পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গের প্রাদেশিক ইতিহাস-প্ৰাগজ্যোতিষপুর SOVroe তিন চার দিন শ্বাসরোধ করিয়া থাকিতে পারিতেন, দীর্ঘকাল তিনি একটিমাত্ৰ পাদাঙ্গুষ্ঠেয়। উপর ভর করিয়া দাড়াইয়া থাকিতেন এবং একাদিক্ৰমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জলে ডুবিয়া থাকিত্তে পারিতেন। আসামে এইরূপ যোগাভ্যাসের রীতি তৎকালে প্ৰচলিত ছিল, শাক্তগণ তাত্রিকঅনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে যোগাভ্যাস করিয়া নানারূপ বিভূতি দেখাইতেন। এইখানে চৈতন্যদেবের সঙ্গে শঙ্করের বৈষ্ণব-ভক্তিবাদের মূল প্ৰভেদ ; বাঙ্গালী বৈষ্ণবেরা এইসকল বিভূতি কিছু কিছু না দেখাইতেন, এমন নহে। বীরভদ্র ও তাহার সাঙ্গোপাঙ্গদের মধ্যে নানারূপ বিভূতি-প্ৰদৰ্শনের কথা প্ৰেমবিলাসাদি গ্রন্থে প্ৰাপ্ত হওয়া যায়-কিন্তু চৈতন্যদেব ঐসকল পন্থার বিরোধী ছিলেন । শঙ্করদেবকে তাহার পিতামহী গোসাই খেরাসতি লালনপালন করিয়াছিলেন। তিনি অল্পবয়সে র্তাহার বিবাহ দিয়া তাহাকে গৃহী করিয়াছিলেন। কিন্তু শঙ্কর গৃহে আবদ্ধ থাকিবার জন্য জন্মগ্রহণ করেন নাই। নব-যৌবনে স্ত্রী মৃত্যুমুখে পতিত হন; শঙ্কর র্তাহার তিন শত দুগ্ধবতী গাভী, স্বীয় ভূত্য রাখালগণের মধ্যে বিতরণ করেন, এইভাবে তেঁাহার ষাট জোড়া বলদও বিতরিত হইল। অবশিষ্ট সম্পত্তি র্তাহার দুই জ্ঞাতি ভ্ৰাতা জয়ন্ত ও মাধবকে দিয়া তিনি একদিন গেরুয়া পরিয়া সন্ন্যাসগ্রহণপূর্বক গৃহ হইতে বহির্গত হন। বারবৎসর তিনি নানাতীর্থে অতিবাহিত করিয়া পুনরায় গৃহে ফিরিয়া আসেন এবং দার-পরিগ্রহ করেন। তাহার ভ্রাতা বনগায়া গিরি র্তাহার গৃহ-নিৰ্ম্মণপূর্বক যে সকল গাভী। তিনি বাখাল বালকদিগকে দিয়া গিয়াছিলেন, তাহদের কয়েকটিকে ফিরাইয়া দিতে অনুরোধ করেন ; তাহারা অস্বীকার করাতে বনগায়া এরূপ ক্রুদ্ধ হইয়াছিলেন যে তিনি একটি রাখালকে মারিয়া ফেলিয়াছিলেন। এই ঘটনায় শঙ্কর অত্যন্ত মৰ্ম্ম-পীড়া পাইয়াছিলেন । শঙ্করেব জ্ঞাতিভ্ৰাতা জগদানন্দ তাহার বাসস্থানে একটি মন্দির নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন। এই ভ্ৰাতা সুপণ্ডিত ছিলেন ; শঙ্কর ইহার সঙ্গে মন্দিরে সর্বদা ধৰ্ম্মালোচনায় সময় কাটাইতেন। জীবনের এই অধ্যায়ে মাধবের সঙ্গে তাহার দেখা হয়। মাধবই তাহার সর্বপ্রধান শিষ্য এবং তিনিই মহাপুরুষিয়াবৈষ্ণবসম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা। মাধব সংস্কৃতে বিশেষ বুৎপন্ন ছিলেন এবং ঘোর শাক্ত ছিলেন,-ইহার বাড়ী তেষুনিয়াবন্ধে ছিল। ইহার মাতার গুরুতর পীড়া হওয়াতে ইনি র্তাহার আরোগ্য কামনা করিয়া কামাখ্যাদেবীর নিকট দুইটি ছাগবলি মানত করিয়াছিলেন। শঙ্কয়-শিষ্য গায়াপাণির সঙ্গে এই উপলক্ষে মাধবের তর্ক হয়, এবং মাধব তর্কে পরাজয় করিবার জন্য শঙ্করের নিকট উপনীত হন । মাধব সংস্কৃতশাস্ত্ৰে অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জন করিয়াছিলেন, কিন্তু অবশেষে শঙ্করের নিকট পরাজিত হইয়া তাহার শিষ্যত্ব গ্ৰহণ করেন। এই সময়ে শঙ্কর ভাগবতের এই শ্লোকটি আবৃত্তি করিয়াছিলেন : “যথা তরোমুলনিষেচনে ন তৃপ্যন্তি তৎস্কন্ধভুজোপশাখা: ৷ প্ৰাণোপহারাচ্চ যথেন্দ্ৰিয়াণাং তথৈব সৰ্ব্বাহঁণমচুতেজ্যা।” ( যেরূপ তরুমূলে জল নিষেক করিলে তাহার কাণ্ড-শাখা উপশাখা সমস্ত পুষ্ট হয়, যেরূপ প্ৰাণের তৃপ্তি হইলে সৰ্ব্বেত্ৰিয়ের তৃপ্তি হয়, সেইরূপ অচ্যুতের অৰ্চনায় সর্বদেবতা অচ্চিত इहेब्रा थाहकन्म ।) r মাধবের মত এত বড় শাক্তের পরাজয়ে সমস্ত শাক্ত-নেতাদের টিকি নড়িয়া উঠিল।