পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৫২ বৃহৎ বঙ্গ কিছুতেই পোষ মানাইতে পারেন নাই। শের সাহকে দমাইতে যাইয়া হুমায়ুন দিল্লীর তক্ত ত্যাগ করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন ; সৰ্ব্ব-শেষ পাঠানব্যাস্ত্ৰ দাউদের বিয়োগান্ত জীবন-নাট্য । কি ভীষণ তঁাহার অধ্যবসায় ! কতবার হারিয়াছেন, সন্ধিপত্রে দস্তখত করিয়াছেন, সেগুলি তিনি সুবিধা পাইলেই তৃণবৎ নগণ্য মনে করিয়া কোমর বাধিয়া যুদ্ধে লাগিয়া গিয়াছেন, র্তাহার পিতা সোলেমান খা আকবরের নামে মাত্ৰ বশ্যতা স্বীকার করিয়া নির্বিবদ্রে দীর্ঘকাল রাজত্ব করিয়া গেলেন । দাউদ ইচ্ছা করিয়া একটিবার মাথা নোয়াইলেই তদপেক্ষা বৃহত্তর রাজ্যে স্থায়িভাবে অভিষিক্ত হইয়া পরম নির্বিঘ্নে জীবনটা কাটাইয়া দিতে পারিতেন। কিন্তু এই পাঠান-ব্যান্ত্র জীবনে সুখ-শান্তি চান নাই। পুনঃ পুনঃ হারিয়া গিয়া পুনঃ পুনঃ লড়াই করিয়াছেন। প্রায় জীবনব্যাপী যুদ্ধ চালাইয়াও যুদ্ধক্লান্তি হয় নাই ; শেষে যে সন্ধি হইল তাহাতে সমস্ত উড়িষ্যার সামাজ্যটা হাতে পাইলেন, হয়ত বা আকবরের বশ্যতা স্বীকার করিলে আরও অধিকার বাড়াইতে পারিতেন, কিন্তু সে সকল সুবিধা ও ব্যবস্থা লইয়া তিনি সুখী হন নাই। পবিত্র কোবাণ অমান্য করিয়া পুনরায় যুদ্ধক্ষেত্রে অবতরণ করিয়াছেন। এই আফগানদের প্রত্যেকের রক্তে দিল্লীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের বীজ ছিল, এই বীজ জরাসন্ধ, পৌণ্ড বাসুদেব, নবক ও সমুদ্র সেন প্রভৃতি হইতে আসিয়াছে—বাঙ্গলাদেশের রাজারা চিব-বিদ্রোহী। পাঠান সময়ে আমরা এই সত্য যতটা দেখিতে পাঈ, এতটা আর কখনও নহে--ইন্দ্ৰপ্ৰস্থের "অতুল বিজয়পতাকা, মথুরার সমৃদ্ধি, বৈবতকের অভ্ৰভেদী দুর্গ এবং সর্বশেষে মুশ্লিম অধিকৃত দিল্লী—বঙ্গের ব্যাস্ত্ৰদিগকে স্ববশে আনিতে পারে নাই । বাঙ্গালী-চবিত্ৰেৰ এক দিকে বিরাগ অপরদিকে রাগ । বিরাগে সে বিদ্রোহী। কিন্তু অনুবাগে সে অবহেলায় মৃত্যু ববণ করিযী লয। বাঙ্গালীর রাজ-ভক্তি অপূৰ্ব্ব । লাউসেনেব সেনাপতি কাল ডোম, তৎপত্নী লক্ষ্মা ও শাক-শুকা পুত্ৰ-দ্বয়ের যে রাজভক্তির কথা ধৰ্ম্মমঙ্গল কাব্যে বর্ণিত আছে, তাহার তুলনা নাই ; লক্ষ্মা তেঁাহার দুই পুত্ৰকে গভীব নিদ্রা হইতে জাগাইয়া রাজাব জন্য নিশ্চিত মৃত্যু বরণ কবিতে রণক্ষেত্রে পাঠাইয়া দিয়াছেন। এ যুগেও বাঙ্গালী-পুলিশ অনেক সময় স্বীয় বন্ধুবান্ধবদিগের গঞ্জনা সহ্য করিয়াও বাজার জন্য কথায় কথাধি মৃত্যুব সম্মুখীন হইতেছে। যদিও আমরা মঃ ইঃ ব্যক্তিয়াবেবী আগমন হইতে ১৫৭৬ খৃঃ পৰ্য্যন্ত দীর্ঘ সময়টা ‘পাঠান-যুগ” নামে মূলতঃ পরিচিত করিয়াছি, তথাপি এই যুগের রাজগণের মধ্যে সকলেই আফগান ছিলেন না, কেহব। আরব দেশের, কেহ বা খোজা, কেহ বা হাবাসী, এবং কেহবা হিন্দু ছিলেন। মোটামুটি এই সময়টাকে ‘পাঠান-প্রাধান্যের নুগ” বলা যাইতে পারে। এই সকল রাজাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে হিন্দুরক্ত বহমান ছিল । সুলতান গায়েসুদিনের বিমাতা, সমসুদিনের নিকাসুত্রের স্ত্রী, ফুলমতী বেগম-—এক সময়ে নুরজাহান দিল্লীতে যাহা করিয়াছিলেন-বঙ্গদেশের শাসনসংক্রান্ত বিষয়ে সেইরূপ ক্ষমতা দেখাইয়াছিলেন । ফুলমতী ঢাকা জেলার বিক্রমপুর হিন্দুর সহিত রক্তসম্বন্ধ।