পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গৌরাঙ্গ ও তাহার পরিকরবর্গ Գe d: পূৰ্বরাগের আবেগে সম্পূর্ণ ভগবানের প্ৰেমে আত্মহারা প্ৰেমিক পাগলের সেই নৃত্যসেই গান যে কি প্রেরণা দিয়াছিল, তাহা কি করিয়া বুঝাইব ? পৃথিবীর অন্যান্য দেবকল্প ব্যক্তিরা ধৰ্ম্মসম্বন্ধে উপদেশ দিয়াছেন, ধৰ্ম্মজীবনের উজ্জ্বল আদর্শ ও নীতির শুভ্রতা দ্বারা জগতে পূজ্য হইয়া আছেন—কিন্তু ভগবৎপ্রেম লোকচক্ষে এরূপ সুস্পষ্ট করিয়া আর কে দেখাইয়াছেন ? সেই যে মৃদঙ্গ বাজিয়া উঠিয়াছিল তাহার বোল এখনও নীরব হয় নাই, সেই শতকণ্ঠ-উচ্চারিত বাণী, যাহা শ্ৰীবাসের আঙ্গিনায় প্ৰথম আকাশে উঠিয়াছিল—তাহা এখনও আমাদিগের প্রাণ হরণ করিতেছে। যে রাত্রে নিমাই রুক্সিণী সাজিয়া অভিনয় করিয়াছিলেন, সেই রাত্রে তঁহাকে দেখিয়া লোকে বলিয়াছিল—“ইনি কি মূৰ্ত্তিমতী ভক্তি ? ইনি কি ভূতলে আবিভূতি পদ্মাসনা কমলা, না মানবদেহধারিণী ভারতী,-রাগিণীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী ?” স্বয়ং সেদিন রুক্মিণী কৃষ্ণকে যে চিঠি লিখিয়াছিলেন তাহা সত্যিকার কৃষ্ণ-প্ৰেমেব অশ্রুতে মাখা ; রঙ্গমঞ্চে এমন সত্যিকার অভিনয জগতে কেহ কখনও দেখে নাই। সেদিন নবদ্বীপে স্বয়ং কৃষ্ণভক্তি আসরে নামিয়া আসিয়া মানুষকে ভগবৎপ্রেম শিখাইয়া দিয়াছিল। প্ৰাতঃকাল হইল, দর্শকমণ্ডলী বলিল “এমন রাত্ৰিও প্ৰভাত হয় ।” ঈশ্রৱ পুৰী নবদ্বীপে আসিলে নিমাই আহার-নিদ্রা ছাড়িয়া তাহার কাছে পড়িয়া থাকিতেন । একদিন শচী দেবী নির্জনে নিমাইকে বলিলেন, “নিমাই, আমার বড় ভয় হইতেছে, আমাকে অভয় দাও, আমার বুকটা বড় অস্থির হইয়াছে।” নিমাই বলিলেন, “মা, সে কি কথা ? তুমি যাহা আদেশ করিবে তাহাই করিব । কি হইয়াছে বল ।” তখন শচী দেবী চোখের জল মুছিতে মুছিতে বলিলেন, “তুমি সন্ন্যাসী পাইলে এত খুন্সী হও কেন ? মনে হয় যেন তোমার কোন প্ৰাণের অন্তরঙ্গের সঙ্গে দেখা হইয়ােক স্তু, তোমার আহার-নিদ্র-জ্ঞান থাকে না, আমাদিগকে ভুলিয়া যাও। নিমাই, আমাকে ছুইয়া শপথ কর, তুমি সন্ন্যাসী হইবে না। বিশ্বরূপ প্ৰাণে বড় দাগ দিয়া গিয়াছে, তুমি ছাড়া আমার কেহ নাই, আমাকে ছাড়িয়া যাইও না ।” নিমাই মাকে নানারূপ প্ৰবোধ দিয়া আশ্বস্ত করিলেন । শচী দেবী কঁাদিতে কঁদিতে বলিতে লাগিলেন—“আমি তোমার নিকট বড় অপরাধ কবিয়াছি, তুমি বল আমাকে ক্ষমা করিবে ।” নিমাই বলিলেন—“কি করিয়াছ ? তুমি মা, ছেলের কাছে মা কি কোন অপরাধ করিতে পারে ? ওরূপ বলিলে যে মা আমি অপরাধী হই ।” শচী দেবী বলিলেন-“বিশ্বরূপ নিজহাতে একখানি বই লিখিয়াছিল, সে তাহা আমার কাছে রাখিয়া দিয়া বলিয়াছিল--নিমাই বড় হইলে এই বই পড়িবে। আমি সেই বই ছিডিয়া গঙ্গায় ভাসাইয়া দিয়াছি, পাছে সেই বই পড়িয়া তুমি সন্ন্যাসী হও ।” নিমাই বলিলেন—“দাদার চিহ্ন নষ্ট করিয়া ভাল কব নাই, কিন্তু আমার কাছে ক্ষমা চাওয়া তোমার সঙ্গত নহে—আমি যে তোমার একান্ত মেহের অনুগত ছেলে-এরূপ ক্ষমা চাহিলে আমার অকল্যাণ করা হয়।” পূৰ্ব্বোক্ত সমস্ত কথাই আমি চৈতন্য-ভাগবত এবং অপরাপর প্রামাণ্য পুস্তক হইতে গ্ৰহণ করিয়াছি { বৃহৎ বঙ্গ/৫০ ঈশ্বর পুরী সম্বন্ধে শচীCW称硕巴哥日