পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৃহৎ বঙ্গ 8اوV কাজীদের সঙ্গে সহযোগে ডাকাতের দেশ লুটতরাজ করিত। কেনালাম এবং নেজামত প্ৰভৃতি দলুদের যে চিত্র পল্পী-কবিদের হাতে ফুটিয়াছে, তাহা পড়িলে প্ৰাণ আতঙ্কিত হইয়া উঠে । পূর্ববঙ্গে হিন্দুরাজত্বের অবসানে ও গাজিদের প্রথম আভু্যদয়ে দেশে এইরূপ "অরাজকতা আরম্ভ হইয়াছিল, বিজযগুপ্তের পদ্মাপুরাণে তাহার চিত্র দেওয়া হইয়াছে। “যাহার মস্তকে দেখে তুলসীর পাত ! হাতে গিলাফ বাধি লয় কাজির সাক্ষাৎ । কক্ষতলে মাপা থুইয়া বজ মারে কিল। পাথর প্রমাণ যেন ঝড়ে পড়ে শিল। পরেরে মারিতে পরের কিবা লাগে ব্যথা। চড়াচাপড় মারে আর ঘাড়ে গোতা ॥”-“ব্ৰাহ্মণ পাইলে লাগে পরম কৌতুকে । কার পৈতা ছিড়ে কারো থুথু দেয় মুখে৷ ” “ব্রাহ্মণ সজ্জন তঞ্চ বৈসে অতিশয়। ঘরেতে গোময় না দেয় দুৰ্জনের ভয়৷ ” “বাছিয়া ব্ৰাহ্মণ লয় পৈতা যার কাধে । পেয়াদাগণ লাগ পাইলে তাতে গলায় বাধে ।” হুসেন সাহ একটা ভবিষ্যৎ বাণী শুনিলেন যে, “নবদ্বীপের ব্ৰাহ্মণ আবার রাজা হইবে।” মন্ত্রীরা বলিলেন-পুরাণে ও গন্ধৰ্ব্বশাস্ত্রে এরূপ কথা লিখিত আছে বটে ; বিশেষ নবদ্বীপের লোকেরা বলশালী ও ধনু চালনায় পারদর্শী।” তখন হুসেন সাহ নবদ্বীপ ধ্বংস করিতে আদেশ করিলেন । “পিরুল্য গ্রামেতে বৈসে যতেক যবন । উচ্ছন্ন করিল নবদ্বীপের ব্ৰাহ্মণ। বিষম পিরুল্য গ্ৰাম নবদ্বীপের কাছে।” ইত্যাদি। জয়ানন্দ লিখিয়াছেন, মুসলমানেরা বাদাসাহের আদেশ পাইয়া নবদ্বীপে বিষম অত্যাচার আরম্ভ করিয়া দিল। “কপালে তিলক দেখে যজ্ঞসূত্ৰ কঁধে। ঘরদ্বার লোটে আর লৌহপাশে বাধে।" অত্যাচারীরা অশ্বথ ও মনসা গাছের মূলাচ্ছেদ করিয়া ফেলিল ও তুলসী গাছ মূলগুদ্ধ উপাড়িয়া ফেলিতে লাগিল। যে ঘরে শঙ্খ-ঘণ্টা বাজিত, সে ঘরে যাইয়া উৎপাত সুরু কবিত। গঙ্গাস্নান নিষিদ্ধ হইল, দেবালয়গুলি চুৰ্ণ করিল,-পণ্ডিতগুলিকে ধরিয়া জোর করিয়া মুসলমান করা হইতে লাগিল। বাসুদেব সাৰ্ব্বভৌম পলাইয়া পুরীতে আসিলেন, তথায় রাজা প্ৰতাপরুদ্র তঁহাকে স্বীয় সভায় রত্নসিংহাসনে বসাইয়া সম্মান করিলেন । তঁহার ‘পিতা বিশারদ কাশীবাসী হইলেন । বাসুদেবের ভ্ৰাভা বিদ্যাবাচস্পতি মহাশয় গৌড়দেশে চলিয়া গেলেন । কিন্তু এই অত্যাচার বেশী দিন চলে নাই। হুসেন সাহ বুঝিলেন, এরূপ। ভবিষ্যৎ বাণীর কোন মূল্য নাই, তখন সেই অত্যাচার নিবারণ করিয়া দিলেন। বিদ্যাবিরিঞ্চি, বিদ্যারণ্য এবং ভট্টাচাৰ্য্য, শিরোমণি ও অপরাপর মহাজনেরা যাহারা নবদ্বীপ ছাড়িয়া চলিয়া গিয়াছিলেন, র্তাহারা নবদ্বীপে পুনরায় ফিরিয়া আসিলেন। খামখেয়ালী নবাবগণের ঔদাৰ্য্যও নিষ্ঠুরতাব মতই অত্যধিক ছিল । হুসেন সাহ যে সকল হিন্দুমন্দির ভাঙ্গিয়াছিলেন, তাহ রাজকোষের অর্থদ্বারা পুনরায় সংস্কার করিয়া দিয়াছিলেন। যখন বাঙ্গলাদেশ প্ৰথম পাঠানদিগের অধিকৃত হয়, তখন এই ভাবে অত্যাচার কতক দিন চলিয়াছিল। তারপর রাজাদের মধ্যে যাহারা খামখেয়ালী। তাহারাও মাঝে মাঝে এই অত্যাচারের অনুষ্ঠান করিয়াছিলেন। শেব সাহের জবরদস্ত শাসনে কতক দিনের জন্য এই অত্যাচাব বন্ধ ছিল । কিন্তু মোগলবাজ্য-প্ৰতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে আবাব অত্যাচাব সুর’