পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

)●Qや বৃহৎ বঙ্গ মহম্মদ সাহার ১,০০,০০০ অশ্বারোহী সৈন্য কামরূপ-রাজের যাদু-বিদ্যার প্রভাবে সমস্তই বিনষ্ট হইল। ( আলমগির নামা, ৭৩১, পৃ: ) । কিন্তু এই সময় হইতে প্ৰাগজ্যোতিষপুর বহু খণ্ডরাজ্যে পরিণত হইয়া প্ৰত্যেকটি কোন কোন পার্বত্য রাজবংশীয় নেতার অধিকারে আসিল। চুটিয়া রাজারা সুবৰ্ণাশ্ৰী ও দিশাং নদীর পূর্বভাগে, পশ্চিমে কাছাড় রাজগণ, এবং পরবর্তী সময়ে অহম রাজগণ, স্বীয় স্বীয় অধিকার লইয়া যুদ্ধ-বিগ্ৰহ করিয়াছেন। চুটিয়াদের উত্তরে এবং কাছাড়ীদের পশ্চিমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্ৰ ভূঞা রাজারা ( দ্বাদশ ভৌমিক) আধিপত্য করিতেন। দক্ষিণে, পূর্ব মৈয়মনসিংহে দুৰ্গাপুর, জঙ্গলবাড়ী, দশ কাহিনিয়া, বোকাইনগর প্রভৃতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রদেশের রাজবংশীয় নেতারা এই সময়ে স্বাধীন হইয়াছিলেন। এদিকে কোচবিহার প্রবল হইয়া এক সময়ে প্ৰাগজ্যোতিষপুরের অনেকাংশ গ্ৰাস করিয়াছিল। চুটিয়াদের আদি রাজা বীর পাল, --তৎপুত্ৰ গৌরীনারায়ণ ( সোনা গিরিপাল ) ভদ্রসেন নামক এক রাজাকে হত্যা করিয়া রত্নপুরে রাজধানী স্থাপন করেন। এই বংশে গৌরীনারায়ণের (রাজ-উপাধি রত্নধ্বজ পাল ) পর নয়টি রাজা হইয়াছিলেন। অষ্টম রাজা ধীরনারায়ণের নাবালক পুত্রের অভিভাবক এবং জামাতা সাধক আহমদের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া নিহত হন। বারভূঞাদের আদিপুরুষ সমুদ্র, তৎপুত্ৰ মনোহর,-মনোহরের কন্যা লক্ষ্মীর গর্ভে শান্তনু এবং সামন্ত জন্মগ্রহণ করেন। সামন্তের বংশধর রাজধর নোয়াগায়ে বরদোয়াতে উপনিবিষ্ট হন, রাজধরের পুত্ৰ কৰ্ম্মসুমবারের দেশবিশ্রুতকীৰ্ত্তি মহাপুরুষ শঙ্কর দেবের কথা আমরা পরে লিখিব। বার ভূঞাদের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি অহমগণের দ্বারা বিনষ্ট হইয়াছিল। চুটিয়া রাজগণের সময়ে কামাখ্যাদেবীর মন্দির নিত্য নরবলির রক্তে প্লাবিত হইত। কামতার রাজগণের শেষ বংশধর নীলাম্বর ১৪৯৮ খৃঃ অব্দে হুসেন সাহ কর্তৃক বিজিত হইয়াছিলেন। খেন রাজগণের আদি পুরুষ গরুড় রাখাল ছিলেন, তিনি সিংহাসনে আরোহণ করিয়া হিন্দুধৰ্ম্ম কামতা দখল। গ্ৰহণ-পূর্বক নীলধ্বজ উপাধিতে পরিচিত হইলেন। হামিণ্টন কামতাপুরের রাজ্য ১৯ মাইল ব্যাপক বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন। নীলধ্বজের পুত্ৰ চক্ৰধ্বজ এবং তৎপুত্ৰ নীলাম্বর । এই নীলাম্বরের রাজ্ঞী ব্ৰাহ্মণ মন্ত্রীর পুত্রের প্রেমে আবদ্ধ হন। রাজা উহা জানিতে পারিয়া সেই মন্ত্রিপুত্রকে বধ করিয়া তাহার মাংস রাধাইয়া অজ্ঞাতসারে মন্ত্রীকে খাওয়ান। শেষে স্বয়ং ঘটনাটি মন্ত্রীকে জ্ঞাপন করেন। মন্ত্রী প্ৰতিশোধ লইবার জন্য অভিসন্ধি করিয়া হুসেন সাহার শরণ গ্ৰহণ করেন । হুসেন সাহ ১২৯৮ খৃঃ অব্দে কামতাপুর অবরোধ করিয়া বহু কালের চেষ্টায় কিছুই করিতে পারেন নাই। অবশেষে মন্ত্রীর পরামর্শে রাজ্ঞীর সঙ্গে হুসেন সাহের বেগম দেখা করিতে অনুমতি লইয়া অন্তঃপুরে ছদ্মবেশী কতকগুলি যোদ্ধাকে প্রেরণ করেন। এই ভাবে কামত মুসলমানের অধিকৃত হয়। রাজা পলাইয়া আত্মরক্ষা করেন । ১৫৯০ খৃঃ অব্দ পৰ্যন্ত কামত মুসলমান শাসনাধীন থাকে। ইহার পরে মুসলমানেরা অহম রাজাদের রাজ্যের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি করার ফলে, সমস্ত মুসলমান সৈন্য নিশ্চিহ্ন হইয়া ধ্বংসপ্ৰাপ্ত হয় এবং পূর্বাধিকৃত কামত রাজ্যও তঁহাদের হস্তচু্যুত হয়। ইহার পরে চন্দন এবং মদন নামক দুই ক্ষুদ্র রাজার নাম পাওয়া