে বা তৎসন্নিহিত কালে বিরচিত হয়। এই পুস্তকখানির মধ্যে বিশেষ পাণ্ডিত্য ও স্থানে স্থানে কবিত্ব আছে-কালিদাসের রঘুবংশ হইতে ইনি কোন কোন অংশ গ্ৰহণ করিয়াছেন । ইহার সম্বন্ধে প্ৰধান কথা এই ষে ইনি বৌদ্ধ ছিলেন, এবং