পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o oyo বৃহৎ বঙ্গ বহিয়া তাহা চিরপবিত্ৰ করিয়া রাখিয়াছে। স্বামীর কাছে গৌরীর দুঃখের কথা শুনিয়া মেনকা রাণীর বুকে প্রতি নিয়ত শেল বিধিত। তিনি রাজ্ঞী, র্তাহার অন্ন বাড়ীব পোষা জীবজন্তু পৰ্য্যন্ত প্রচুর রূপে ভোগ করে, অথচ কন্যার পেটে ভাত নাই, কন্যার ছেলেরা ক্ষুধার তাড়নায় পথে পথে ঘুরিয়া বেড়ায়-এ কষ্ট মায়ের অসহনীয়। তিনি গিরিরাজকে বলিতেছেন, “তুমি যে কয়েচ গিরিরাজ, আমায় কতদিন কত কথা, সেকথা আমার মনে শেলসম রয়েছে গাথা । আমার লম্বোদয় নাকি উদরের জ্বালাঘ কেঁদে কেঁদে বেড়াত, হ’য়ে অতি ক্ষুধাৰ্ত্তিক, সোনার কাৰ্ত্তিক ধূলায় প’ড়ে লুটাত ” গণপতিতে চিরকালই লম্বোদব—-কিন্তু এই পদে লম্বোদরের ক্ষুধা-নিপীড়িত উদরেব কৃঞ্চন মনে পড়ে, এবং কত আদরের সোনার কাৰ্ত্তিকদের এই মৰ্ম্মান্তিক দুঃখকাহিনী ধনিগৃহের কন্যাবিবাহবিধুর সীমন্তিনীদের মনে অপূৰ্ব কারুণ্যের সৃষ্টি করে। এসকল গান মায়ের মৰ্ম্মবেদনায় লিখিত । কবিরা এরূপ সরল হৃদয়স্পর্শী কথা কহিতেন, যাহাতে বাঙ্গলার অধ্যায়রাজ্যোিব রাজা মহেশ্বরের গৃহবর্ণনা করিতে যাইয় তাহদের বাঙ্গলার মায়ের চক্ষে দরদীয় অংশ প্রবাহ বহাইয়া দিতেন । এরূপ গান শুধু একটি নন্তে, শরৎ শেফালীব দ্যায় ইহাৱা অজস্র ; কোনটিতে মেনকা বলিতেছেন--“গিরি, গৌরী আমার এসেছিল”-- সে স্মাসা গণিকের জন্য । স্বপ্নে দর্শন দিয়া গৌরী চলিয়া গেপেন, মায়েব দুঃখের কথা শুনিতে একটি দণ্ড প্ৰতীক্ষা কবিলেন না । মেনকা কন্যার নিষ্ঠুরতা স্মরণ করিয়া বলিতেছেন, তঁহারই বা কি দোষ ? “পাষাণের মেয়ে পাসাণী হ’ল” গিরিরাজতো পাষাণই বটেন, কিন্তু এখানে গিরিরাজের হৃদয়ও যে পাষাণেরই মত তাহারই ইঙ্গিত দিয়া স্বামীর উপেক্ষার প্রতি রাণী কটাক্ষ করিতেছেন। অন্য একদিন নারদের মুখে রাণী শুনিলেন, “মা -মা- ব’লে উমা কেঁদেছে” আর কি অভিমান করিয়া থাকা যায় ? স্বামীর পা ধরিয়া কাদিয়া বলিতেছেন, “যাও যাও গিরি, আনিতে গৌবী, উমা কেমনে। রয়েছে”-তিনি তো কত কথাই শুনিয়াছেন, পাগলা জামাই নাকি ভাঙ্গ খাইয়া দিগম্বর সাজিয়াছেন এবং প্রাণের গৌরীকে কত গালাগালি করিতেছেন—“উমার বসন ভূষণ, যত আভরণ,-তাও বেচে ভাঙ্গ খেয়েছে,” এসকল কথা তখনকার দিনে প্ৰায় প্ৰত্যেক মায়েরই প্ৰাণের কথা ছিল--ইহাদের সেই চাপা কান্নার ভাষা দিয়াছিলেন-কবিরা, এবং এই করুণায় দুৰ্গোৎসব ভাসিয়া যাইয়া বিসর্জনের বিদায়-বাজনার সুর বাঙ্গলার পল্লীতে পল্লীতে একটা মৰ্ম্মস্তাদ স্রোত বহাইয়া দিত । মেনকা কখনও আর সহিতে পারিতেন না। সেই বৎসর ভরিয়া বিরহের দুঃখে প্ৰাণ আকুল হইয়া উঠিত। তিনি একটি গানে বলিতেছেন, “গিরি। আমার মনের এই বাসনা, আমি জামাভ সহিতে, আনিব দুহিতে, গিরি-পুরে করব শিব স্থাপনা। ঘরজামাই করি রাখবো কৃত্তিবাস, গিরিপুরী হবে দ্বিতীয় কৈলাস-হরগৌরী রূপ হেরব বারমাস-বৎসরান্তে আন্তে যেতে হবে না।” গিরিরাজ অচল,-একটি গানে কবি তাহাকে বেতোরোগী বলিয়া বৰ্ণনা করিয়াছেন, তঁহাকে নড়ান খুব সহজ ব্যাপার নহে, সুতরাং শিবকে যদি হিমালয়ে স্থাপন করা আগমণী গান ।