পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গের প্রাদেশিক ইতিহাস-মেদিনীপুর Σ Σ ο Σ ইহারা ছাড়া তাও-লিন, তাং চেং তেং, হুইলুন, উহিং চেংকন, চাংমিন প্রভৃতি বহু সংখ্যক চীন-পৰ্য্যটক তাম্রলিপ্তের বন্দরে আসিয়া ভারতবর্ষে পদাৰ্পণ করিয়াছিলেন । এই সমস্ত পৰ্যটক তাম্রলিপ্তের সমৃদ্ধির যে বিবরণ দিয়াছেন, তাহাতে এই দেশের তত্তৎকালের বাণিজ্যের প্রসার এবং সমস্ত বিষয়ে গৌরবের কথা উজ্জ্বল অক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে। যদিও অশোকের পরে কলিঙ্গ ও তদন্তৰ্গত তাম্রলিপ্ত স্বাধীনতা হারাইয়া সামন্তরাজ্যে পরিণত হয়, তথাপি এই প্ৰদেশ তখনও প্ৰবল পরাক্রান্ত ছিল । ১০২৫ খৃঃ অব্দে রাজেন্দ্ৰচোল তাম্রলিপ্ত ও তৎসন্নিহিত স্থানগুলির অধিপতি ধৰ্ম্মপালকে (দণ্ডভুক্তির অধীশ্বর) জয় করিয়াছিলেন বলিয়া তিরুমালয়ের শিলা-লিপিতে ঘোষণা করিয়াছেন । রামপাল একাদশ শতাব্দীতে যে সমান্ত-চক্র রচনা করিয়াছিলেন, তন্মধ্যে কোটাটবঁীর বীরগুণ, দণ্ডভুক্তির জয়সিংহ ও অপাবমন্দারের অধিপতির উল্লেখ আছে ; ইহাদের তিন জনই যে উড়িষ্যার রাজা তাহাতে সন্দেহ নাই। দণ্ডভুক্তি মেদিনীপুর জেলার দাতন ও তৎসন্নিহিত স্থানগুলি, অপারমন্দারের বর্তমান নাম মান্দারণ। খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দীতে কর্ণগড়ের রাজা কর্ণসেন-ধৰ্ম্মপাল রাজার শ্যালিকা রঞ্জাবতীর স্বামী ছিলেন এবং তঁহার পুত্র শ্রুতকীৰ্ত্তি লাউসেন বা লবসেন ধৰ্ম্মমঙ্গল-কাব্যের নায়ক । লাউসেন, কঁাউর-( কামরূপের) অধিপতি এবং হরিপাল প্রভৃতি রাজাদিগকে পরাজয় করিয়া “অজেয় ঢেকুরের” অধিপতি সোমঘোষের পুত্র ইছাই ঘোষকে নিহত করেন। খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দীর শেষভাগ হইতে ষোড়শ শতাব্দীর আদিসময় পৰ্য্যন্ত প্ৰায় ৫০০ শত বৎসর কাল গঙ্গাবংশীয় রাজারা উড়িষ্যা শাসন করিয়াছিলেন, ইহারা বাঙ্গালী ছিলেন এবং ইহাদের আদি পুরুষ অনন্তবৰ্ম্মা গাঙ্গারাঢ়ী (গঙ্গা সন্নিহিত তমলুক ও মেদিনীপুরের ) রাজা ছিলেন । তিনি সমস্ত উড়িষ্যা বিজয় করিয়াছিলেন। খৃঃ ত্ৰয়োদশ শতাব্দীতেও বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ তাম্রলিপ্ত হইতে পেগুতে যাতায়াত করিতেন। পেগুর কল্যাণ-গ্ৰামে প্রাপ্ত তাম্রশাসন হইতে ইহা জানা যাইতেছে, এবং ১০০১ খৃঃ অব্দে তাম্রলিপ্তের জনৈক রাজা তাম্রলিপ্ত হইতে চীন দেশে দূত প্রেরণ করিয়াছিলেন, এ কথা Sfifts atta (lianilton's East linda Gazetteer, Vol. I, p. (582) সুতরাং এই মেদিনীপুর ও তদন্তৰ্গত তমলুক সৰ্ব্ব-ভারত-প্ৰসিদ্ধ এবং বাঙ্গালীর বিশেষ গৌরবের রাজ্য । ১৮৮১ খৃঃ অব্দে রূপনারায়ণের খাদে উইলসন সাহেব ( মেদিনীপুরের ম্যাজিষ্ট্রেট) কতকগুলি মুদ্রা প্ৰাপ্ত হন। উহা সচ্ছিদ্র এবং কোন রাজার নাম বা অঙ্ক তাহাতে নাই, কোন কোনটিতে পশুপাখীদের মূৰ্ত্তি অঙ্কিত। তমলুকের আদিম পরাক্রান্ত রাজাদের সময় খৃঃ পূঃ চতুর্থ কি পঞ্চম শতাব্দীদে ঐ মুদ্রগুলি নিৰ্মিত হইয়াছিল বলিয়া পণ্ডিতেরা অনুমান করিয়াছেন । সম্ভবতঃ এই রাজাদের কাহারও সঙ্গে অশোকের ইতিহাস-বিশ্রাত ংঘর্ষ হইয়াছিল। দীনবন্ধু মিত্র ১৮৬৭ খৃঃ অব্দে কতকগুলি “পুরাণ” নামক মুদ্র তমলুকে পাইয়াছিলেন। এই পুরাণ মুদ্রা বহু প্ৰাচীন। ১৮৮২ খৃঃ অব্দে তমলুকে কণিক্ষের মুদ্রা পাওয়া গিয়াছে, ইহা ছাড়া কুমারগুপ্ত, স্কন্দগুপ্ত প্ৰভৃতি কোন কোন গুপ্ত-রাজষ্ঠের মুদ্রা তমলুক ও মেদিনীপুরের অন্যান্য স্থানে আবিষ্কৃত হইয়াছে। এই সকল মুদ্রা দেখিলে তমলুকের