পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Y) YNSOY বৃহৎ বঙ্গ তাহা দেখিবার ও তাহদের ঐতিহ্য-গুরুত্ব নির্ণয় করিবার জন্য সমুদ্র লঙ্ঘন করিতে হইবে না, বাড়ীর চতুর্দিকে চোখ মেলিয়া চাহিলেই হইবে। বাঙ্গলার কত দীঘি যে প্রাচীন কীৰ্ত্তি লুকাইয়া রাখিয়াছে তাহার অবধি নাই। শত্রুর আক্রমণ-নিরোধে অশক্ত হইয়া বহু রাজা তাহদের ধনসম্পত্তি-সহ দেব-বিগ্ৰহসমূহ সেই দীঘির কোন কোনটির জলে বিসর্জন দিয়া চলিয়া গিয়াছেন, রাজ-অন্তঃপুরের কত সুন্দরী বিপৎকালে সেই দীঘির জলে ডুবিয়া আত্মসন্মান রক্ষা করিয়াছেন। ত্রিপুরেশ যশোধবমাণিক্য সেইরূপ এক দীঘিতে ধনসম্পত্তি লুকাইয়া গিয়াছেন সন্দেহ করিয়া, মোগলেরা একটা খাল কাটিয়া সেই দীঘির জল নিঃসরণপূর্বক তাহা শুকাইয়া ফেলিয়াছিলেন ( ১০৩৬ পৃঃ ) ৷ প্ৰত্যুমপুরের রাজা যুদ্ধে বিষ্ণুপুরের জয়মল্লের ( ৭০৯ পৃঃ ) হস্তে পৰাভূত হইযা স্বীয় প্রাসাদ সংলগ্ন ‘কানাই’ সরোবরে রাজ্ঞী ও অপরাপর মহিলাগণ সহ প্ৰাণ বিসৰ্জন করিয়াছিলেন, সেই দীঘিটি এখনও আছে। রাজা জানকীনাথের ( সুসঙ্গ দুৰ্গাপুরের আধিপ) রাজ্ঞী কমলা দেবী কমলাসায়রে প্রাণ বিসর্জন করিয়া স্বামীর পূৰ্বপুরুষদিগকে নরক হইতে রক্ষা করিয়াছিলেন। তাহার সংস্কার ভুল হইতে পারে, কিন্তু উদ্দেশ্য মহান ; এইজন্য সেই দীঘি একটি তীর্থস্বরূপ। সুপ্ৰসিদ্ধ অমর দীঘি খনন করার ইতিহাসের সঙ্গে ত্রিপুরার রাজগণের অধিকার কত ব্যাপক ছিল, তাহার ইতিহাস জড়িত ( ১০৩৩ পৃ: ) । ভাবত-বিশ্রুত মহীপাল দীঘি বিশালত্বে ও নিৰ্ম্মল সলিলের খ্যাতিতে পাল-সম্রাটগণেরই যোগ্য। এই দীঘিব পরিমাণ ৩৮০০ × ১১০০ ফুট ; ইহার তীরে যে মন্দির ছিল তাহ ধূলি-রেণু হইয়া গিযাছে, কিন্তু উচ্চতায় ও কারুকাৰ্য্যে তাহা ষে এই দীঘিরই যোগ্য ছিল, তাহা আমরা কল্পনা করিতে পারি। এই দীঘি দিনাজপুরে অবস্থিত, এবং এই জেলারই দেবীকোটে তপন দীঘি ৪৭০০ × ১৭৫০ ফুট, দোহাল দীঘি ৪০০০ × ১০০০ ফুট, কালা দীঘি ৪০ ০০ × ৮০০ ফুট, এবং প্ৰসিদ্ধ মেলান দীঘি, গোর-দীঘি ও আলতা দীঘি কুটীবাড়ীতে এখনও বিদ্যমান। আমরা পালাগানে দেখিতে পাই, কখনও কখনও রাজ্ঞীরা নিজ হাতে সুতা কাটিয়া রাজাকে আদেশ করতেন, সাতদিনে যতটা সু৩া কাটিবেন, সেই মাপে দীঘি খনন করিতে হইবে । কমলা সায়ার (, মৈমনসিংহ ) এই ভাবের এক সৰ্ত্তে কাটা হইয়াছিল, মৈমনসিংহের সুতানরীর দীঘিও এইরূপ সৰ্ত্তে খাত হইয়াছিল ( পূর্ববঙ্গগীতিকা, দ্বাদশ তীর্থের কথা ) । পূৰ্ব্বোক্ত দীঘিগুলি ছাড়া এদেশে যে আরও কত অতিকায় দীঘি বিদ্যমান, তাহদের খোজ কে করে ? আমরা ততক্ষণ লক ক্যাটিন এবং লক লেমন দীঘির কথা মুখস্থ করিব। মেদিনীপুরে ঝাকুরার বড় দীঘিটি নাই, ছোট দীঘিটি আছে, এই দীঘির এক পারে দাড়াইলে অপর পাবের মানুষ অতি ক্ষুদ্রাকৃতি দেখা যায় - তাহা পূর্বেই উল্লিখিত হইয়াছে। মেদিনীপুর গরবেটায় জলটুঙ্গী দীঘি, ইন্দ্ৰ পুষ্করিণী, পাথুরিয়া দুয়া, মঙ্গলা, কবেশ দীঘি, অমরপুষ্করিণী এবং হাদুয়া প্ৰভৃতি বৃহৎ দীঘি এবং তাহদের নিকট অনেক ‘তৃপ ও অট্টালিকার ভগ্নাবশেষ আছে। বগুড়ায় সিকোলার প্রাচীন দীঘির নীচে একটি দেবমন্দিরের সন্ধান পাওয়া গিয়াছে। ২৪-পরগনায় সরসুনা গ্রামের কমলা-বিমলার দীঘি এখানে উল্লেখযোগ্য। এখন আমাদেব পল্লীর ক্ষুদ্র পুকুরটি সংস্কার করিতে শক্তি নাই, এই সকল