পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চৈতন্য-যুগ ଈଶିତ ଓt আর একটি গানে রাধা কৃষ্ণকে স্বপ্নে দেখিতেছেন—“রজনী শাওন ঘন, ঘন দেওয়া গারজন, সে যে রিমি বিমি শরদে বরিষে ; পালঙ্কে শয়ন রঙ্গে, বিগলিত চীর অঙ্গে, আমি নিদ যাই মনের হরিষে। শিখরে শিখণ্ডী রোল, মত্ত দাজুরী বোল, কোকিলা ডাকিছে কুতুহলে। বিবি ঝিনকী বঁাজে, ডাহুকী সে গরজে, আমি স্বপন দেখিলাম হেন কালে।” নিদ্রিতার চক্ষু এখানে মুদ্রিত, সুতরাং বর্ষাসুলভ ময়ুরের নৃত্য নাই, নীপ-পুষ্পের ঘটা নাই, কুন্তলোপম কৃষ্ণমেঘের খেলা নাই। --আছে শুধু শ্রুতির বিষয়। বর্ষার শত সৌন্দৰ্য্য ও দৃশ্যাবলী ছাড়িয়া কবি শুধু সুরটির উপর জোর দিয়াছেন, যাহাতে ঘুমের গাঢ়তা আনয়ন করে —ঘন ঘন দেওয়া গরজন—“শাওন’-রজনীর রিমি ঝিমি বৃষ্টি-বিন্দু পতনের শব্দ,-ঝিরির বঁাজ, ডাহুকীর চীৎকার—এসকলই শব্দ-মন্ত্র, ঘুমেব প্রগাঢ়তা বাড়াইবার ঐন্দ্রজালিক উপায় ; দৃশ্যপটের অবতারণা না করিয়া কবি স্বপ্নাবিষ্টের সুষুপ্তির সহায়ক শব্দ-জগতে আমাদিগকে লইয়া গিয়াছেন। এই কবিরা অপুৰ্ব্ব সাহসিকতার সহিত সংস্কৃতজ্ঞ হইয়াও কবি-প্ৰসিদ্ধি অগ্ৰাহা করিয়াছেন। এজন্য বর্ষাকালে কোকিলের ডাক শুনাইয়াছেন ও অনন্তদাস অভিসারিকার যাত্রায় ডাম্বফ ও বরাবের ধবনির পরিকল্পনা করিয়াছেন । চৈতন্যের সহচর এবং অনুবৰ্ত্তিগণ যে বিরাটু সাহিত্য রচনা করিয়াছেন-তন্মধ্যে কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্য-চরিতামৃতের নাম সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য। কক্ষsদাসীন বৰ্দ্ধমান ঝামটপুরে বৈদ্যবংশে জন্মগ্রহণ করেন। অল্পবয়সে বিরক্ত হইযা তিনি বৃন্দাবনে আসিয়া সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। চিরকুমার বিদ্যানুরাগী কৃষ্ণদাস পণ্ডিতগ্রগণ্য ছিলেন। তিনি বৃন্দাবনবাসী বৈষ্ণব-সম্প্রদায়ের অনুরোধে ৮৭ বৎসর বয়সে চৈতন্য-চরিতামৃত মহাগ্ৰন্থ লিখিতে আরম্ভ করিয়া ৯৩ বৎসর বয়সে ৭ বৎসবেও অক্লান্ত চেষ্টায় ইহা ১৬১৫ খৃষ্টাব্দে সমাধা করেন। } পাণ্ডিত্যে, ভক্তিতে ইহার সমকক্ষ পুস্তক বাঙ্গলা ভাষায় নাই, এবং ইহার শেষ ভাগের আখ্যায়িকাগুলি যাহা ইনি রূপ, সনাতন, রঘুনাথ প্রভৃতি সাধুগণের মুখে শুনিয়া লিখিয়াছেন, তাহানিভূল। গ্রন্থের একমাত্ৰ পাণ্ডুলিপি অপহৃত হওয়ায় তিনি শোকে প্ৰাণত্যাগ করেন। তৈল ফুরাইয়া আসিয়াছিল, তথাপি যেন ঝাপটা বাতাসে দীপ নিবিয়া গেল। কৃষ্ণদাস অনেক ঐতিহাসিক তত্ত্ব লিখিয়াছেন, তাহার দীক্ষাগুরু ও শিক্ষাগুরুদের কথা কহিয়াছেন। কিন্তু বৈষ্ণব সন্ন্যাসীর গোড়ামি-জনিত নিষেধ-বিধি মানিয়া পিতা-মাতার নাম পৰ্য্যন্ত লিখেন নাই। তাহার পিতার নাম ছিল ভগীরথ, মাতার নাম সুনন্দা এবং কনিষ্ঠ ভ্রাতার নাম শুমদাস। চৈতন্য-চরিতামৃতের পূর্বে মুৱারি গুপ্ত সংস্কৃতে “চৈতন্যচরিতম্” কাব্য রচনা করেন, ইহাতে অনেক অলৌকিক কথা লিপিবদ্ধ আছে-ভাষা সহজ ও কবিত্বপূর্ণ। কবিকণার্থ পুৱও (শিবানন্দ সেনের পুত্র পরমানন্দ ) এই সময়ে তাহার চৈতন্তের জীবনী সংস্কৃতে রচনা করেন-কিন্তু তাহার চৈতন্য-চন্দ্ৰোদয় নাটকই ( সংস্কৃত) সর্বাপেক্ষা প্ৰসিদ্ধ গ্ৰন্থ। চৈতন্যের তিরোধানে মহারাজ প্ৰতাপরুদ্র কিরূপ শোকাবিষ্ট হইয়াছিলেন, তাহার একটি করুণ-রসাত্মক চিত্ৰ মুখবন্ধ করিয়া কবি নাটকখানি আবম্ভ করিয়াছিলেনু। কারচ্য-লেখক গোবিন্দদাসীন দুই বৎসরের চৈতন্য-ভ্ৰমণ-বৃত্তান্ত পয়ার ছন্দে লিপিবদ্ধ করেন। চৈতন্তের