পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গের প্রাদেশিক ইতিহাস-প্ৰাগজ্যোতিষপুর Y OC. Y কথিত আছে, শিব ইহাকে স্বীয় পুত্ৰ কাৰ্ত্তিকেয় হইতেও বেশী ভালবাসিতেন। প্ৰাগৈতিহাসিক যুগের বীরগণের সম্বন্ধে এইরূপ নানারূপ উপাখ্যান প্ৰচলিত আছে। ঐতিহাসিকগণ সেগুলির মধ্যে অবশ্য অনেক কথা অগ্ৰাহা করিতে পারেন, কিন্তু তাই বলিয়া রাজাদের অস্তিত্বে অবিশ্বাস করিবার হেতু নাই। হরিবংশ ও মহাভারত পাঠ করিলে জানা যায় প্ৰাগজ্যোতিষপুরের রাজারা অতি পরাক্রান্ত ছিলেন এবং ইহারা যুধিষ্ঠিরের সময়ে ভারতীয় রাজস্যবর্গের পুরোভাগে অবস্থিত ছিলেন। ইহাদের অনেকেই প্ৰাচ্য-সম্রাটু জরাসন্ধের সঙ্গে সখ্যসূত্রে আবদ্ধ ছিলেন। প্ৰাচ্যবিদ্যামহার্ণব নগেন্দ্ৰনাথ বসু মহাশয় প্রমাণ করিয়াছেন, রামায়ণের বর্ণনায় যে লোহিতসাগর পাওয়া যায়, তাহা আরবের পশ্চিমে অবস্থিত। “রেড সি” নহে, তাহা লৌহিত্য নদ। এই নদ এককালে হয়ত সাগরোপম ছিল, বনমালের তাম্রশাসনে এই নদকে “লৌহিত্যাসিন্ধু।” বলা হইয়াছে। বলবৰ্ম্মার তাম্রশাসনে ইহাকে “বারিধি” ও রত্নপালের শাসনে ‘সিন্ধু’ এবং ইন্দ্ৰপালের শাসনে “সরিৎপতি” নাম দেওয়া হইয়াছে। ইহার বর্তমান নাম করতোয় । সম্ভবতঃ এই সাগরোপম বাধা অতিক্রম করিতে না পারিয়া ভারত-বিজয়ী জাতিরা গৌড় দেশ পৰ্য্যন্ত অগ্রসর হইয়া এইখানে ঠেকিয়া পড়িতেন। নগেন্দ্ৰবাবু প্ৰমাণ করিয়াছেন, এই স্থানে বেদোক্ত পণিজাতি ও আৰ্য্যগণের নানা শাখা বেদের সময় হইতে বসবাস করিতেছেন, এখান হইতে পণি (বাণিক জাতি) পৃথিবীর সর্বত্র বাণিজ্য-জাহাজ লইয়া যাতায়াত করিত, এখনও এখানে চৰ্ম্মোপবীতধারী ঋষির বংশধরগণ ঠিক বেদমন্ত্রের ন্যায় মন্ত্র উচ্চারণ করিয়া হোমকাৰ্য্য করিয়া থাকেন। গেট সাহেব লিখিয়াছেন-খাস বঙ্গদেশে যেরূপ সমস্ত জাতি মিশিয়া এক হইয়া গিয়াছে, আসামে তাহা হয় নাই। আসামে বহুপূর্বকালের আচার ব্যবহার লইয়া এক এক জাতি স্বীয় স্বীয় স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করিয়া আছে। এই দেশকে ভারতবর্ষের প্রাচীন সভ্যতার একখানি সংক্ষিপ্ত ও জীবন্ত ইতিহাস বলা যাইতে পারে। ঐতিহাসিকগণের তীক্ষ সন্ধানী উৎসুক দৃষ্টির আলো-রেখা এখনও এই পাৰ্বত্য প্রদেশের নিগুঢ় নিকেতনে প্রবেশ করে নাই। এই খনি আবিষ্কৃত হইলে অনেক মূল্যবান ঐতিহাসিক তথ্য এখান হইতে পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এককালে বশিষ্ঠের মত মহর্ষি নাকি কামাখ্যা দেবীর মন্দির হইতে বিতাড়িত হইয়াছিলেন, তথায় প্ৰবেশ লাভ করিতে পারেন নাই। লৌহিত্য নদের তীরে যুগে যুগে যে রাষ্ট্র ও ধৰ্ম্ম বিপ্লবের অভিনয় হইয়াছে, তাহার সন্ধান করার স্থান এখানে নহে, সুতরাং প্রাগৈতিহাসিক যুগের বিষয় লইয়া আমরা বিলম্ব করিব না। কিন্তু ভারতের ইতিহাসে আর্য্যাবৰ্ত্তে-বিশেষ গৌড়দেশে ইহাদের কি দান, তৎসম্বন্ধে দুই একটি কথা বলিব । ১ । বাণিলিঙ্গ ( মহারাজ বাণের দ্বারা পূজিত একরূপ শিবলিঙ্গ ) আৰ্য্যাবর্তের সৰ্ব্বত্র শৈবগণ কর্তৃক বিশেষ আদৃত। কথিত আছে অন্য প্রকার बांगलिया । শত শত শিবলিঙ্গ পূজার যে ফল, একটিমাত্র বাণিলিঙ্গ-পুজার ততোধিক ফল ।