পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গের প্রাদেশিক ইতিহাস-অন্যান্য রাজা ও জমিদারগণ Syve আব্দুল, চকদীঘি, নড়াইল, কাকিনা, তাজহাট, চন্দ্ৰৰীপ, নশীপুর, নাড়াজোল, শিয়ারশোল, পাইকপাড়া, ভূকৈলাস, পাথুরিয়াঘাটা, লালগোলা, রোয়াইল, তেওতা প্ৰভৃতি কয়েকটির নাম মাত্র উল্লেখ করিয়া ক্ষান্ত হইলাম। কলিকাতার ঠাকুর-পরিবারে রাজা-মহারাজার অভাব নাই, কিন্তু জড় ঐশ্বৰ্য্য ছাপাইয়া উঠিয়াছে তাহদের মধ্যে কাহারও কাহারও প্ৰতিভার বিশ্বোজল খ্যাতি । এই হতভাগ্য দেশের হতশ্ৰী রাজ-বৈভবের ক্রম-বিলীয়মান শেষ দৃশ্য আর দেখাইতে ইচ্ছা হয় না। স্বর্ণকিরীটিনী বঙ্গভূমির শ্রুতির কুণ্ডলে আর সে মণিদু্যতি নাই। আমরা জড় ঐশ্বৰ্য্যের চিন্তা-শয্যার দৃশ্য আর উদঘাটিত করিব না। সে দিন গিয়াছে, যখন কোন তরুণ রাজার গুস্ফোদগম উপলক্ষে রাজভাণ্ডার মুক্ত করিয়া রাজমাতা কোটী কোটী টাকা ব্ৰাহ্মণদিগকে দান করিয়াছিলেন । ভারতে সে সকল কথা স্বপ্নের মত মনে হয়, কিন্তু ষোড়শ শতাব্দীতেও তাহিরপুরের রাজা কংসনারায়ণ দুর্গোৎসব উপলক্ষে তখনকার দিনের সাড়ে আট লক্ষ টাকা ব্যয় করিয়াছিলেন এবং অষ্টাদশ শতাব্দীতেও বঙ্গের একজন জমিদার ১৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করিয়া তাহার একটি প্রাসাদ নিৰ্ম্মাণ করাইয়াছিলেন,- সে দিনও গিয়াছে। কিন্তু আমাদের খেদ করিবার কারণ নাই ; বঙ্গদেশ হইতে চৈতন্যদেবের খোল, কৰ্ত্তাল ও মন্দিরা বাজিয়া উঠিতেছে-তােহা কোকিল-কুজনের ন্যায় সমস্ত জগতে মোহ ঢালিয়া দিতেছে ; রবীন্দ্রনাথের গীতি বিশ্বকে মাতাইতেছে, সমগ্ৰ জগৎ বিস্মিতনেত্ৰে উদয়শঙ্করের নৃত্য দেখিতেছে। গগনেন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথের চিত্রের ললাম-বর্ণ-মাধুরীতে পৃথিবী আকৃষ্ট হইতেছে ; পরমহংস দেবের সর্ব-ধৰ্ম্ম-সমন্বয়ের তত্ত্ব জগৎবাসী কাণ পাতিয়া শুনিতেছে। আত্মার জয়ই জয় । সেই জয়-কিরীটি যদি বাঙ্গালীর থাকে, তবে “ভাঙ্গা কুঁড়ে ঘর, তাল পাতার ছাউনি” লইয়াও আমরা গৰ্ব্ব করিতে পারিব ; প্ৰাভাতিক নহবৎ বাদ্যের ভয়রো ও ললিত রাগিণীর সুরে না হয় আমাদের ঘুম আর নাই ভাঙ্গিল, এবং নহবতে সান্ধ্য-পূৱবী রাগিণীর সুর না হয় আমাদের শ্ৰম-সমাপ্তির কথা আর নাই জানাইল। আমাদের কুটীরপাশ্বে আমবাটিকায় কোকিল-কুজন থামিবে না, নীলাকাশে ‘বউ-কথা-কও’ ও ‘চোখ-গোল-রে’ আমাদের কর্ণ তৃপ্ত করিয়া মোটর গাড়ী ও এরোপ্লেনের অভাবের দুঃখ ভুলাইয়া দিবে। আমাদের শাস্ত-শ্যামল সুবিস্তৃত মাতৃ-লক্ষ্মীর অঞ্চল আমাদের খাদ্য লইয়া নিরবধি প্রসারিত থাকিবে, এবং এদেশের বিশালতোয় নদনদী শত শত বাহু বিস্তার করিয়া সৰ্ব্বদাই তৃষ্ণ নিবারণের জন্য উত্থত আছে ও থাকিবে,-আমরা শ্রমবিমুখ না হইলে দারিদ্র্য আমাদিগকে মারিতে পরিবে না ; আমাদের উপান্ত স্বয়ং দিগম্বর মহাদেব। বঙ্গদেশে যে কত প্রাচীন মন্দির, দুর্গ, রাজপ্রাসাদ ও দীঘির ভগ্নাবশেষ পড়িয়া আছে, তাহার ইয়ত্তা নাই ; ইহাদের অনেকগুলিতেই বাঙ্গলা স্থাপত্যের নিজস্ব রূপটি আছে ; এই ঐশ্বৰ্য্যের শ্মশানভূমি পরিক্রমা করিতে আমার সাধ্যে কুলাইল না। আশা করি, বঙ্গীয় নবীন যুগের যুবকেরা এই দেশের উপেক্ষিত পূৰ্ব্ব-কীৰ্ত্তিগুলির প্রতি মনোযোগী হইবেন, বৃহৎ বঙ্গ/৭৭