পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গের প্রাদেশিক ইতিহাস-ত্রিপুরা-রাজ্য yo y আক্রমণ করিয়া বলিয়াছেন, ইহা “অলগ্নিক কুৎসিত।” এইখানে আর একটি কথা বলার দরকার-কোন কোন ত্রিপুর-রাজের নাম মঙ্গোলিয়ান ভাষার চিহ্ন স্পষ্টই বহন করে, যথা, “ছেং থোম্পা”, “ডাঙ্গর ফা” “খিতুঙ্গ” প্ৰভৃতি। এক সময়ে চীনারাজাদের প্রভাব যে আৰ্য্যাবৰ্ত্তের উত্তর সীমানায়, বিশেষতঃ বঙ্গের উত্তরভাগে, খুব বেশী হইয়াছিল—তাহার প্রমাণ আছে। উত্তরের প্রভাব এদেশের শিল্পকলায়ও পরিদৃষ্ট হয়। যদিও ধীমান বীতপাল প্রভৃতি ভারতীয় শিল্পাচাৰ্য্যগণের প্রভাব সুদূর উত্তর ও পূর্ব এশিয়ায় ব্যাপ্ত হইয়াছিল এবং যদিও ভারতীয় বৌদ্ধগণের প্রভাব চীন-জাপানের সর্বত্র দৃষ্ট হয়, তথাপি চীন সম্রাটের অধিকার মাঝে মাঝে বঙ্গদেশের উত্তর দিক পৰ্যন্ত ব্যাপক হইয়াছে বলিয়া মনে হয় ; তন্ত্রাদিতে দৃষ্ট হয় বশিষ্ঠ মুনি চীনদেশে যাইয়া তান্ত্রিক সাধনা শিখিয়া আসিয়াছিলেন। ভারতীয় রাজগণ বিশেষ মগধাধিপতিরা এমন কি গৌড়রাজগণের কেহ কেহ চীন রাজের নিকট দূত পাঠাইতেন, তাহার প্রমাণ পাওয়া যায়। এই বঙ্গদেশেরই অনেক দেবমূৰ্ত্তির চক্ষু চীনদেশীয় লোকের চক্ষুর ন্যায়। হয়ত প্ৰাচীন কোন যুগে উত্তর দেশের ভাস্করগণ কখনও কখনও এদেশে মূৰ্ত্তি নিৰ্ম্মাণ করিতেন, তাহদের তান্ত্রিক শিষ্যপরম্পরার প্রচেষ্টায় “দেবচক্ষুর” উক্ত ংস্কার চলিয়া আসিয়াছে। স্তানবংশীয়দের উপাধি ত্রিপুরা ও নিকটবৰ্ত্তী জনপদের রাজার গ্ৰহণ করিয়াছিলেন বলিয়া মনে হয় । মুসলমানদিগের প্রাধান্যের সময়ে মজুমদার, জুমলাদার, খাসনবিসি, মহালানবিস প্রভৃতি উপাধি দ্বারা ব্ৰাহ্মণগণও পরিচিত হইতেন। ত্রিপুর-রাজগণের ঐ রূপ। চৈনিক বা স্যানদিগের উপাধি গ্ৰহণ করা কিছুমাত্ৰ অসম্ভব নহে। আমরা পূর্বে লিখিয়াছি পুরাকাল হইতে এই রাজবংশের ১৮৪ জন রাজার নাম পাওয়া যায়। দ্রাহ, ইহাদের মধ্যে সপ্তমস্থান য়-সুতরাং দ্রুহ, হইতে মহারাজ বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য পৰ্য্যন্ত ১৭৭ জন। ত্রিপুরার রাজার নাম রাজবংশাবলীতে আছে। দ্রুহ নামে কোন রাজা ছিলেন। কিনা এবং যযাতির পত্র দ্রুহই এই ত্রিপুর-রাজদের আদিপুরুষ কিনা, এই সকল দুৰূহ প্ৰশ্ন-সমাধানের স্থান। এখানে নহে। যখন চন্দ্ৰসূৰ্য্যবংশীয় রাজগণের গোড়ায়ই ঐতিহাসিক গলদ দৃষ্ট হয় (অর্থাৎ কোন জ্যোতিষ্ক হইতে মানুষের আবির্ভাবব্যাপার ঐতিহাসিকগণের ধারণার অতীত), তখন শুধু ত্রিপুর-রাজগণের কথা নহে, সেই চন্দ্ৰসূৰ্য্যবংশের অভিমানী সমস্ত রাজগণের বংশাবলীরই আদিকথা ঘোর অন্ধকারাবৃত। এইসকল জল্পনা-কল্পনা লইয়া কালক্ষয় করা বিফল । যে মুষ্টিমেয় আৰ্য্যবীর ত্রিপুর-রাজ্যে প্রথম আসিয়াছিলেন, তাহারা যে বিস্তৃত কিরাত ও অপরাপর অনাৰ্য্যসমাজে মিশিয়া গিয়াছিলেন তাহাতে সন্দেহ নাই। দৈত্যের পুত্ৰ ত্রিপুর “জন্মাবধি না দেখিল দ্বিজ সাধু ধৰ্ম্ম। সেই হেতু নৃপতি হইল ক্ৰৱকৰ্ম্ম। দানধৰ্ম্ম না দেখিল আগম পুরাণ। বেদশাস্ত্ৰ না পঠিল নাহি কোন জ্ঞান। দীক্ষিত না হৈল, দেবদ্বিজ না চিনিল। সল্লোকের ব্যবস্থার কিছু না দেখিল। কিরাত-প্রকৃতি হৈল কিরাত-আচার।” শুধু ইহাই ষথেষ্ট নহে, ত্রিপুর নিজেকে ঈশ্বর বলিয়া ঘোষণা করিলেন । ত্রিপুর। *