পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গের প্রাদেশিক ইতিহাস-সুন্দরবন d Y RA মুনির আশ্রম ও গঙ্গাসাগর-সঙ্গম তীর্থরূপে এই প্ৰদেশ প্ৰসিদ্ধ ছিল ; বর্তমান সময়ে ইহা ২৪-পরগনা জেলার অন্তৰ্গত। এখানে ডায়মণ্ড হারবার মহকুমার অন্তভুক্ত মথুরাপুর থানার অধীন ২৬ নম্বর লাট, কঙ্কণ-দীঘির পশ্চিমে, রায়দীঘি নদীর পশ্চিমতীরে, ভাটার সময়ে প্ৰায় ১৮ ফুট মাটির নিম্নে মৌৰ্য্যযুগের ইষ্টকেব। ন্যায় খুব বড় বড় ইষ্টকনিৰ্ম্মিত প্ৰাচীন গৃহেব ভিত্তি এখনও দেখিতে পাওয়া যায়। নদীতে কঙ্কণ-দীঘির কিয়দংশ ভাঙ্গিয়া যাওয়ায় ঐ রূপ ভিত্তির ধ্বংসাবশেষ বাহির হইয়া পড়িয়াছে। সুন্দরবনের অন্যান্য অংশেও ভূগর্ভে এইরূপ প্রাচীন গৃহাদির ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হইয়াছে। ভূমি-নিমজ্জনের জন্যই যে ঐ সকল প্ৰাচীন গৃহাদির ধ্বংসাবশেষ ঐ রূপে ভূগর্ভে নিহিত হইয়াছে সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। কখনও এতদঞ্চলে বৈজ্ঞানিক প্ৰণালীতে খনন আরম্ভ হইলে হয়তো ঐ সকল পুরাকীৰ্ত্তির নিদর্শন আবিষ্কৃত হইযা সুন্দরবনের গভীর অন্ধকারাচ্ছন্ন অতীত ইতিহাসের উপর আলোকপাত করিতে পারে । পৌরাণিক গ্রন্থে সুন্দরবন প্ৰাচীন গ্ৰন্থাদির মধ্যে রামায়ণেই সর্বপ্রথম গঙ্গাসাগর-সঙ্গমের উৎপত্তির কথা বর্ণিত আছে। কিন্তু উহাতে “রসাতল” নামে নিম্নবঙ্গের উল্লেখ ব্যতীত অন্য কোনরূপ পরিচয় নাই ( রামায়ণ, বালকাণ্ড, ত্ৰিচত্বারিংশ সৰ্গ ) । রামায়ণের পরে নিমবঙ্গের পরিচয় আমরা সর্বপ্রথম মহাভারতে প্ৰাপ্ত হই। উহাতে দেখা যায় যে তৎকালে নিমবঙ্গে ভাগীরথী নদী বহুসংখ্যক শাখায় বিভক্ত ছিল । অৰ্জ্জুন তীর্থযাত্রায় বহির্গত হইয়া গঙ্গাসাগর-সঙ্গমে আসিয়া ঐ সকল নদীর মধ্যে অবগাহন করত। কলিঙ্গ দেশান্তৰ্গত বৈতরণী-তীর্থভিমুখে গিয়াছিলেন ( মহাভারত, বনপৰ্ব্ব, ১১৪ অঃ ) { মহাভারত ব্যতীত অনেকগুলি পুরাণেও গঙ্গাসাগর-সঙ্গম তীর্থের কথা দেখিতে পাওয়া যায়। পদ্মপুরাণে লিখিত আছে যে উক্ত তীর্থক্ষেত্রে এক বিস্তৃত জনপদ ছিল এবং সুষেণ নামক একজন চন্দ্ৰবংশীয় রাজা তথায় রাজত্ব করিতেন । তঁহার সভায় আগত প্লক্ষদ্বীপস্থ দীপান্তী নগরীর রাজা গুণাকরের কন্যা ও তালব্ধবাজ নগরের রাজপুত্র মাধবের পত্নী সুলোচনা পুরুষবেশে বীরবার নাম ধারণ করিয়া ভীমনাদ নামে এক গণ্ডার বধ করিয়াছিলেন (পদ্মপুরাণ, ক্রিয়াযোগসার, ৫ অঃ)। ইহাতে বুঝা যায় যে পদ্মপুরাণে উল্লিখিত গঙ্গাসাগরসঙ্গম সুন্দরবনেই ছিল এবং তথায় উক্ত পুরাণ রচনাকালে অরণ্য ও জনপদ উভয়ই বর্তমান ছিল । ঐতিহাসিক যুগে সুন্দরবন পূর্বে উল্লিখিত হইয়াছে যে এ পৰ্যন্ত ঐতিহাসিক যুগের ৰে সমস্ত কীৰ্ত্তি-নিদর্শন সুন্দরবনে পাওয়া গিয়াছে সেগুলি সমস্তই গুপ্ত, পাল ও সেন-রাজত্বকালের। তৎপূর্ববৰ্ত্তী