পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

à OV) বৃহৎ বঙ্গ শ্ৰীধর ভট্টাচাৰ্য্য, কবিরাজ মিশ্র, বামনাচাৰ্য্য এবং রত্নাকর কন্দলী প্ৰভৃতি শাক্ত নেতার কি উপায়ে বৈষ্ণবধৰ্ম্মের বীজ অস্কুরে নষ্ট করিবেন, তজ্জন্য চেষ্টত হইলেন। শ্ৰীধর ভট্টাচাৰ্য্য স্বয়ং নৈয়ায়িক ছিলেন, তিনি বলিলেন “তর্ক-যুদ্ধে শঙ্করকে পরাস্ত করা যাক ৷” ব্ৰহ্মানন্দ ভট্টাচাৰ্য্য বলিলেন, “তর্কে কোন প্রয়োজন নাই, উহাতে শঙ্করকে অনাহুতভাবে গৌরব দান করা হইবে । বৈষ্ণব ধৰ্ম্ম কামাখ্যাদেবীর দেশে আপনিই নিবিয়া যাইবে, অপেক্ষা করা যাক।” রত্নাকর কন্দলী শঙ্করকে চিনিতেন, তিনি বৈষ্ণবধৰ্ম্ম এই ভাবে বিলুপ্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখিলেন না। তিনি বলিলেন, “সকলে মিলিয়া এই ধৰ্ম্মের নিন্দ ও বিদ্রুপ করা যাক, তাহা হইলে সাধারণের মধ্যে ইহার বিস্তার নিরুদ্ধ হইবে।” শাক্তেরা তাহাই করিতে লাগিলেন, যেখানে সেখানে বৈষ্ণব-নিন্দ ও তাহাদিগকে লইয়া উপহাস চলিতে লাগিল। একদিন বুদ্ধখা নামক এক ব্যক্তির বাড়ীর শ্রাদ্ধের নিমন্ত্রণে প্ৰধান প্ৰধান শাক্ত পণ্ডিত উপস্থিত ছিলেন ; ব্ৰাহ্মণের হয়ত তাহার সঙ্গে তর্ক করিতে স্বীকার করিবেন না, এই জন্য শঙ্কর অতি বিনীত শিষ্যের ন্যায় কতকগুলি প্রশ্ন করিয়া তাহাদিগকে এমন সমস্যায় ফেলিলেন যে, তাহাদের দৰ্প চূৰ্ণ হইয়া গেল। রত্নাকর কন্দলী নিজের জালে নিজে জড়িত হইয়া পড়িলেন। শাক্তেরা বিধ্বস্ত হইয়া অহমরাজ শুক্লেনফার (১৫৩৯-১৫৫২ খৃঃ) নিকট শঙ্করের বিরুদ্ধে অভিযোগ করিলেন। অভিযোগ টিকিল না। এদিকে শঙ্কর প্রকাশ্য শক্রিতার ভাব ত্যাগ করিয়া শাক্ত ব্ৰাহ্মণদিগেব মন যোগাইতে চেষ্টত হইলেন,-তিনি তঁাহার শিষ্যদের দ্বারা অনেক টাকা উঠাইয়া তাহার আশ্রমে ব্ৰাহ্মণদের দ্বারা গীতা পাঠ করাইয়া প্রচুররূপে দক্ষিণ দিতে লাগিলেন ; ইহাতে ব্ৰাহ্মণ দলের ভাব অনেকটা অনুকূল হইল এবং হরিকাথাও দেশে প্রচারিত হইতে লাগিল। এই সময়ে তিনি স্বয়ং ভগবত প্ৰভৃতি শাস্ত্ৰ অতি সরল সুন্দর আসামী ভাষায় অনুবাদ করাইয়া সাধারণের মধ্যে ভাগবত-ধৰ্ম্ম প্রচার করিতে লাগিলেন। কিন্তু অহম মাজের শাক্ত পণ্ডিতদের প্ররোচনায় বৈষ্ণবদিগের উপর পুনরায় অত্যাচার করিতে লাগিলেন ; এমন কি একদা শঙ্কর কোনরূপে প্ৰাণে রক্ষা পাইয়াছিলেন, কিন্তু তাহার প্ৰিয় শিষ্য হরি নিহত হইলেন। অহম্রাজগণের অত্যাচারে শঙ্করদেব বুঝিলেন, কামাখ্যাদেবীর প্ৰতাপ আসামে কিছুতেই ক্ষুঃ হইবার নহে। তিনি বরপেটায় আসিয়া কোচবিহারের রাজা নরনারায়ণের শান্তিময় রাজত্বে ধৰ্ম্মপ্রচারের খুব সুবিধা পাইলেন। ইহার মধ্যে তাহার এক প্রধান শিষ্য জুটল-নারায়ণ দাশ। এখানেও প্রথম শঙ্কর বড়ই কষ্টে দিনপাত করিতে লাগিলেন, কারণ ব্ৰাহ্মণের রাজা নরনারায়ণকে জানাইলেন, শঙ্করশিষ্যের ভগবতীর নিকট মাথা নত করে না, কামাখ্যাদেবীকে মানে না ইত্যাদি। রাজা শঙ্করকে ধরিয়া আনিতে লোক পাঠাইলেন ; শঙ্কর বিপদ আশঙ্কা করিয়া পলাইয়া গেলেন। তঁহার দুই শিষ্য নারায়ণ দাশ ও গোকুল দাশ ধূত হইয়া রাজার নিকট আনীত হইলেন। ইহারা কিছুতেই দুর্গ-প্রতিমার নিকট মাথা নোয়াইবেন না-এজন্য রাজা নিরতিশয় ক্রুদ্ধ হইয়া ইহাদিগকে যৎপরোনাস্তি কঠোর দণ্ড দিয়া শেষে হত্যা করিতে আদেশ করিলেন,