পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

» • O O বৃহৎ বঙ্গ নাই। ইনি ফতেয়াবাদ (আধুনিক ফরিদপুর ও তন্নিকটবৰ্ত্তী কয়েকটি স্থান লইয়া ফতেয়াবাদ পরগনা গঠিত হইয়াছিল) মুলুকের অধিবাসী। জাহাঙ্গীরের সময়ে ইহার জন্ম হয়। ইনি আরাকানে যাইবার পথে জাহাজে জলদসু্যাগণ দ্বারা আক্রান্ত হন – কোনও ক্ৰমে ইহার জীবন রক্ষা হয়-কিন্তু ইহার পিতা সমসের কুতুব যুদ্ধ করিতে করিতে দস্যদের দ্বারা নিহত হন। আরাকানে ইনি মাগন ঠাকুর নামক এক রাজপুরুষের অনুগ্রহ লাভ করিয়া পদ্মাবৎ কাব্য লিখিতে আরম্ভ করেন । সুজা বাদ সাহের সঙ্গে এই সময়ে আরাকান-রাজের মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয় এবং আলোয়াল সুজার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন,-মৃজ নামক এক ব্যক্তির মিথ্যা সাক্ষ্যে এই অভিযোগ প্ৰমাণিত হওয়াতে কবি সাতবৎসর কারাভোগ করেন। এই ঘটনা ১৬৫৭-৫৮ খষ্টাব্দে ঘটিয়াছিল। কারাগার হইতে বাহির হইয়া বৃদ্ধ বয়সে ইনি ছয়ফুল বদিউজ্জামাল প্ৰভৃতি আরও কয়েকখানি কাব্য রচনা কবেন । কিন্তু পদ্মাবৎই তাহার সর্বশ্রেষ্ঠ গ্ৰন্থ। ইহাতে শুধু তাহার প্রগাঢ় সংস্কৃত সাহিত্য ও ব্যাকরণের জ্ঞান প্ৰদৰ্শিত হয় নাই, প্ৰত্যেকটি হিন্দু পূজা-পাৰ্ব্বণ, আয়ুৰ্ব্বেদ ও জ্যোতিষশাস্ত্রে অসামান্য অধিকাব প্ৰদৰ্শিত হইয়াছে। তিনি অনেকগুলি সংস্কৃত শ্লোকও বচনা করিয়া পদ্মাবৎ কাব্যের কোন কোন অধ্যায়ে সন্নিবেশ করিয়াছেন । ইহার অনেক কবিতায্য গীত-গোবিন্দের ছন্দ ও শব্দ-কঙ্কার বাঙ্গলা ভাষায় অনুকৃত হইয়াছে। এই কাব্যের বিষয় চিতোরের ইতিহাস-বিশ্রুত বাজ্ঞীর উপাখ্যানটি। ১৫১৯ খৃঃ অব্দে মীর মালিক মহম্মদ যোশী পদ্মাবৎ হিন্দীতে রচনা করিযাছিলেন-আলোয়ালের কাব্য তাহারই পদ্যানুবাদ । কিন্তু বাঙ্গলাব কবি এই পুস্তকে এত মৌলিক বিষয়ের সমাবেশ করিয়াছেন যে আসলটি ভাল হইযাছে কিংবা নকলটি ভাল হইয়াছে, তৎসম্বন্ধে মতদ্বৈধ छ९3ग्रl ठामस्छद व्Cछ । এই প্রসঙ্গে মুসলমান কবিগণের সম্বন্ধে আমাদের একটি কথা বক্তব্য আছে। মুসলমান নৃপতিগণের অনুগ্রহে রাজসভায় বাঙ্গলা ভাষার ‘অনুকূলে সর্বপ্রথম সুবাতাস বহিয়াছিল। বাঙ্গলায় অনেক মুসলমান কবি বৈষ্ণবপদ বচনা করিয়া গিয়াছেন। মুসলমানী বাঙ্গলা পুস্তকের সীমা-সংখ্যা নাই, তাহারা এত বেশী যে তৎসম্বন্ধে একখানি বড় ইতিহাস লেখা চলে। এই সকল পুস্তকের কতকগুলিতে উর্দুর প্রভাব এত অধিক যে তাহা বাঙ্গলা-সাহিত্যের অন্তৰ্গত করা চলে না, অপরগুলি খাটি বাঙ্গলা। নগর ও সহবের সংস্রব-বর্জিত বহু দূর পল্লীতে হিন্দু ও বৌদ্ধগণ মুসলমান ধৰ্ম্ম গ্ৰহণ করাব পাবেও রূপকথা, গীতিকথা ও পল্লীগাথায় প্রতি তাহদের প্রগাঢ় অনুরাগ বিলুপ্ত হয় নাই। এখনও এক সুবিস্তৃত সাহিত্য বাঙ্গলার পল্লীতে পড়িয়া আছে—তাহাতে দৃষ্ট হইবে বাঙ্গলা দেশের রূপকথাগুলির অধিকাংশ মুসলমানেরাই রক্ষা করিয়া আসিয়াছেন। নব-ব্ৰাহ্মণ্যপ্ৰভাবে হিন্দুসমাজে তাহা অধিকাংশস্থলে লুপ্ত হইয়া গিয়াছে। এই সকল গীতিকথা ও রূপকথা প্রভৃতিতে এই দেশের প্রাচীন ইতিহাসের কতকটা আভাস পাওয়া যায়। “মল্লিকার পুথি” নামক একখানি কাব্যে মুসলমানগণ কিরূপে হিন্দু রাজাদের সঙ্গে যুদ্ধ-বিগ্ৰহ করিতেন, অতি সুন্দর বাঙ্গলায় তাহা বর্ণিত আছে, উহার আখ্যানবস্তুর মধ্যে অনেক কথাই ঐতিহাসিকেরা অগ্ৰাহ করিবেন, সন্দেহ নাই-কিন্তু তথাপি হিন্দু