পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ଈକr বৃহৎ বঙ্গ লেখা বলিয়া মনে হয় । এই কাব্যের শেষের দিকে চণ্ডীদাসের পরিচিত অধ্যাত্ম-সঙ্গীতের সুরটি আছে। অধুনা কয়েকজন পণ্ডিত রামীর সঙ্গে চণ্ডীদাসের প্রেমসম্বন্ধীয় সংস্রব অস্বীকার করিয়াছেন। ব্ৰাহ্মণের সঙ্গে ধোবানীর প্ৰেম, এযে অসম্ভব ! এইসকল ছোয়াচে রোগাক্রান্ত পণ্ডিতকে চণ্ডীদাসের কথায় উত্তর দেওয়া যাইতে পারে “কানুর পিরীতি জাতিকুলশীল ছাড়া।” পঞ্চপুষ্প নামক মাসিক পত্রিকায় এ সম্বন্ধে আমি আমার বক্তব্য সবিস্তারে লিখিয়াছি। বস্তুতঃ চণ্ডীদাসের সুরটি না চিনিয়া র্যাহাবা বৃথা প্ৰজ্ঞাভিমানী হইতে চাহেন, তাহাদিগকে আমরা চণ্ডীদাসের কথাতেই বলিব “কাজ নাহি সখি, তাদের কথায়, বাহিরে রাহুন র্তারা ।” কেহ কেহ চণ্ডীদাসের গান যে মহা প্ৰভু আবৃত্তি করিতেন, তাহাও অস্বীকার করেন। মৈথিল কবি বিদ্যাপতিব জন্মস্থান মিথিলাব বিসফি গ্রামে। ইনি রাজা শিবসিংহ ও র্তাহাব পরবত্তী অনেক রাজার অনুগ্রহ পাইযা কাব্য লিখিয়াছিলেন । এমন কি সুলতান গায়েসুদিন ও নসির সাহার প্রশংসাও ইহার ভণিতায় পাওয়া যায় ; তাহাতে মনে হস্য শুধু মিগিলার রাজগণ নহে, গৌড়েশ্বরগণের মধ্যেও কাহারও কাহারও কৃপাদৃষ্টি ইহাব উপর পািডয়াছিল! ইহার জীবন শতাব্দীর উদ্ধকাল ব্যাপক থাকাতে ইনি বহু রাজাব রাজত্বকালের ঘটনাবলীর সঙ্গে সাক্ষাৎসম্বন্ধে পরিচিত ছিলেন। ইনি।” সংস্কৃতে “পুরুষ-পরীক্ষা” প্ৰভৃতি পুস্তক লিখি পা প্রতিষ্ঠালাভ করেন, বংশানুক্ৰমে হঁহাৰ পূৰ্ব্বপুৰুষেরা পাণ্ডিত্যের জন্য খ্যাতিলাভ কবিয়া আসিয়াছিলেন। হঁহার অনুগ্ৰাহক বাজ। ও রাজ্ঞীগণের মধ্যে শিবসিংহ ও লছিমা দে বাই কবির বিশেষ উৎসাহ-দাতা ছিলেন । ইনি রাজার এতটা অনুরক্ত ছিলেন যে শিবসিংহের মৃত্যুর ৩৪ বৎসর পরেও তাঁহাকে ইনি স্বপ্নে দেখিয়াছিলেন, “স্বপনে দেখি নু শিবসিংহ ভূপ। চৌত্ৰিশ বৎসর পরে শ্যামল রূপ।” প্রায় সমস্ত চতুৰ্দশ শতাব্দী ও পঞ্চদশ শতাব্দীর কষেক বৎসর অবধি ইনি জীবিত ছিলেন । ইহাব রাপাকৃষ্ণবিষয়ক পদাবলী খৃষ্টায্য ষোড়শ শতাব্দীতে যশোরেব বসন্তরায় এবং অপর কয়েকজন বাঙ্গালী পদকৰ্ত্তা হিন্দী-মিশ্র বাঙ্গলা ভাষায় পৰিবৰ্ত্তি৩ করেন। সেই পরিবৰ্ত্তিত আকাবে মৈথিল কবির পদ বাঙ্গলাব ঘরে ঘবে এখনও গীত হইয়া থাকে { মহাপ্ৰভু স্বয়ং দিনরাত্ৰ বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাসেব পদ গান করিতেন, এইজন্য বাঙ্গলা দেশে ইহার প্রতিপত্তি খুব বেশী হইয়াছে। উপমা ও অন্যান্য অলঙ্কারের ছটায় বিদ্যাপতির সঙ্গীতগুলি ঝলমল কবিতেছে। ইহার শেষ দিক ক’ব পদাবলীর ভাবেল প্ৰগাঢ়তাও কম নহে ৷ প্ৰবাদ এই যে চণ্ডীদাসের সঙ্গে দেখা সাক্ষ{ ২কা<েব পরে অলঙ্কারশাস্ত্রের পরিবর্তে ভাব-প্রবণতার দিকে ইহাব ঝোক বেশী হইয়াছিল। বিদ্যাপতিৰ ভাব-সন্মিলনের পদ ভাব-সমৃদ্ধিতে অতুলনীয়। “পিয়া যােব আওব এ মধু গোহে, মঙ্গল আচার করব নিজ দেহে। বেদী করব হাম আপন অঙ্গমে, ঝাড়ু দেহব তাহে চিকুর বিছানে। আলিপনা। দেওব মোক্রিম হার । মঙ্গল কলস করব কুচ ভার” প্রভৃতি পদে কবি অশরীরী মিলনের কথা গাহিয়াছেন, যেখানে নরদেহই দেবমন্দির এবং কৃষ্ণ স্বয়ং সেই মন্দিবের দেবতা । মাথুরের পর কৃষ্ণ আর বৃন্দাবনে আসেন নাই, কিন্তু গোপীরা তাহাকে বাহিরে না। frysofs,