পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Y OV8 বৃহৎ বঙ্গ রাজধর উহার প্রতি লুব্ধ হওয়াতে ইসা খাকে ঐস্থান ত্যাগ করিয়া জঙ্গলবাড়ীতে যাইতে হইয়াছিল। অমরমাণিক্য ১৫৮২ খৃষ্টাব্দে শ্ৰীহট্ট জয় করেন, তৎপুর্বে ১৫৭৭ খৃঃ অব্দে ভুলুয়া রাজ্য জয় কৃরিয়াছিলেন। ভুলুয়ার অধিপতি দুর্লভরায় যুদ্ধে পরাস্ত হইয়াছিলেন। তিনি তঁহার সৈন্যশ্রেণীতে ৩০০ শত পাঠান সৈন্য নিযুক্ত করিয়াছিলেন। মহারাজ স্বয়ং সিংহরাব নারায়ণ নামক সেনাপতির সঙ্গে ভুলুয়ায় ৩৬,০০০ সৈন্য লইয়া যুদ্ধ জয় করিয়া আসেন, তৎপরে বাকুলার অধিপতি কন্দৰ্প রায়কে যুদ্ধে নিহত করিয়া তাহার রাজ্য লুণ্ঠন করেন। সুপ্ৰসিদ্ধ অমর দীঘির কথা পূর্বেই লিখিয়াছি, এই দীঘি খনন করিতে তিনটি বৎসর লাগিয়াছিল ; ১৫৮১ খৃষ্টাব্দে ইহার খনন কাৰ্য্য শেষ হয়। সেইখানে জগন্নাথ মঠ নিৰ্ম্মিত হয় এবং মহারাজ ১৪খানি গ্রাম এই মঠে উৎসর্গ করেন “তদবধি চৌদ্দগ্রাম নাম তার হৈল ।” আমরমাণিক্য স্বয়ং পণ্ডিত ছিলেন এবং তঁহার সভায় দুইশত ভট্টাচাৰ্য্য সৰ্বদ শাস্ত্ৰালোচনা করিতেন । আমরমাণিক্য “ফুলকোয়াড়ি ছড়া’র নিকট দুহটি বটবৃক্ষে ভূতে আডা করিয়াছে শুনিয়া সেই দুইটি বৃক্ষ কাটিতে আদেশ করেন ; এসম্বন্ধে বহুলোকের ভয়প্ৰৰ্শন ও নিষেধ তিনি শুনেন নাই। বৃক্ষ দুইটি কাটা গেলে সকলে দেখিল, ভূতের উৎপাত থামিয়াছে-ভুতবল হইতে যে রাজবল বেশী তাহা লোকে বুঝিল । রাজার একবার উৎকট ব্যাধি হইয়াছিল,—এক দুষ্ট লোক প্রচার করিল, রাজা তাহার আরোগ্য কামনায় দেবা।দেশ প্ৰাপ্ত হইয়া ১২৫টি শিশু ‘ফুলকোয়াড়ির ছড়া’য় ডুবাইয়া পূজা দিবেন। ভয়ে সহস্ৰ সহস্ৰ লোক নিজ শিশুদিগকে লইয পলাইয়া যাইতে লাগিল। রাজা সেই দুষ্ট লোককে দণ্ড দিবার জন্য ধরিয়া আনিতে আদেশ দিলেন এবং প্ৰজাগণকে ধনরত্ন বিতরণপূর্বক সেই মিথ্যা কথার অসারতা প্ৰমাণ করিলেন। আরোগ্যলাভ করিয়া অমরমাণিক্য আরাকান-বিজয়ে বহির্গত হইলেন। আরাকানরাজ ফিরিঙ্গিদের সহিত যোগ দিয়া প্রথমতঃ ত্রিপুর-সৈন্যকে বিধ্বস্ত করিয়াছিলেন, কিন্তু শেষে অমরমাণিক্যেরই জয় হইল। এই যুদ্ধে অমবমাণিকোর পুত্র রাজধর ও তাহার ভ্রাতারা অশেষ বীরত্ব দেখাইয়াছিলেন । যুদ্ধ জয় হুইল বটে, কিন্তু কনিষ্ঠ রাজপুত্ৰ অমর-দুর্লভকে পাওয়া গেল না। সন্ধ্যা হইয়া গেল-রণক্ষেত্র খুজিয়া তঁহার মৃতদেহ বা কক্তিত-মুণ্ড না পাইয়া ত্রিপুর-সৈন্য নিতান্ত চিন্তিত হইয়া পড়িল । অবশেষে দুই অশ্বারোহীবি সহিত রাজপুত্র ঘোড়ায় বিদ্যুদ-বেগে আসিয়া নিজ শিবিরে দেখা দিলেন। র্তাহার। সৰ্ব্বাঙ্গ শোণিতাৰ্দ্ৰ, হস্তে আসি এরূপ ভাবে মুষ্টিবদ্ধ ছিল যে শিরাগুলি টানিয়া ধরায় সেই অসি। হস্তে দৃঢ়বদ্ধ হইয়াছিল, তাহা সহজে খোলা গেল না—“অশ্ব হ’তে রাজপুত্র যখন নামিল। রক্তসমে হাতে খড়গ তাতে না খসিল । উষ্ণজল দিয়া তারা হস্ত পাখালিল। তিন সোয়ারের হস্তের খড়গ তখন খুলিল ।” এই মহাযুদ্ধে কর্ণফুলির তীরে বহু মগ ও ফিরিঙ্গি সৈন্য নিহত হইয়াছিল। মগ-বিজয়ের পর অমরমাণিক্য উড়িষ্যার রাজাকে আনুগত্য স্বীকার করাইবার জন্য দূত প্রেরণ করেন। উড়িয়ারাজ যুদ্ধ করিতে প্ৰস্তুত হইলেন, উদ্যোগের জন্য কিন্তু সময় চাহিয়া লইলেন। ভূতই বড় না। রাজাই বড়। মগ-বিজয় ।