পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V8 বৃহৎ বঙ্গ এক রাজার করতাকে বঙ্গের মুসলমান বাদসহ বিবাহ করিতে চাহিয়া পাঠাইয়াছিলেন । তাহাতে যে অনর্থ ঘটিয়াছিল। তদবিবরণ ময়মনসিংহ গীতিকাব প্রথম খণ্ডে রূপবতী নামক আখ্যায়িকায় বৰ্ণিত হইয়াছে। আমরা বাধ্য হইয়া নায়ক, নায়িকা, রাজা ও বাদ সাহের নাম রূপান্তর করিয়া ছাপাইয়াছি। কিন্তু ঘটনাটি সত্য। পূর্ব হইতে দেশে যে আবহাওয়া বাহিতেছিল, হুসেন সাহ সেই দিকে পাল খাটাইয়া বঙ্গের বাদাসাহের অন্তঃপুরে হিন্দুপ্ৰভাবের অনুকুল গতি দ্রুততর করিয়া দিয়াছিলেন। তিনি ছিলেন সৈয়দ ! এ দেশে তখন কুলগৌরব অত্যধিক ছিল। আমরা পূর্বেই লিখিযাছি। এই কুলগৌরবই তাঁহাকে অতি সামান্য অবস্থা হইতে মহোন্নতির সোপানে আরূঢ় করাইয়াছিল। ইনি নিজের কন্যাদিগকে পাঠানদের সঙ্গে বিবাহ দিতে ইচ্ছুক ছিলেন না। তখন বারেন্দ্ৰ ব্ৰাহ্মণ-সমাজে ভাদুড়ী বংশ কুলমৰ্য্যাদায় অগ্রগণ্য-তঁহাদেরই একজন বঙ্গেব রাজা ছিলেন এবং তঁহাদের স্ত্রীপুরুষ সকলেই সুদৰ্শন এবং গুণে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। একদা একটাকিয়ার রাজা মদন খাঁ তাহার দুই পুত্ৰ কন্দৰ্প ও কামদেবকে লইয়া হুসেন সাহের সঙ্গে দেখা করিতে আসেন, তাহদেব সুগঠিত গৌরদেহ এবং বিদ্যাবুদ্ধিতে কৃতিত্ব দেখিয়া তিনি মদন খাঁর নিকট ইহাদের সহিত র্তাহাব দুই কন্যার বিবাহের প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, “আমি আপনার দুই পুত্রের ধৰ্ম্ম নষ্ট করিব না, আপনি যদি গ্ৰহণ করেন আমার কন্যারা হিন্দু হইবে।” যাহা হইবার নহে, তাহা আর কি করিয়া হইবে ? মদন খার দুই পুত্ৰ বাদাসাহের কন্যা বিবাহ করিয়া অগত্যা মুসলমান ধৰ্ম্ম গ্ৰহণ করিলেন। ইহার পর বাদসহ মদন খাঁর রাজপ্রাসাদে উপস্থিত হইয়া তাহার পুত্র ও ভ্রাতুষ্পপুত্ৰ সৰ্ব্বসমেত ১১ জনকে ধরিয়া আনিয়া তঁহার বাড়ীর মেয়েদের সঙ্গে বিবাহ দেওয়াইলেন। মদনের চতুর্থ পুত্র রতিকান্ত ভিষিকৃদিগকে প্ৰচুব উৎকোচ দিয়া বলাইলেন যে তিনি রাত্রে চোখে দেখেন না, সুতরাং তিনি একটাকি যার বাজবংশের স্বতের সলিতাটির মত একাকী সেই পরিবারের গৌরব রক্ষা করিলেন । বাদসহ রতিকান্ত সম্বন্ধে বলিয়াছিলেন, “বুঝেছি বেহাই ! যে অন্ধ সে হিন্দু থাকুক, সাহার চক্ষু আছে তাহার মুসল- মান হওয়াই উচিত।” সন্ন্যাল মহাশয় লিখিয়াছেন—“ইহাব পর অনেক নবাব ও বাদসহ একটাকিয়ার যুবক ধরিয়া তৎসহ কন্যার বিবাহ দিয়াছিলেন।” ঘটকদের পুস্তক হইতে জানা যায়, “২৯ জন। একটাকিয়ার বংশধর মুসলমান রাজকুমারী বিবাহ করিয়া জাতিভ্ৰষ্ট হইয়াছিলেন ( ১০২ পৃঃ ) ||” ময়মনসিংহ গীতিকায় কালাপাহাড়ের যে বৃত্তান্ত পাওয়া যায় তাহা মুসলমানের লেখা, মুসলমান রাজদুহিতা যে কি অদ্ভুত কৌশলে ব্রাহ্মণযুবককে বিবাহ করিয়াছিলেন, তাহার বিস্তারিত অতিরঞ্জিত বৰ্ণনা এই গীতিকায় আছে { १ः ७8०-७8२) | ঘটক কাবিকাব্য ব্ৰাহ্মণবংশের আখ্যায়িকায় এইরূপ উল্লেখ কখনই কল্পনা সন্তত হই৩ে পারে না । তাহারা নিজেদের বংশাবলীতে এই কলঙ্কের ছাপ নিজেরা কেন দিতে যাইবেন % পারসীক, যবন (গ্ৰীক), শক, হুন প্রভৃতি বিদেশীয় জাতি বা হিন্দুসমাজের উচ্চ গণ্ডীতে স্থান পাইবার জন্য চিরদিন লালায়িত ছিলেন, তাহ পূৰ্ব্বে লিখিত হইয়াছে। কিন্তু