পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ʻo 8 বৃহৎ বঙ্গ শ্ৰীরাম পণ্ডিতের বাড়ীতে এক ঝাড় কুন্দকুলের গাছ দিল-তথায় দিবারাত্ৰ ফুল ফুটিত। প্ৰাতে ব্ৰাহ্মণের ফুল তুলিবার জন্য বেতের সাজি লইয়া তথায় যাইতেন এবং পল্লীর সমস্ত কথার আলোচনা করিতেন। ইহাদের মধ্যে ছিলেন শুক্লাম্বর, গদাধর, শ্ৰীমান পণ্ডিত প্রভৃতি, শ্ৰীবাস তো অবশ্যই ছিলেন। ইহারা সকলেই বৈষ্ণব-ভাবাপন্ন, জগতে ভক্তির অভাব দেখিয়া আক্ষেপ করিতেন। তঁহারা নিমাই পণ্ডিত সম্বন্ধে নানা কথাবার্তা বলিতে লাগিলেন। কেহ কেহ বলিলেন “সে পাগল নয়, এ যে কি তাহা বুঝিতে পারা যাইতেছে না। ;-এত জলও মানুষের চোখে থাকে। কৃষ্ণনাম বলিলেই উন্মত্ততা বৃদ্ধি পায়-কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলিয়া আছাড় খাইয়া মাটীতে পড়ে।” শ্ৰীমান পণ্ডিত বলিলেন, “আজ আমার বাড়ী নিমাই আসিয়াছিল, আমি তাহাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম, “তোমার কি হইয়াছে ?” সে বলিল আমি তোমার বাড়ী যাইয়া আমার কথা শুনাইব । আজই তার আমার এখানে আসার কথা।” সকলেই এ সম্বন্ধে কুতুহলী হইলেন। এই সময়ে একটি লোক ছুটিয়া আসিয়া শ্ৰীবাসকে বলিল, “চলুন, শচী দেবী বড় বিপন্ন, নিমাই বড় বাড়াবাড়ি করিতেছেন, শচী ঠাকুরাণী বিপদে পড়িয়া আপনাকে ডাকিতেছেন।” শ্ৰীবাস চলিয়া গেলেন, শচী দেবী বলিলেন “আপনারা ‘আমার ছেলের একটা উপায় করিয়া দিন, আমি কি করিব ? নিমাই যে আমার সর্বস্ব, আমার সর্বস্ব যাইবার পথে ।” যে ঘরে নিমাই ছিলেন, শচী শ্ৰীবাসকে সেই ঘর দেখাইয়া দিলেন। শ্ৰীবাস যাইয়া সেই ঘরে খিল দিলেন । তারপর প্রায় চারি দণ্ড পবে শ্ৰীবাস বাহির হইলেন, তাহার চক্ষু অশ্রুপুত। তিনি শচীকে বলিলেন, “মা তোমার ছেলে পাগল হয় নাই। উহাকে বিরক্ত করিও না। ধ্রুব, শুক, প্ৰহলাদের কথা আমরা শুনিয়াছিলাম, আমাদের ভাগ্য বশে তেমনই একজন নবদ্বীপে আসিয়াছেন ! এই সময়টুকুব মধ্যে নিমাই আমাকে পাগল করিয়া ফেলিয়াছে, অচিরে সমস্ত দেশটা পাগল করিবে ।” এইবার শচী আশ্বস্ত হইলেন । এদিকে দিনের বেলায় নিমাই পণ্ডিত গঙ্গাতীরে যান, সেখানে কাহারও বস্ত্ৰ ধুইযা নিঙড়াইয়া শুকাইতেছেন, কাহারও ধুতি প্ৰভৃতি কঁাধে করিয়া বাড়ীতে পৌছাইয়া দেন, কাহারও পা ধোয়াইয়া দেন। লোকে আপত্তি করিলে তিনি বিনীতভাবে বলেন-“তোমাদের সেবা করিলে আমি কিঞ্চিৎ কৃষ্ণ-ভক্তি পাই, এই সেবা হইতে আমাকে বঞ্চিত করিও না ।” রাত্ৰে শ্ৰীবাসের ইতিহাস-বিশ্রুত আঙ্গিনায় সংকীৰ্ত্তন। নির্দিষ্ট কয়েকটি লোকের সঙ্গে এই সংকীৰ্ত্তন । দলের প্রধান ৭২ বৎসরেব বৃদ্ধ অদ্বৈত আচাৰ্য্য “পাঙ্ক কেশ পদক দাডি বড় মোহনীয়। দাড়ি পডিয়াছে, তার হৃদয় ছাইয়া ;” এইদলে শ্ৰীবাস স্বয়ং, গদাধর, শুক্লাম্বব, শ্ৰীমান পণ্ডিত, গঙ্গাদাস প্রভৃতি আরও কয়েকজন ছিলেন। এই দলে ছিলেন বক্রেশ্বর পণ্ডিত, “প্ৰভুর মতন যার নৰ্ত্তন সুন্দর।” সারারাত্রি কি ভাবে কাটিয়া বাইত তাহা তাহাবা জানিতেন না। এই ৫০০ বৎসর যাবৎ কীৰ্ত্তনে গোটা বাঙ্গল দেশটা মাতাইয়া রাখিয়াছে। এখনও ভাল কীৰ্ত্তন শুনিলে লোক ক্ষুধা তৃষ্ণা নিদ্রা সমস্ত ভুলিয়া যায়—আর যিনি কীৰ্ত্তনানন্দের হরিদ্বার, যাহার শ্ৰীমুখে এই সুর প্রথম উচ্চারিত হইয়াছিল,