পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

tष्ङय-यूश ଈଳିତ মাখুৱ গান, একদিকে নিমাই-সন্ন্যাসের দ্বারা কারুণ্যে ভরপুর হইয়াছে, অপরদিকে বঙ্গের তাৎকালিক ইতিহাস সেই বিয়োগান্ত দৃশ্যের উপাদান জোগাইয়াছে। মুসলমানগণ আসিয়া দেবমন্দির ও দেববিগ্ৰহ ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন । রাজসাহী জেলায় স্কন্দগুপ্তের মহিষী যে দেবমন্দিরগুলি রচনা করিয়াছিলেন, তাম্রশাসনের কবি লিখিয়াছেন, তাহারা কারুকাৰ্য্যে জগতে অদ্বিতীয় ছিল, এইরূপ শত শত মন্দির শুধু স্থাপত্য-শিল্প হিসাবে নহে অন্য হিসাবেও বড় ছিল । ইহাদের আঙ্গিনায় যে কীৰ্ত্তন-গান হইত, প্ৰত্যহ যে রাজ-ভোগ হইতে, রাজা ও প্ৰজা একত্র হইয়া ভক্তির যে লীলা প্রকটত করিতেন, যে সকল পৰ্ব্বত-প্রমাণ কুসুমন্তবকের স্তুপ প্রত্যহ দেব-সেবার জন্য আহৃত হইত এবং বিগ্রহের অঙ্গরাগের জন্য যে বিপুল সম্ভার সমানীত হইত, শত শত ভক্তিপ্রেম ও ত্যাগের স্মৃতিজড়িত, হিন্দুর ধৰ্ম্ম ও সামাজিক জীবনের শ্ৰেষ্ঠ অধ্যায় যে সকল মন্দিরকে কেন্দ্ৰ করিয়া নিত্য সমাহিত হইত, সেই সকল মন্দিরের চুড়া ভাঙ্গিয়া পড়িল, বিগ্ৰহ-প্ৰস্তর রেণুতে পরিণত হইয়া ধূলির সঙ্গে মিশিয়া গেল-হিন্দুর প্ৰাণাধিক প্রিয় এই মন্দিরগুলির চিন্তা-শয্যায় দাড়াইয়া কবি যখন গাহিলেন, “কুসুম ত্যজিয়া আলি, মহীতলে লুঠত,-কোকিলা না করতিহি গান,-সোহি যমুনা-জল, অনল সমান ভেল-বঁাশীস্বরে না বহে উজান, সখীগণ, ধেনুগণ,-বেণুরব বিসরণ”- তখন ঐতিহাসিক দৃশ্য অধ্যাত্ম সম্পদের অঙ্গীয় হইল এবং “মাথুরী”-শ্রোতার করুণ সুরে আঁটা হৃদয়তন্ত্রীতে বারবার ঘা দিতে লাগিল। বৈষ্ণবদের এই “মাথুরে’র পালা-মৰ্ম্মান্তিক পরিদেবনার সুর } এই মাথুরের মত করুণ গান এদেশে আর কিছু হয় নাই-ইহা জাতীয় গৌরব। কবির তীব্র ব্যাথার সুরে একদিকে কৃষ্ণ-ভক্তির বন্স, অপরদিকে রাজকীয় ঐশ্বৰ্য্যের বিলোপজনিত-মৰ্ম্মান্তিক বিলাপ । কত বীর, কত বিক্রান্ত রাজাধিরাজের শ্মশান এই বঙ্গভূমি ; এখানে লাউসেনের সেনাপতি কালু ডোম যখন “খাসা মখমলী” পাদুকা পায়, শিরে রণটােপ সুচেল গায়। ঘন গোফে চাড়া, ঘুরায় আঁখি।” এই মূৰ্ত্তিতে সৈন্যগণের পুরোভাগে রণক্ষেত্রে অভিযান করিতেন,- তখন খামরূপ দেবীর অভয়-দানে চির-নিশ্চিন্ত ইছাই ঘোষেরও বক্ষ কম্পিত হইত, এখানে “সেনার প্রধান চলে সীতারাম ভূঞা, যার ভরে প্ৰেমত্ত কুঞ্জর পড়ে নুঞা,” প্রভৃতি দৃশ্য সচরাচর দেখা যাইত এবং যখন রায়র্বেশেগণ তাণ্ডব করিতে করিতে সৈন্যগণের অগ্রভাগে যাইতে থাকিত, তখন বঙ্গের পৌণ্ড বাসুদেবের বিদ্রুত অভিযান ও সমুদ্রগুপ্ত, ধৰ্ম্মপাল প্রভৃতি সম্রাটগণের দিগ্বিজয়-যাত্রার কথা মনে হইত। এখানে প্রতাপাদিত্যের নিকট যখন মানসিংহের দূত আসিয়া বেড়ী (শৃঙ্খল) ও তরবারি রাখিয়া জানাইল, “এক হয় বেড়ী (অধীনত্বসূচক) রাখুন, তরবারি ফিরাইয়া দিন, নতুবা যদি যুদ্ধ করিতে ইচ্ছা থাকে- তবে শুধু তরবারিটি রাখুন।” প্রতাপাদিত্য বেড়ী ফিরাইয়া দিয়া বলিলেন, এই বেড়ী লইয়া যাও, “বোড়ী দিও আপনার মানিবের পায়ে।” আর “আমি শুধু মানসিংহকে জয় করিয়া ক্ষান্ত হইব না, আগ্ৰায় দিল্লীশ্বরকে পরাস্ত ও নিধন মাথুর গান।