পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাঠান রাজত্বসম্বন্ধে নানা কথা VNV) বঙ্গদেশের অনেক স্থলেই প্ৰাচীন হিন্দু মন্দির ভাঙ্গিয়া মুসলমানগণ এইভাবে মসজিদ রচনা করিয়াছিলেন। সেই সকল মসজিদ তো হিন্দু মন্দিরের মালমশলা দিয়াই রচিত হইয়াছিল ; পরস্তু সম্ভবতঃ দেশীয় যে সকল শিল্পিগণ ঐ সকল প্ৰাচীন মন্দির রচনা করিয়াছিলেন, তঁাহাদেরই বংশধবগণ অনেক স্থলে মুসলমান ধৰ্ম্মে দীক্ষিত হইয়া অথবা কোন কোন স্থলে স্বধৰ্ম্মে থাকিয়াও সেই সকল মসজিদ রচনা করিয়াছিলেন, মোগলেরা পাবস্য হইতে যে শিল্পপ্ৰভাব আনিয়াছিলেন, তাহা তখনও বাঙ্গলাব্য প্রবেশ করে নাই। ১৫৭৬ খৃঃ অব্দের পরে সেই হাওযা কিছু কিছু এদেশে ঢুকি যাছিল, তাহা পরে উল্লেখ করিব । হাভেল সাহেব প্রমাণ করিয়াছেন-ভারতীয় হিন্দু ও বৌদ্ধগণ এসিয়ার চিত্র ও স্থাপত্য শিল্পের গুরু। পাবশ্যের শিল্প ও বিদেশী মসজিদগুলির সুক্ষ্ম কাজ ও গঠন প্ৰণালী সমস্তই মুসলমানগণ বৌদ্ধশিল্পীর নিকট পাইয়াছেন। আৰ্য বৰ্ত্তে এই শিল্প ও স্থাপত্য যেরূপ বিকাশ পাইয়াছে, খাস পাবস্য দেশে তাহা হইতে পাবে নাই ! বৌদ্ধগণেব পদ্ম-চিহ্ন লোপ কবিয়া মুসলমানেরা যে গম্বুজ বচন কবিযাছেন, তাহাও এদেশে বই স্থাপত্য হইতে নেওয়া। ভারতবর্ষের বহু শিল্প ও স্থাপত্য বিশারদ মুসলমানদের বিজিত দাসরূপে ভিন্ন ভিন্ন দেশে চালান হইতেন । তাহারা মুসলমান ধৰ্ম্মে দীক্ষিত হইতে বাধ্য হইলেও তঁহাদের তুলি ও বাটালি হিন্দু শিল্পের কুশলতাবিচ্যুত হয় নাই। পাঠান-প্ৰাধান্য যুগের মুসলমানী মসজিদ ও প্রাসাদাবলীর মধ্যে শের সাহের সমাধি বিশেষরূপে উল্লেখযোগ্য । শেব সাহের বাল্যলীলা-ক্ষেত্ৰ সাসারামে এই সমাধিটি উখিত হইষাছিল। এই সমাধির উদ্ধ গম্বুজটি ছাডিয়া দিলে ইহার অনেকটা একটি হিন্দু রথেন্ব অনুকৃতি, তফাৎ এই যে ইহা রথের মত বেমানান দীর্ঘ হইয়া উঠে নাই। দুই দিকে সমতাসহকারে প্রসারিত করিয ইহাব দৈর্ঘ্য-প্ৰস্থেব এমনই একটি সুসামঞ্জস্য রক্ষা করা হইয়াছে যে উহা উত্তর কালে শিল্প-স্থাপত্যের শ্রেষ্ঠ পরিণতির আদর্শ তাজমহল-পরিকল্পনার পুর্বাভাস দেখাইতেছে! এই মন্দিরের চারিদিকে কৃত্রিম হ্রদের বিস্তৃত জলরাশি এক মাইল ব্যাপক, তস্মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আব্ব কয়েকটি সমাধি-মন্দির আছে। সেই বিস্তৃত জলরাশির উপর প্লবমান জলযানের মত দূৰ্ববৰ্ত্তী স্বল্পায়তন সমাধিমন্দিরেব উৰ্দ্ধে শুমতরুরাজিব অবকাশে এই সুবৃহৎ মন্দিরটি তাহার একক রাজত্বের মহিমা দেখাইতেছে। ইহা দেখিয়া একজন ইংরাজ কবি মুগ্ধ হইয়া যে কবিতাটি লিখিয়াছেন (Asiatic Miscellany) তাহার অনুবাদ আমি নিম্নে দিলাম স্বচ্ছ নীর হতে উৰ্দ্ধে মহিমা-প্ৰকাশ সুবিশাল গৃহ চুড ছুইছে আকাশ ; উপকুল বেড়া ছোট সমাধি-মন্দিরে বিশ্বস্ত সৈনিক যেন ঘিরে আছে বীরে । সম্রাটু একক, তার অখণ্ড বৈভব মৃত্যুতেও হারায়নি। স্বাতন্ত্র্য-গৌরব।