পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Welsby', বৃহৎ বঙ্গ জগন্নাথ মিশ্র বল্লাল রাজার বাড়ীর নিকট বাস করিয়াছিলেন-ইহা তখন নবদ্বীপের দক্ষিণ সীমায় অবস্থিত ছিল, এবং এই স্থানটি সম্ভবতঃ নগরের শ্রেষ্ঠ স্থান ছিল। মুসলমানেরা এই স্থান অধিকার করার পর এই স্থানের নাম দিয়াছিল “মেঞাপুর,” কারণ অনেক মুসলমান এখানে বাস করিয়াছিলেন। মহাপ্রভুর জন্মস্থানটিকে মুসলমানী নামে অভিহিত করিতে ভক্তচরিত্যকারের স্বভাবতঃই কুণ্ঠাবোধ করিতেন। সুতরাং বৃন্দাবন দাস, মুরারি গুপ্ত প্ৰভৃতি আদি-লেখকের পল্লীর নাম উল্লেখ না করিয়া মহাপ্ৰভুর জন্মস্থান শুধু নবদ্বীপ বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। কিন্তু পরবত্তী লেখকেরা (তন্মধ্যে ভক্তিরত্নাকর-রচয়িতা নরহরি চক্ৰবৰ্ত্তীর নাম উল্লেখযোগ্য) “মেঞাপুর” শব্দটি হিন্দুভাবাপন্ন করিয়া উহাকে “মায়াপুর” নাম দিয়াছেন। কিন্তু প্ৰাচীন মুসলমানদের দলিলপত্রে এবং চলিতকথায় মিঞাপুর বা মেঞাপুর নাম এখনও প্রচলিত দেখা যায। প্ৰায় দুইশত বৎসর পূর্ব হইতে হিন্দুৱা উহাকে মায়াপুর নামে অভিহিত করিয়া আসিয়াছেন। নবদ্বীপে দ্বিতীয় মায়াপুর নাই। যেখানে বহু শতাব্দীর পূর্ব হইতে রামচন্দ্রের পূজা হইত এবং রামের রথোৎসব অনুষ্ঠিত হইত। সেখানে বাঙ্গলার কোন প্ৰতাপশালী ব্যক্তি রামচন্দ্রের একটি মন্দির নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন। উহা ঠিকই করিয়াছিলেন, যেহেতু ঐ স্থানটি রামের লীলার একটি প্ৰাচীন তীর্থ ছিল । সেই মন্দির এখন নদীগর্ভে কিন্তু, সেই রামচন্দ্রের মন্দির কখনই চৈতন্যমন্দির হইতে পারে না, এবং সে স্থানেব নামও মায়াপুর নহে। জোর করিয়া কেহ কেহ নিজেরা উহার নাম “মায়াপুর’ দিয়াছেন । জগন্নাথ মিশ্র সুপণ্ডিত ছিলেন, তাহার হাতের লেখা একখানি সংস্কৃত মহাভারতের আদিপৰ্ব্ব এখনও পণ্ডিত ৫/ মহামহোপাধ্যায়। অজিত ন্যায়রত্নের বাড়ীতে আছে, উহা ১৪৬৯ খৃষ্টাব্দের লেখা। একটি বর্ণাশুদ্ধি নাই, হাতের অক্ষর মুক্তার ন্যায়। এই মহাভারতের পুথিখানি অতিযত্নে রাখা উচিত। আমি উহা দেখিয়াছি। এই পুথি লেখার ১৭ বৎসর পরে চৈতন্যদেব জন্মগ্রহণ করেন। জগন্নাথ মিশ্রকে তঁহার পত্নী শচীদেবী অর্থাগমের জন্য মঙ্গলচণ্ডী প্রভৃতি দেবপূজার পৌরোহিত্য করিতে উপদেশ দিয়াছিলেন, “তুমি পণ্ডিত অথচ তোমার চিরদারিদ্র্য।” এই অনুযোগ দেওয়াতে জগন্নাথ বলিয়াছিলেন, “ঐ দেখি আকাশের পাখীগুলি ; উহাদিগকে কে খাইতে দেয় ? আমরা সত্যপথে থাকিব, তুচ্ছ অর্থের জন্য অনুচিত আগ্রহ আমার নাই ।” ( চৈতন্য-ভাগবত ) জগন্নাথ মিশ্রের আটটি মেয়ে হইয়াছিল, তাহারা আঁতুড়ে অথবা আপোগণ্ড বয়সেই মৃত্যুমুখে পতিত হয় ; তৎপরে বিশ্বরূপ নামক পুত্র জন্মে এবং বিশ্বরূপ জন্মিবার ১১ বৎসর পরে একদিন অতিক্রান্ত সন্ধ্যায় ( ১৪০৭ শিকে, ১৪৮৬ খৃষ্টাব্দের ১৮ই ফেব্রুয়ারী) যখন সম্পূর্ণ গ্ৰাস হইতে পূৰ্ণচন্দ্ৰ সবেমাত্র মুক্ত হইয়া আকাশে ঝলমল করিয়া উঠিয়াছেন, সেই শুভক্ষণে সমস্ত নবদ্বীপবাসী গঙ্গাস্নানান্তে শাহরিবোল” শব্দে আকাশ মুখরিত করিতেছিলেন-ঠিক সেই সময়ে চৈতন্যদেব মায়াপুরে একটি নিমগাছের নীচে siste fije