পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গের প্রাদেশিক ইতিহাসি-কাছাড় (হেরম্ব ) N) e AG) কাছাড়ীদের পূর্ব-যুগের ইতিহাসের কিছুই পাওয়া যায় না, প্ৰবাদ এই যে আদি কালে কাছাড় ত্রিপুরেশ্বরের অধিকৃত ছিল,-কিন্তু কাছাড়ী রাজার সহিত ত্রিপুর-রাজ স্বীয় কন্যার বিবাহ দিয়া ঐ রাজ্যের একচ্ছত্র অধিকার তিনি জামাতাকে যৌতুক স্বরূপ প্ৰদান করেন। ১৬০৩ খঃ অব্দে জয়ন্তীরাজ ধনমাণিককে পরাস্ত করিয়া কাছাড়া-রাজ শত্রুদমন “অরি-মৰ্দন” উপাধি গ্ৰহণ করেন, ধনমাণিকের মৃত্যুর পর কাছাড়-রাজ যুবরাজ যশোমাণিককে জয়ন্তীর অধিকার দান করেন। শত্রুদমনকে নায়ক করিয়া বাঙ্গলা “রণচণ্ডী” নামক উপন্যাস বহু পূর্বে বিরচিত হইয়াছিল। ইহার পরে মুসলমানদের সঙ্গে সংঘর্ষ আরম্ভ হয় ; প্ৰথম বার মুসলমানের পরাজিত হইয়াছিল, কিন্তু জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে বঙ্গেশ্বরের (কাসিম খা) সময় কাছাড়ীদের দুই প্ৰধান দুর্গ অসুরাতিকিরি ও প্রতাপগড় মুসলমানের দখল করে এবং রাজা প্ৰতাপসিংহকে এক লক্ষ টাকা, সম্রাটুকে ২০,০০০ টাকা, বঙ্গেশ্বরকে এবং থানাদার মুরাজি খাকে ২০,০০০ টাকা দিয়া সন্ধি করেন। ইহা ছাড়া তিনি ৪০টি হাতী সম্রাটুকে এবং ৫টি হাতী সুবেদারকে (বঙ্গেশ্বর) দিয়াছিলেন। প্ৰতাপনারায়ণ মাইবঙ্গ ছাড়িয়া কীৰ্ত্তিপুরে রাজধানী স্থাপন করেন। ১৬৪৪ খঃ অব্দে বীরদর্পনারায়ণের সঙ্গে অহম-রাজ চক্ৰধ্বজের মনোমালিন্য ঘটে, কিন্তু চক্ৰধ্বজ মুসলমানদিগকে পরাজয় করিয়াছেন শুনিয়া বীরদর্প তাড়াতাড়ি অহমদিগের আনুগত্য স্বীকার করিয়া সন্ধি করিয়া ফেলেন। একটি শঙ্খ পাওয়া গিয়াছে—তাহাতে কৃষ্ণের দশ অবতার চিত্রিত হইয়াছে এবং উহা ১৬৭১ খঃ অব্দে বীরদর্পনারায়ণের রাজত্ব কালে ক্ষোদিত হইয়াছিল-ইহা লিখিত আছে। ১৭০৬ খি ৪ অব্দে তাম্রধবাজ রাজা অহম-রাজ রুদ্রসিংহের সাৰ্ব্বভৌমত্ব অস্বীকার করেন, কিন্তু যুদ্ধে পরাস্ত হইয়া অহম-রাজ-দরবারে নীতি হন ; তথায় আনুগত্য স্বীকার করাতে রুদ্ৰসিংহ তাহাকে ক্ষমা করেন। কিন্তু গৃহে ফিরিবার পথে খাসপুরে পীড়িত হইয়া প্ৰাণত্যাগ করেন। মহারাজ রুদ্ৰসিংহ তাহার সুচিকিৎসার জন্য স্বীয় ভিষককে পাঠাইয়াছিলেন, কিন্তু সকল চেষ্টা ব্যর্থ হইল (১৭০৮ খ: )। তাম্রধ্বজের মৃত্যুর পর তৎপুত্র সুরদর্পনারায়ণ রাজ্য অধিকার করেন। তাহার রাজত্ব-কালে বাণেশ্বর বাচস্পতি নামক এক সুপণ্ডিত ব্ৰাহ্মণ কর্তৃক ‘নারদীয় পুরাণ” বিরচিত হয়। রাজমাতা চন্দ্ৰপ্ৰভার আদেশে এই গ্ৰন্থ রচিত হইয়াছিল। ১৭৩৬ খঃ অব্দে কীৰ্ত্তিচন্দ্রনারায়ণ অহম রাজ রাজেশ্বরের আনুগত্য স্বীকার না করাতে পুনরায় যুদ্ধ হয়, কিন্তু পুনরায় সন্ধি স্থাপিত হইল। ১৭৭১ খি ; অব্দে হরিশ্চন্দ্রনারায়ণ সিংহাসনে আরোহণ করিয়া অহম রাজের আনুকূল্য প্রাপ্ত হন। ১৭৯৭ খঃ অব্দে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এবং তাহার ভ্রাতা গোবিন্দচন্দ্র স্বর্ণ গাভী নিৰ্ম্মণপূর্বক তৎগর্ভ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া ব্রাত্য দোষ দূর করিয়া বিশুদ্ধ ক্ষত্ৰিয়রূপে গণ্য হন। গাভীর অংশগুলি ব্ৰাহ্মণের অবশ্য গ্ৰহণ করিয়াছিলেন। কৃষ্ণচন্দ্ৰ। ১৮১০ খষ্টাব্দে প্ৰাণত্যাগ করেন-গোবিন্দচন্দ্র রাজা হন। এই রাজাকে নানা বিপদের সম্মুখীন হইতে হইয়াছিল। কোহিদান নামক রাজার এক গোলাম দল পাকাইয়া রাজ্যের উত্তরাংশ অধিকার করে। রাজা তাহাকে নিহত করেন, কিন্তু তৎপুত্ৰ তুলারাম রাজ্যের উত্তরাংশ দখল করিয়া বসে। মণিপুরের রাজা মারজিৎ সিংহ এই সময়ে কাছাড় আক্রমণ করেন।