পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

y o (tR বৃহৎ বঙ্গ ২। কামাখ্যাতীর্থ, সমস্ত হিন্দুর একটি প্ৰধান ধৰ্ম্মস্থান,-“এই স্থানে তান্ত্রিক যাদুবিদ্যার এতটা প্ৰচলন হইয়াছিল যে, এককালে অন্ততঃ গৌড়দেশবাসী সকল তান্ত্রিকই कांभांथIांडोर्थ। সৰ্ববিষয়ে কামাখ্যার দোহাই দিতেন। বাঙ্গলা শত শত পল্লীগাথায় যাদুবিদ্যার কথা হইলেই কামাখ্যা তাহার একমাত্র শিক্ষার স্থল বলিয়া উল্লিখিত হইয়াছে; এমন কি বহু উৰ্দা -শব্দ-কণ্টকিত “মুসলমানী বাঙ্গলায়া” লিখিত পুথিতেও আমরা যাদুবিদ্যা-প্রসঙ্গে কামাখ্যা দেবীর উল্লেখ পাইয়াছি। পুরুষকে ভেড়া করিয়া রাখিবার যে সকল টোনা আছে, বাঙ্গলা দেশ এক বাক্যে কামরূপ-বাসিনী দিগকেই সেই টোনার একমাত্র অধিকারিণী বলিয়া জানে। কালীঘাটের পটুয়ারা সেদিন পৰ্যন্তও কামরূপ বা কামতাবাসিনীদিগের এইরূপ ভেড়া বানাইবার ছবি আঁকিয়া বিক্রয় করিত। ৩ । কামরূপের চিত্ৰভাস্করদের নাম ইতিহাস-বিশ্রুত। চিত্রকর ও চিত্রকরীর বহু উল্লেখ আমরা ভারতীয় সাহিত্যে পাইয়াছি। অজন্তা প্ৰভৃতি জগদ্বিখ্যাত স্থানে চিত্রবিদ্যা । হিন্দু ও বৌদ্ধগণের চিত্ৰ-নিদর্শনের অভাব নাই। কিন্তু চিত্রাঙ্গদাই ভারতীয় সাহিত্যে চিত্রকরী বলিয়া সর্বপ্রথম উল্লিখিত হইয়াছেন, ইনি বাণ-রাজকন্যা উষার সঙ্গিনী ছিলেন এবং মনুষ্যের প্রতিকৃতি এরূপ সুন্দরভাবে আঁকিতে পারিতেন যে তদাঙ্কিত ছবিগুলি মুকুরে বিম্বিত মূৰ্ত্তির ন্যায় অবিকল হইত। বহু চেষ্টার পর এই চিত্রকরীর চিত্ৰ দেখিয়া উষা অনিরুদ্ধের প্রথম পরিচয় লাভ করিয়াছিলেন। হরিবংশপুরাণে এই বিষয়টি বিস্তারিত ভাবে বর্ণিত আছে। তৎপরে সংস্কৃত সাহিত্যের নানা স্থানে চিত্রবিদ্যার উল্লেখ আছে---উত্তর-চরিতে রামের বাল্যজীবনের চিত্ৰলেখমালা দর্শনে রাম, লক্ষ্মণ ও সাঁতার পূৰ্ব্বস্মৃতি জাগিয়া উঠিয়াছিল ; শকুন্তলা নাটকে রাজা দুষ্মন্ত যে ছবি আঁকিবার পরিকল্পনা করিয়াছিলেন, তাহা চিত্ৰ-শিল্পেব অতি সূক্ষ্ম জ্ঞানের পরিচায়ক । কেহ কেহ বলিয়া থাকেন, দূরত্ব-বোধক রেখা এবং আশা ও ছায়া ভারতীয় শিল্পী আঁকিতে পারিতেন না। অজস্তার চিত্রাবলীতে জিনিষ ও আসবাব-পত্রের আকৃতি ও সংস্থান এরূপ যথাযথভাবে প্ৰদৰ্শিত হইয়াছে যে তাহ দেখিয়া কোন দ্রব্য কতটা দূরে-তাহা স্পষ্ট বোঝা যায়,- উহ! এদেশে বিদেশী সভ্যতার দান নহে। বিদূষক বলিতেছেন- “সাহু বঅসস। মহুরাবখাণদংসণিজ্জো ভাবাণুপ্লবেসে। খলদি বিঅ' মে দিচ্ঠি শিষ্ণুদল্পদেসেম্ব।” (বয়স্ত, সাধু!— অবস্থানের নৈপুণ্যে ভাবের সমাবেশ সুন্দর হইয়াছে, নিম্ন ও উন্নত অংশগুলিতে যেন দৃষ্টি ঋলিত হইতেছে)। এই নিম্নোন্নত স্থান-প্ৰদৰ্শন আলো ও ছায়ার সম্যক্ জ্ঞান ব্যতীত হইতে পারে না। দুষ্মন্ত র্তাহার ছবির অঙ্কনের যে পূৰ্ব্ব-কল্পনা দিয়াছেন, তাহাতে শিল্প-কুশলতা ও অন্তদৃষ্টি বিশেষভাবে প্ৰদৰ্শিত হইয়াছে—“শাখালিম্বিতবন্ধলন্ত চ তরোৰ্নিৰ্ম্মতুমিচ্ছাম্যধঃ। শৃঙ্গে কৃষ্ণমৃগন্ত বামনয়নং কণ্ডুয়মানং মুণীম” (শাখা হহঁতে বন্ধল দুলিত, এইরূপ একটি বৃক্ষের নীচে মৃগী কৃষ্ণ মূগের শৃঙ্গে আপনার বাম নয়ন ঘষিতেছে ইহাই আঁকিতে ইচ্ছা করি। )।” কবির দৃষ্টি ও চিত্রকরের দৃষ্টি এখানে “মিশিয়া সুবৰ্ণ জড়িত যেন হীরা” হইয়াছে। ভারতীয় চিত্রকলার অন্যতম আদি স্থান প্ৰাগজ্যোতিষপুর।