পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গের প্রাদেশিক ইতিহাস-ত্রিপুরারাজা So 8S দুনীতি ও শক্রিতার স্থলে সৌহার্দ্য ও শান্তি স্থাপন কবেন, কিন্তু তঁহার পৌত্র বিজয়মাণিক্যের সময়েও নির্বাপিত বহির কিছু কিছু স্মৃলিঙ্গ দেখা দিত। উক্ত রাজা খণ্ডলবাসী বাঙ্গালীদের এরূপ দুৰ্গতি করিয়াছিলেন যে বস্ত্রাভাবে তাহারা বৃক্ষপত্র পরিয়া লজ্জা নিবারণ করিতে বাধ্য হইয়াছিল, বিক্রমপুরের ভদ্র-সমাজে ইহার অকথ্য অত্যাচার ইতিহাসে লিখিত হইয়াছে। এদিকে ইনিই আবার বাঙ্গালী ব্ৰাহ্মণদিগকে মুক্তহস্তে স্বর্ণ ও ভূমি দান করিয়াছেন। র্তাহার পূর্ব-বঙ্গে দিগ্বিজয়ের ফলে একদিকে যেমন জনসাধারণের অকথ্য কষ্ট হইয়াছিল, অপর দিকে ক্রমশঃ বাঙ্গালীদিগের সঙ্গে পাৰ্ব্বত্য-ত্রিপুরার ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পাইয়া এরূপ অবস্থা দাড়াইল যে, যদিও রাজ্যের সীমান্তে টিপ্ৰা ভাষা এখনও প্রচলিত রহিয়াছে।--তথাপি সমগ্ৰ ত্রিপুরা দেশ এখন বাঙ্গলা সমাজের অঙ্গীয় হইয়া গিয়াছে এবং বাঙ্গলা ভাষা গ্ৰহণ করিয়াছে। ধন্যমাণিক্য পাঠানদিগের নিকট হইতে বলপূর্বক মেরাহরকুল, পাটকারা, গঙ্গামণ্ডল, বরদাখাত, বিষণ উড়ি, প্রভৃতি পরগনা কড়িয়া লইয়াছিলেন। উত্তরে খানাংচি বাজ্য এবং কুকী আধুষিত সমস্ত পাহাডিয়া দেশ তিনি ভীষণ যুদ্ধের পর দখল করিয়াছিলেন, চট্টগ্রাম তিনি এবং পরে বিজয়মাণিক্য দখল করিয়াছিলেন । বিজয়ামাণিক্য শ্ৰীহট্ট জয় করিয়া সুবৰ্ণ-গ্রামের পাঠানদিগকে দালন-পূর্বক পদ্মাতার পর্য্যন্ত সমস্ত দেশ অধিকার করিয়াছিলেন। ব্ৰহ্মপুত্রের পূৰ্ব্বতীর হইতে পশ্চিমে জাহ্নবী (বুড়ী গঙ্গা ) এবং সরস্বতীর তীর পর্য্যন্ত বিশাল জনপদ তাহার সাম্রাজ্যের অন্তৰ্গত হইয়াছিল। এই ভাবে ত্রিপুরেশ্বর বঙ্গের এক প্ৰকাণ্ড বিভাগ স্বাধিকাবে আনিয়া বাঙ্গলার শিক্ষাদীক্ষা ও শিল্প পাৰ্বত্য-প্রদেশে প্ৰচলিত করিয়াছিলেন। এক কালে এই সমস্ত স্থান মহাভারতের শিক্ষায় প্রভাবান্বিত হইয়াছিল; রাজার মহাভারত ও অপরাপর শাস্ত্ৰ-গ্রন্থের বঙ্গানুবাদ করাইয়াছিলেন, উত্তর কালে মহাপ্রভুর সাঙ্গোপাঙ্গের বংশধরেরা খোল করতাল লইয়া এই রাজ্যকে প্ৰেমধৰ্ম্মে দীক্ষা দিয়াছিলেন । আমি দেখিয়াছি, কুমিল্লায় পাহাড়িয়া কুকীরা কাষ্ঠ বিক্রয় করিতে যখন নিম্ন-ভূমে অবতরণ করে, তখন তাহাদের কেহ কেহ বটতলার প্রকাশিত চৈতন্যচরিতামৃত ক্ৰয় কবিয়া লইয়া যায়। প্রায় অৰ্দ্ধ শতাব্দী পূর্বে মহারাজ বীরচন্দ্ৰমাণিক্য বৈষ্ণব-শাস্ত্ৰ-প্ৰকাশের জন্য বহরমপুরের রামনারায়ণ বিদ্যারত্নকে এক লক্ষ টাকা দিয়া বৈষ্ণব-সমাজের অশেষ কল্যাণ সাধন করিয়াছেন । এই রাজাদের কাহিনী পাঠ করিলে দৃষ্ট হইবে-ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে অনেক রাজাই বসন্ত রোগে প্ৰাণত্যাগ করিয়াছিলেন। সে দেশে কি বাঙ্গল টীকা লওয়ার রীতি প্ৰচলিত ছিল না ? ত্রিপুরা রাজ্যে যে এই ব্যাধি খুব সংক্রামক ভাবে কোন কালে দেখা দিয়াছিল, তাহার কোন উল্লেখ দুষ্ট হয় না। মহারাজ মহামাণিক্য, ধন্যমাণিক্য, ধৰ্ম্মমাণিক্য, বিজয়মাণিক্য, ছত্রমাণিক্য ইহারা সকলেই বসন্ত রোগে প্ৰাণত্যাগ করিয়াছেন বলিয়া রাজমালায় লিখিত হইয়াছে; মহামাণিক্য ১৪৩১ খৃঃ অব্দে, ধৰ্ম্মমাণিক্য ১৪৬২ খৃঃ অব্দে, ধম্ভমাণিক্য ১৫১৫ খৃঃ অব্দে, বিজয়ামাণিক্য 4. বসন্ত রোগ ।