পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Seyy বৃহৎ বঙ্গ ( 'কোচবিহার’ ), যে উক্ত রাজার নফর। চাকরেরা পৰ্য্যন্ত সংস্কৃতে কথাবাৰ্ত্ত কহিত । হিন্দুরাজত্বে সংস্কৃতের চর্চা যে অত্যাধিক হইয়াছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। ইংরেজাধিকারে মাদ্রাজি আয় ও চাকরেরাও ইংরেজীতে কথা কহিয়া থাকে। মহারাজ গৌড়গোবিন্দ যাদু-বিদ্যায় কৃতী ছিলেন, বলিয়া প্ৰসিদ্ধি আছে। রাজা বীরপুরুষ ছিলেন, তিনি “শব্দভেদী” বাণ সন্ধান করিতে জানিতেন। এই শব্দভেদী বাণ যে কিরূপ এবং তাহাতে হিন্দুবা যে কিরূপ কৃতিত্ব লাভ করিতেন, তাহার দৃষ্টান্ত ১৬২-৬৩ পৃষ্ঠায় দ্রষ্টব্য। এই রাজার সম্বন্ধে প্রাসঙ্গিক ভাবে আর একটি ঐতিহাসিক তত্ত্ব পাওয়া যায়, তাহা দত্ত-বংশের বংশাবলী হইতে গৃহীত হইল। একদা রাজার উদরে সাংঘাতিক বেদনা অনুভূত হয়,-দেশীয় ভিষকেরা তাহার কোন উপকার করিতে পারেন নাই। তখন বঙ্গদেশের ভিষক-কুল-চুড়ামণি চক্রদত্ত জীবিত ছিলেন, তাহার যশ ভারতবিশ্রুত। রাজা তাহার জন্য দূত পঠাইয়া দেন, কিন্তু চক্রদত্ত তখন অতিবৃদ্ধতিনি গঙ্গাতীর ছাড়িয়া শ্ৰীহট্টে যাইতে স্বীকৃত হইলেন না। এই সংবাদে রাজ্ঞী অত্যন্ত কাতরা হইয়া তাহার অঙ্গ হইতে সমস্ত অলঙ্কার খুলিয়া সেই বহুমূল্য পেটকাট সহ পুনরায় দূতকে ভিষকবরের নিকট এই বলিয়া পঠাইয়া দিলেন, “আমি আপনার কন্যা-স্বরূপা, আমার স্বামি-বিয়োগ হইলে এ সকল গহনা দিয়া কি করিব ? আপনিই এগুলি রাখিবেন, নতুবা জলে বিসর্জন দিবেন।--আর বিধবা হইলে আমি সহমৃতা হইব, সুতরাং আপনি নারী-বধের জন্য দায়ী হইবেন, কারণ হয়ত আপনার দ্বারা রাজার ও আপনার দুঃখিনী কন্যার জীবন রক্ষা হইতে পারে।” ধৰ্ম্মভীরু চক্ৰপাণি এই সকান্তর প্রার্থনা উপেক্ষা করিতে পারিলেন না। রাজা তাহার সুচিকিৎসায় আরোগ্য লাভ করিলেন। রাজা তঁহাকে বিশাল ভূমিখণ্ড প্ৰদান করিলেন। কিন্তু তিনি গঙ্গাতীর ছাড়িয়া কিছুতেই এদেশে থাকিতে সম্মত হইলেন না। র্তাহার ভ্ৰাত ভানুদস্তুকে সেই সম্পত্তির অধিকারী করিয়া চলিয়া গেলেন । মহারাজ গৌড়গোবিন্দ নিরাময় হইয়াও জীবনে আর সুখী হইতে পারিলেন না। গো-হত্যার অপরাধে তিনি শ্ৰীহট্টে টুলটিকব-বাসী বুরহান উদ্দীন এবং কাজি নুরুদ্দীনকে ভীষণ ভাবে দণ্ডিত করিয়াছিলেন ; এই দণ্ডের সঙ্গে অপরাপর স্থানের হিন্দু রাজাদের গোহত্যিাপরাধে মুসলমান-নিগ্রহের সাদৃশ্য আছে। কিন্তু হিন্দু মুসলমানেৰ ঝগড়া এখন পৰ্য্যন্তও গোহিত্যা লইয়া চলিতেছে, সুরতাং একইরূপ ব্যাপার যে একাধিক স্থানে অনুষ্ঠিত হয় নাই, তাহা প্ৰমাণাভাবে ঠিক করিয়া বলা যায় না। এইরূপে দণ্ডিত ব্যক্তিদ্বয় বঙ্গেশ্বরের শরণাপন্ন হন। আলাউদ্দিন । ফিরোজ সাহ স্বীয় ভাগিনেয়। সেকেন্দারকে গৌড়গোবিন্দের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন ; যাদুবিদ্যা-প্রভাবে সেকেন্দর দুইবারই হিন্দু রাজার নিকট পরাভূত হন। তোযারিখে জালালি নামক পুস্তকে এই যুদ্ধেৰ বিবরণ প্রদত্ত হইয়াছে। প্ৰথম যুদ্ধে হারিয়া গিয়া সেকেন্দর দ্বিতীয়বার খুব সমারোহ করিয়া বিশাল সৈন্য সঙ্গে গৌড়গোবিন্দের বিরুদ্ধে মুসলমান-বিজয়।