পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণচন্দ্ৰ ও তৎপরবত্তী যুগে বাঙ্গলা-সাহিত্যের অবস্থা S e o \) সংগ্ৰহ করিয়াছিলেন। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্ৰ ইহাকে কতকটা ভয়ের চক্ষে দেখিতেন, প্ৰথমতঃ নবাব দরবারে রাজবল্লাভের প্রতিপত্তির দরুন তঁহাকে রাজাদের খাতির করিতেই হইত, বিশেষ দেউলিয়া রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রাজবল্লাভের হাতে রাখি’ বাধিয়া দক্ষিণস্বরূপ পূর্বকৃত ঋণ কয়েক লক্ষ টাকা হইতে মুক্তি পাইয়াছিলেন। প্ৰকাশ্যভাবে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রাজবল্লাভের বিরুদ্ধাচারী হইতে সাহসী হইতেন না। ‘ক্ষিতীশবংশাবলী’তে দৃষ্ট হয়, রাজা রাজবল্লভ কাশী, কাঞ্চী, দ্রাবিড হইতে পণ্ডিতগণ আনাইয়া বৈদ্যাদিগের উপবীত-গ্ৰহণের বিষয়ে চেষ্টা করিলে বাজা কৃষ্ণচন্দ্ৰ ভিতরে ভিতরে এই কাৰ্য্য পণ্ড করিতে চেষ্টা পাইয়াছিলেন । কোন বৈদ্যাকে তিনি উপবীত গলায় দিয়া তাহার রাজসভায় যাইতে দিতেন না । রাজবল্লভ বিধবা-বিবাহপ্ৰচলনের জন্য চেষ্টা পাইয়াছিলেন, কিন্তু রাজনীতি-চতুর কৃষ্ণচন্দ্রের কৌশলে সে চেষ্টাও ব্যর্থ হইয়া যায়। মহারাজ রাজবল্লভ তৎস্থাপিত রাজনগরের রাজধানী যে অপূর্ব গৌরবমণ্ডিত করিয়াছিলেন তাহার কারুকার্য দেখিবার জন্য বহু ভূপৰ্য্যটক রাজনগরে আসিয়া ছবি আঁকিয়া লইয়া যাইতেন । তাহার দেখাদেখি নবদ্বীপরাজ ‘শিবনিবাস’ নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন ; কিন্তু রাজবল্লাভের বৈভব তাহার ছিল না, সুতরাং সেই সমকক্ষতার চেষ্টা, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল নিৰ্ম্মাণ করিয়া তাজমহলের যশোলোপ করিবার চেষ্টার মত বিফল হইল। কিন্তু এক বিষয়ে কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভার সমকক্ষতা রাজবল্লভ করিতে পারেন নাই। কৃষ্ণচন্দ্ৰ বহু পণ্ডিতমণ্ডলীকে ঠিাহার দরবারে পাইয়াছিলেন, রাজবল্লভ যদিও পণ্ডিতগণকে অকুষ্ঠিত হস্তে আশ্রয় দিয়াছিলেন, তথাপি হরিরাম তর্কসিদ্ধান্ত, কৃষ্ণানন্দ বাচস্পতি, রামগোপাল সাৰ্ব্বভৌম, প্ৰাণনাথ ন্যায়-পঞ্চানন এবং শিবরাম বাচস্পতি প্ৰভৃতির ন্যায় সার্বভৌম পণ্ডিত র্তাহার সভায় ছিলেন। কিনা সন্দেহস্থল। এদিকে কৃষ্ণনগরের রাজকবি ভারতচন্দ্ৰ ও বাজানুগ্ৰহ-প্ৰাপ্ত রামপ্ৰসাদ বঙ্গদেশের ঐ স্থা অধিকার করিয়াছিলেন। রাজনগরের রাজকবি জয়নারায়ণ ও ‘আনন্দময়ী প্ৰতিভাপন্ন হইলেও অবশ্য পূর্বোক্ত দুই কবির সমকক্ষতা করিতে পারেন নাই। ভারতচন্দ্র রায়ের আদিনিবাস ছিল পৌঁড়ো বসন্তপুর গ্ৰাম । বৰ্দ্ধমানের রাজার অত্যাচারে এই পবিবার সর্বস্বান্ত হন। ভারতচন্দ্রের পূর্বপুরুষগণ ভুরসুট পরগনার রাজা ছিলেন। এদিকে তিনি কেশরকুনী বংশের এক কন্যার পাণিগ্রহণ করাতে র্তাহাকে স্বগৃহ হইতে তাড়িত হইতে হইয়াছিল। দারিদ্র্যের মধ্য দিয়া তাহাকে উন্নতির দুরূহ। পথে আরোহণ করিতে হইয়াছিল। সংস্কৃত, ফারসী, আরবী, হিন্দুস্থানী ও বাঙ্গলায় তঁাহার তুল্যাধিকার ছিল, একথা তিনি অন্নদামঙ্গলে আমাদিগকে জানাইয়াছেন। বিদ্যোৎসাহী এবং বিদ্বান রাজা কৃষ্ণচন্দ্ৰ ভারতচন্দ্রকে ৪০২ টাকা বেতনে তঁহার রাজসভার কবির পদে নিযুক্ত করেন। ভারতচন্দ্ৰ তাহার অন্নদামঙ্গল কাব্যে র্তাহার সুগভীর পাণ্ডিত্যের পরিচয় দিয়াছেন। বিদ্যাসুন্দরের বিচার উপলক্ষে “আত্ম-তত্ত্বে পূর্বপক্ষ সুন্দর করিল” ইত্যাদি কবিতায় তিনি তঁহার শ্যায়শাস্ত্ৰে পাণ্ডিত্য প্ৰমাণ করিয়াছেন। তোটক, মন্দাক্রান্তা, ভুজঙ্গপ্ৰয়াত প্রভৃতি ছন্দ তিনি বাঙ্গলায় যে ভাবে আনয়ন করিয়াছেন, তাহ অতীব বিস্ময়কর সফলতার VefVeba