পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sobr8 বৃহৎ বঙ্গ কাব্যখানিতে এত করুণ রস ঢালিয়া দিয়াছেন, যাহাতে বেহুলার দীর্ঘ দুঃখকাহিনীতে যেরূপ পাঠকের দুঃখাশ্রঞ্চ পড়িয়া থাকে, তেমনি তাহার মাতার সঙ্গে মিলন এবং শ্বশুরালয়ে প্ৰত্যাবর্তনের প্রসঙ্গে চক্ষে আবিরল পুলকাশ্রি পতিত হয়। চণ্ডীমঙ্গল-এই শ্রেণীর কাব্যও দ্বাদশ-ত্ৰয়োদশ শতাব্দীর রচিত কতক কতক পাওয়া গিয়াছে।। চৈতন্য-ভাগবতকার লিখিয়াছেন পঞ্চদশ শতাব্দীর পূর্বভাগে-চৈতন্যের আবির্ভাবের পূৰ্ব্বে, বহু ভক্ত চণ্ডীমঙ্গলের পালা গাহিয়া রাত্রিজাগরণ করিতেন । রাজা লক্ষ্মণসেনের সমকালবৰ্ত্তী বা অব্যবহিত পূর্বে বিক্রমশীল নামক এক রাজা মঙ্গলকোটে রাজত্ব করিতেন, ইহার কাহিনী কোন কোন ফাবাসী পুস্তকে পাওয়া যায় এবং “সেক শুভোদয়” নামক পুস্তকেও ইহার উল্লেখ দৃষ্ট হয়। ধনপতি সদাগর এই রাজার আশ্রিত ছিলেন। বহু চেষ্টার পর মুসলমানগণ এই রাজ্য ধ্বংস করেন । সুতরাং সম্ভবতঃ দ্বাদশ শতাব্দী হইতেই এই কাহিনীর উদ্ভব হইয়াছে। বলবাম, কবিকঙ্কণ, মাধবাচাৰ্য্য প্রভৃতি কবিবা মুকুন্দরামের পুর্বে চণ্ডীমঙ্গল রচনা করিয়াছিলেন । কিন্তু মুকুন্দরামের কাব্যই এইক্ষেত্রে সর্বশ্রেষ্ঠ । মুকুন্দরাম সন্ধিযুগের কবি, তাহার ভাষা ও ভাব। —উভয়েই প্ৰাক-সংস্কৃত যুগ ও সংস্কৃত-যুগের নিদর্শন আছে। এই আখ্যানেব সমস্ত উপাদানই মুকুন্দবাম পূৰ্ববৰ্ত্তী কবিগণের নিকট পাইযাছিলেন। কিন্তু তাহার সূক্ষ্ম কবিদ্যুষ্টিতে খুটিনাটি বিষয়গুলির নানারূপ সৌন্দৰ্য্য ধরা পড়িয়াছে। চরিত্রাঙ্কনে এবং সামাজিক কি গাৰ্হস্থ্য জীবনের কাহিনীবৰ্ণনায় তাহার অসামান্য শক্তি ছিল । তিনি ব্যাধি-নায়ককে পরিবর্তন করিতে সাহসী হন নাই, যেহেতু সুচিরাগত গল্প পূজা-মণ্ডপে যথাযথ ভাবে বর্ণনা করিতে হইবে-মূলগল্পের পরিবর্তন শ্রোতারা সহ্য করিবেন না ; কিন্তু মুকুন্দরাম তাহার চরিত্রগুলিকে জীবন্ত মানুষ করিয়াছেন- এইখানে তঁাহার বাহাদুরী। বাধা-নাযিকের দুই বাহু “লোহার সাবল”, তাহার বক্ষে বাস্ত্ৰনখের পদক, সে শৈশব হইতে মল্ল-বিদ্যায় পটু, “অঙ্গে রাঙ্গা ধুলি মাখে৷ ” সে যখন খাইতে বসে-তখন হাড়িতে হাড়িতে ক্ষুদ, পুইশাক, হরিণের পায়েব গোড়ালীর মাংস প্রভৃতি খাইয়া নিজের সাধবী ও অনুরাগিণী স্ত্রীর জন্য কিছু রহিল। বা না রহিল-সে চিন্তা না করিয়াই বলিয়া উঠে,-“রন্ধন করেছ ভাল আর কিছু আছে ?”- তাহার গ্রাসগুলি “তে আঁটিয়া তালের মত” এবং ভোজনটি অতীব কুৎসিত। সে এত বড় মুর্থ যে যখন পাৰ্ব্বতী তাহাকে সাতঘড়িা ধন দিয়া তাহারই অনুরোধে একঘাড়া নিজে কাখে করিয়া লইয়া চলিলেন, তখন “মনে মনে মহাবীর করেন যুকতি । ধনঘড়া লয়ে পাছে পালায় পাৰ্ব্বতী”, সে যখন কথা কহে তখন স্ত্রীকে প্ৰতি কথায় বৰ্ব্বরের মত ধমক দেয়“মন্তব্যক্ত করিয়া রামা কহ সত্য-ভাষা। মিথ্যা হলে চোয়ারে কাটিব তোর নাসা”- সুতরাং সে যে মুর্থ ব্যাধ, তাহা বুঝিতে তিলাৰ্দ্ধও বিলম্ব হয় না ; অথচ নৈতিক জগতে সে স্লাজচক্ৰবৰ্ত্তী, তাহার বাহ-বর্বরতার মধ্যে তরুণ-সুৰ্য্যের ন্যায় চরিত্রের জ্যোতি ফুটিয়া উঠিয়াছে। ধূৰ্ত্ত মুরারি শীলের সঙ্গে কথাবার্তায় তাহার শিশুর ন্যায় সরলতা দৃষ্ট হয়। চণ্ডীর সঙ্গে ব্যবহারে তাহার চণ্ডীমঙ্গলের কবিগণ ।