পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গের প্রাদেশিক ইতিহাস-মেদিনীপুর У У evО চৈতন্যদেব পদব্ৰজে দশ ক্রোশ ব্যাপক এক সুবৃহৎ জঙ্গল অতিক্রম করিয়াছিলেন এবং প্ৰায় এক শতাব্দী পরেও শ্ৰীনিবাস আচাৰ্য্য, নরোত্তম ঠাকুর এবং শুষ্ঠামানন্দ এই জঙ্গল পাড়ি দিয়া বন-বিষ্ণুপুরের দিকে অগ্রসর হইয়াছিলেন। এককালে এই জনপদ দক্ষ্যি-তস্করের আবাসভূমি ছিল এবং ক্ষুদ্র-বৃহৎ দুৰ্গ আশ্রয় করিয়া অনেক রাজবংশই এই প্ৰদেশ শাসন করিয়া গিয়াছেন। আমরা এস্থানে সংক্ষেপে ঠাহীদের কয়েকটির উল্লেখ করিয়া যাইব । কেহ কেহ অনুমান করেন, তাম্রলিপ্তেব বরাহ-মন্দিরটি বোম্বাই প্রেসিডেন্সীর কালাড়গি জেলায় চালুক্য বংশীয় দ্বিতীয় পুলকেশীর বংশীয় কোন রাজা কর্তৃক নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। পুলকেশী ষষ্ঠ শতাব্দীতে কলিঙ্গের কতকাংশ জয় করিয়াছিলেন, সম্ভবতঃ কতক কালের জন্য তাহার বংশধরেরা মেদিনীপুর ও তমলুকে রাজত্ব করিয়াছিলেন। বিষ্ণুপুরাণে তমলুকের রাজা দেব-রক্ষিতের নাম পাওয়া যায়। যদি ঐ পুরাণ খৃষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে রচিত হইয়া থাকে, তবে দেবরক্ষিত ঐ সময়ে রাজা ছিলেন । তাহার সম্বন্ধে আর কিছু জানা যায় নাই। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সংগৃহীত রামচন্দ্ৰ নামক জনৈক কবি-রচিত একখানি পুরাতন সংস্কৃত পুথিতে (ত্রিয়োদশ শতাব্দী) দেখা যায়, তখন তাম্রলিপ্তের রাজা গোপীচন্দ্র ছিলেন, ইনি ছক্ৰেশ্বরী মন্দিরে এক ব্ৰাহ্মণের শিরচ্ছেদ করেন এবং শেষে অনুতপ্ত হইয়া গঙ্গাসাগরে আত্মবিসর্জনপূর্বক প্ৰায়শ্চিত্ত করেন। রাজার মৃত্যুর পর কৈবৰ্ত্ত জাতীয় কাকর দেশের রাজা (সম্ভবতঃ কালুভূঞা ) রাজধানী তিন দিবস নিৰ্কিৰাচারে লুণ্ঠন করিয়া শেষে রাজা হন । এই রাজার বংশের তালিকায় তাম্রধবজের বংশের সঙ্গে অপিচ গোপীচন্দ্র ও দেবরক্ষিতের সঙ্গে বংশলতি জড়িত করার চেষ্টা হইয়াছে। কিন্তু মেদিনীপুরের ইতিহাস-লেখক যোগেশচন্দ্ৰ বসু মহাশয় নানা কারণে ঐ রূপ বংশাবলী বিশ্বাস করিতে প্ৰস্তুত নহেন ( ১০২-১০৩ পৃঃ)। ময়ুর ধ্বজ, তাম্রধ্বজ (, জৈমিনীয় ভারতোক্ত ), হংসধবজ, গরুড়ধ্বজ, বিদ্যাধর রায় প্রভৃতি ৩৬ জন নৃপতির নাম এই তালিকায় আছে, তারপর কালুভুঞার নাম। কিন্তু সময়ের অসামঞ্জস্যের দরুন উক্ত হইয়াছে যে দেবরক্ষিত, গোপীচন্দ্ৰ প্ৰভৃতি অনেক রাজার নাম তালিকা হইতে বাদ দেওয়া হইয়াছে। মহাভারতের নাম দেখিলেই আমাদের একটু দ্বিধার ভাব হওয়া স্বাভাবিক । বাঙ্গলা এমন কি সমগ্ৰ আৰ্য্যাবর্তেরও বহু সংখ্যক রাজবংশের আদিপুরুষ চন্দ্ৰ-সূৰ্য বংশ হইতে উদ্ভূত হইয়াছেন, এরূপ জনশ্রুতিও অনেক বংশাবলীতে বিবৃত হইয়াছে, রাজ-বংশাবলী লেখকদের এই স্বভাব কিছু নূতন নহে। গোপীচন্দ্রকে ক্ষত্ৰিয় বলিয়া উল্লেখ করা হইসাছে ; কালুভূঞা কৈবৰ্ত্ত। ময়ুরধবজ, তাম্রধবাজ হইতে নিঃশঙ্ক-নারায়ণ রায়-বংশলতায় উক্ত ৩৬টি রাজার প্রত্যেকের নাম বিশুদ্ধ-সংস্কৃতাত্মক, তাহাতে বেশ একটা পাণ্ডিত্যের পরিচয় আছে—কিন্তু তারপরই নামের নমুনা এইরূপ কালুভূঞা, ধাঙ্গড়ভূঞা, মুরারিভুঞাঁ, হারবারভূঞা ও ভাঙ্গড়ভুঞা। ভাঙ্গড়ভুঞার মৃত্যু হয় ১৪০৩ খৃঃ অব্দে। সুতরাং কালুভুঞার সময় ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে ধরা যাইতে পারে।