পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গের প্রাদেশিক ইতিহাস-অন্যান্য রাজা ও জমিদারগণ Yè 90st এবং আড়ম্বরহীন-ভাবে নিভৃতে প্ৰায়শ্চিত্ত করিয়াছিলেন। তিনি জমিদারীর আয় বৃদ্ধি করিয়াছিলেন এবং লক্ষ লক্ষ টাকা দান করিয়া গিয়াছেন। ১৬ বৎসর বয়সে রাজ্যভার গ্ৰহণ করিয়া ৩৮ বৎসর বয়স পৰ্য্যন্ত তিনি সুশাসন করিয়াছিলেন। ১৮৭৫ খৃঃ অব্দে তিনি গবর্নমেণ্ট কর্তৃক “রাণী” উপাধি প্রদত্ত হন এবং ১৮৮৭ খৃঃ অব্দে পরলোকগমন করেন। তাহার বিধবা পুত্ৰবধু হেমন্তকুমারী এখন রাণী—তিনিও অনেক দান করিয়া যশস্বিনী হইয়াছেন। নাটোৱে-বাবেীন্দ্র-কুলীন সুষেণ এই রাজবংশের আদি পুরুষ। ইহার এক সুদূর বংশধর কামদেব মৈত্র পুটিয়ার রাজা নরনারায়ণ রায়ের জমিদারীতে কাজ করিতেন। এই কামদেবের পুত্র রঘুনন্দন একজন কৃতী পুরুষ ছিলেন। তিনি মুসিঁদকুলি খাঁর প্রতিভাজন হইয়া বিপুল সম্পত্তি অর্জন করেন । কামদেবের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা রামজীবন ‘মহারাজা” উপাধি প্ৰাপ্ত হন। ১৭৩০ খৃঃ অব্দে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন। ইহার পুত্ৰ মহারাজ রামকান্তের মৃত্যুর পর রাণী ভবানী রাজ্যশাসন করেন। ইহার পবিত্র জীবন ও দানশীলতা বঙ্গদেশে প্রবাদবাক্যের ন্যায় হইয়া আছে। ইনি ১৭৪৬ খৃষ্টাব্দ হইতে ১৮০৩ খৃষ্টাব্দ পৰ্যন্ত রাজ্যশাসন করেন। ইনি অহল্যাবাই-এর মতই কাশী প্ৰভৃতি তীৰ্থস্থানে বহু মঠ-মন্দিরাদি স্থাপন করিয়াছিলেন। তঁহার জমীদারীর আয় এত প্ৰভূত ছিল যে তঁহাকে লোকে “অৰ্দ্ধবঙ্গের অধিকারিণী” বলিত। ১৭৭০ খৃঃ অব্দের (ছিয়াত্তরের ) মন্বন্তরে তিনি যেরূপ মুক্তহস্তে ব্যয় করিয়াছিলেন, তাহ গল্পের মত শুনায়। র্তাহার পুত্র মহারাজ রামকৃষ্ণ সমস্ত সম্পত্তি ও বিষয় অনর্থের মূল মনে করিয়া বাহ্য বৈভবের প্রতি যে ঔদাসিন্য দেখাইয়াছিলেন, তাহাতে সে বৈভব নিঃশেষ হইয়া গেল। তিনি উত্তরসাধক ভোলাকে লইয়া তান্ত্রিক অনুষ্ঠানে ব্যাপৃত থাকিতেন, এবং ভারতীয় সাধুদের পঙক্তিতে স্থান পাইয়াছিলেন। তঁহার রচিত গানগুলি ভক্তি ও প্ৰেমে ভরপুর । “আমার মন যদি রে ভুলে, তবে বালির শয্যায় কালীর নাম রেখা কৰ্ণমূলে-আমায় এনে দে ভোলা জপের মালা ভাসাই গঙ্গাজলো” প্ৰভৃতি গান শ্রীতির অমৃত, বিষয়-রোগ-নিরাময়ের ভেষজ। রামকৃষ্ণের পর মহারাজ বিশ্বনাথ রায়, মহারাজ গোবিন্দচন্দ্র রায়, মহারাজ গোবিন্দনাথ রায়, মহারাজ জগদিন্দ্ৰনাথ রায় রাজপদ লাভ করেন। এখন জগদিন্দ্রনাথের পুত্র কৃতবিদ্য, মহাবৈষ্ণব মহারাজ যোগীন্দ্রনাথ রায় সিংহাসনে অভিষিক্ত আছেন । ছোটতরফে শিবনাথ রায়, আনন্দনাথ রায়, চন্দ্ৰনাথ রায়, যোগেন্দ্ৰনাথ রায় ক্রমান্বয়ে রাজা হন । রাজা যোগেন্দ্ৰনাথ ১৯০১ খৃঃ অব্দে পরলোকগমন করেন। কাশিমবাজার-কালীপদ নন্দীর পুত্র রাধাকৃষ্ণ নন্দী-তৎপুত্ৰ কৃষ্ণকান্ত নন্দীই ( কান্তবাবু) এই রাজবংশের গৌরব-ভিত্তি। হেষ্টিংসের প্রসাদে ইনি অতুল বৈভবের অধিকারী হন। ১৭৯৩ খৃষ্টাব্দে ইনি পরলোকে গমন করেন। ১৭৮৮ খৃঃ অব্দে কান্তবাবুর পুত্ৰ লোকনাথ নদী রাজা” উপাধি প্ৰাপ্ত হন। তৎপরে হরিনাথ নদী ( ১৭৯৮-১৮৩৬ খৃঃ), এবং শেষে তৎপুত্র কৃষ্ণনাথ নন্দী রাজা হন। কোন ভৃত্যকে খুন করার অপরাধে ইহার উপর ওয়ারেন্ট জারি হয়, সেই অপমানে ইনি বিষ ভক্ষণ করিয়া প্ৰাণত্যাগ করেন । ইহার বিধবা পত্নী মহারাণী স্বর্ণময়ীর দানের যশ বঙ্গের সর্বত্র বিদিত। কথিত আছে, এই পুণ্যশীলা