পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গের প্রাদেশিক ইতিহাস-সুন্দরবন SSVOS চৈতন্যভাগবতে দেখা যায় যে, এই পাঠান রাজত্বকালের শেষভাগে, হুসেন সাহের শাসনসময়ে বৰ্ত্তমান ২৪-পরগনা জেলার ডায়মণ্ড হারবার মহকুমার অন্তৰ্গত মথুরাপুর থানার অধীন ছত্ৰভোগ পৰ্য্যন্ত স্থানে মনুষ্যাবাস ছিল, এবং উহার দক্ষিণ প্ৰদেশ অরণ্যাবৃত হইয়া পড়িয়াছিল। সে সময়ে ছত্ৰভোগ একটি প্ৰধান বন্দরীরূপে প্ৰসিদ্ধ ছিল এবং রামচন্দ্ৰ খ্যা নামক হুসেন সাহের একজন কৰ্ম্মচারী তৎকালে সমগ্ৰ দক্ষিণদেশ শাসন করিতেন (চৈতন্যভাগবত, শ্ৰীঅতুলকৃষ্ণ গোস্বামী সম্পাদিত, ২য় সংস্করণ, পৃঃ ৩৮৩-২৮৫)। এই রামচন্দ্র খ্যা কে ছিলেন, তাহা আজিও নির্ণীত হয় নাই। ঐ সময়ে ছত্রভোগের ১২১৩ ক্রোশ উত্তরপূর্ব দিকে মাহীনগর নামক স্থানে পুরন্দর খা নামক হুসেন সাহের জনৈক হিন্দু অমাত্য বাস করিতেন। তঁহার বংশে অনেকের খা উপাধি ছিল । উক্ত রামচন্দ্ৰ খা৷ এই বংশের কেহ হওয়াই সম্ভব । ভাগবতের অনুবাদক প্ৰসিদ্ধ মালাধর বসু বা গুণরাজ খাও এই বংশীয় । ইহাদের বংশধরগণই অধুনা বঙ্গদেশে মাহীনগরের বসু নামে প্ৰসিদ্ধ। এই মহী-( বা মাহী ) নগর প্রাচীনকালে ভাগীরথী নদীর উপর একটি সমৃদ্ধ স্থান ছিল। মুকুন্দরামের চণ্ডীকাব্য ও বিপ্ৰদাস চক্ৰবৰ্ত্তীর মনসার ভাসান প্ৰভৃতি পুরাতন পুস্তকে এই স্থানের নাম দেখিতে পাওয়া যায়। প্ৰবাদ, উক্ত বসুবংশীয় কায়স্থগণের পূর্বপুরুষ মহীপতি বসুর নাম হইতে এই স্থানের নাম মহানগর হইয়াছিল। এখানে দক্ষিণ-রাঢ়ীয় কায়স্থ-সমাজের তিনবার একজই হওয়ায় ইহা প্ৰাচীনকালে সামাজিকগণের নিকটও খুব প্ৰসিদ্ধ ছিল ( কায়স্থপত্রিকা, জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৫, পুরন্দর র্থ ও মাহীনগর সমাজ, শ্ৰীনগেন্দ্ৰনাথ বসু), এবং কুলীনগ্রাম নামেও অভিহিত হইত। জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গলে কুলীনগ্রামের অবস্থানের যেরূপ পরিচয় লিখিত আছে, তাহা হইতেও এই স্থানটি ঐ নামে প্ৰসিদ্ধ ছিল বলিয়া বুঝা যায়। ঐ পুস্তক অনুসারে চৈতন্যদেব শান্তিপুর হইতে অম্বুয়ায় গিয়াছিলেন এবং তথা হইতে গঙ্গার বামতীর অবলম্বনে কাচমনি বেতড় (বৰ্ত্তমান হাওড়া জেলার অন্তৰ্গত বেণ্ঠর ) দক্ষিণে রাখিয়া উক্ত কুলীনগ্রামে উপস্থিত হইয়াছিলেন (, চৈতন্যমঙ্গল, পরিষদ-গ্ৰন্থাবলী-৭, পৃষ্ঠা ৯৫ ) । মাহীনগরের এই বসুবংশীয়গণ বৈষ্ণবধৰ্ম্মে বিশেষ আস্থাবান ছিলেন। ইহাদের মধ্যে বসু রামানন্দের নামও বৈষ্ণবসমাজে সুপরিচিত। শ্ৰীচৈতন্যদেব পুরীতে র্তাহাকে জগন্নাথের পট্টডুরীর যজমান করিয়াছিলেন (চৈতন্যচরিতামৃত, মধ্যলীলা, ১৪ পরিচ্ছেদ ) । গুণরাজ খাকৃত ভাগবতের বঙ্গানুবাদের জন্যও এই কুলীনগ্রামকে মহাপ্ৰভু খুবই মেহের চক্ষে দেখিতেন। কুলীনগ্রাম-বাসিগণের জগন্নাথের পট্টডুৱী লইয়া যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি যাহা বলিয়াছিলেন তাহা এই :- “ কুলীনগ্রামেরে কহে সন্মান করিঞা । প্ৰত্যব্দ আসিবে যাত্রার পট্টডুরী লঞা ৷ গুণরাজ খাঁ কৈল শ্ৰীকৃষ্ণ-বিজয়। নন্দের নন্দন কৃষ্ণ মোরা প্ৰাণনাথ । এই বাক্যে বিকাইনু তার বংশের হাত ৷