পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Yo Yo বৃহৎ বঙ্গ কি বাধা আছে দিব যে এনে”-কালেংড়া রাগিণীর এই গানের সঙ্গে ঠংরি তালে মালিনী মাসী নাচিয়া গাহিয়া আসর মাৎ করিয়া দিত-সে দৃশ্য যে দেখিয়াছে সে কি তাহা কখনও ভুলিতে পারে ? শরৎ কালের শিউলি একটি দুইটি পড়ে না—তাহা অজস্ৰ, এই গানগুলিও তাহাই। “কে শিখাল তোরে এই সিঁধ-কাটা বিদ্যো-থাক থাক থাক, হয়ে দাড়কাকঠোকর দিলি শিব নৈবেন্থে-গোবরা পোকা হয়ে বসিলি পদ্মে ” জীবনে সর্বদাই বিকাররহিত নিবাতনিষ্কম্প হ’য়ে তুষ্ণী"ম্ভাবে বসিয়া থাকা যায় না-একটু তরল আমোদ-প্ৰমোদের জন্য মনের মাঝে মাঝে একটা ইচ্ছা হওয়া যে গহিত, তাহা আমরা মনে করি না। যদি সত্য সত্যই কেহ স্থাণু কিংবা অচলায়তন তেমন ধারা থাকেন, তবে আমি শপথ করিয়া বলিতে পারি, যাত্রার হীরামালিনী যদি নাচিয়া গাহিয়া তঁহার প্রতি ঐ সকল গানের ফুল-শর হানেন, তবে তৎক্ষণাৎ তাহার সমস্ত গাম্ভীৰ্য্য ভূমিসাৎ হইবে । এই সকল কবিত্বের কৃতিত্ব, গোপাল উড়ের বঁাধনদার ভৈরব হালদারের কিন্তু এই গানগুলি গোপাল উডের নামেই চলিয়া আসিয়াছে বলিয়া আমরাও তাঁহারই নামের উল্লেখ করিলাম। বৰ্দ্ধমান বঁাদিমোড়া-নিবাসী পাঁচালীকার দাশরথির শব্দের উপর অতি আশ্চৰ্য্য অধিকার ছিল, ইনি যমকঅলঙ্কারের এরূপ অপূর্ব খেলা বাঙ্গলা শব্দের উপর দেখাইয়াছেন যে, স্বীকার করিতে হইবে, ইনি একজন প্ৰকৃত খেলোয়াড় বটেন । সে সকল খেলা দেখিয়া গ্ৰীত হই এবং বোধ হয় বিস্মিতও হই; কিন্তু যখন এই চটুল লোকটি তাহাব ক্ষিপ্ৰ ও উজ্জ্বল প্ৰতিভা দ্বারা আসার জমাইবার চেষ্টা ছাড়িয়া দিয়া স্বগৃহে আসিয়া গৃহদেবতার কাছে “দোষ কারও নয়গো মা, আমি স্বখাত সলিলে ডুবে মারি শুষ্ঠােমা” বলিয়া কঁাদিতে থাকেন, কিংবা সেই দেবতার রূপে মাধুৰ্য্য ও ভীষণতার সংমিশ্রণের আভাস পাইয়া “নীলবরণী, নবীন রমণী” বলিয়া স্তোত্ৰ পড়িতে থাকেন-কখনও “নীল-নয়ন-জিনি ত্ৰিনয়নী, নিরখিলাম নিশানাথ নিভাননী” আবার পর মুহুর্তে “লোলরিসন করালবদনী” বলিয়া ভয়ে চক্ষু নিৰ্মীলিত করেন, তখন তাহার সেই মৰ্ম্মস্পর্শী অনুতাপ-তাহার দেবতার পরিপূর্ণ দয়ার মূৰ্ত্তি এবং সঙ্গে সঙ্গে সংহার-মূৰ্ত্তির ধ্যান আমাদিগকে তঁহার আঙ্গিনায় পদব্রজের প্রার্থী করিয়া তোলে। এই শব্দ-মন্ত্রের গুরুদ্বয়কে ছাড়িয়া আমরা কলিকাতার এক সময়ের বড় লোকদের সংগীতকলার অবলম্বনস্বরূপ রামনিধি গুপ্ত সম্বন্ধে কিছু বলিয়া শেষ করিব রামনিধিবাবু (নিধুবাবু) ১৭৪১ খৃষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করিয়৷ ১৮৩৪ খৃষ্টাব্দে ৯৩ বৎসর বয়সে পরলোকগমন করেন ; বাগবাজার অঞ্চলে এখনও তাহার অৰ্দ্ধভগ্ন গৃহখানি আছে। র্যাহার। ভক্তের এককালে সীমাসংখ্যা ছিল না, এবং তঁহাদের মধ্যে অধিকাংশই বড়লোক ছিলেন, এখনও সংগীতবিজ্ঞানা অনুশীলন-কারীদের মধ্যে র্তাহার। ভক্তের অভাব নাই, এতাদৃশ ব্যক্তির গৃহখানি ংস্কার করিয়া স্মৃতিরক্ষার কোনই ব্যবস্থা হইতেছে না-বড় আশ্চৰ্য্যের বিষয় । রামনিধি গুপ্তের গানগুলি অধিকাংশই সারি মিঞার টপ্লার অনুকরণে রচিত ; রাধাকৃষ্ণের কথা বাদ দিয়াও যে প্রেম-সংগীত বাঙ্গলা ভাষায় রচিত হইতে পারে-তােহা নিধুবাবু দেখাইয়াছেন। “কানু ছাড়া Pfaff |