ঘণ্টায় ৩০ মাইল বেগে চলিতে লাগিল। তখন পদনিম্নে বায়ুতাড়িত নায়াঞ্জা হ্রদে বিপুল তরঙ্গোচ্ছ্বাস হইতেছিল। তরঙ্গশিরে ফেনপুঞ্জ তপন কিরণে বড় উজ্জল দেখাইতেছিল। বেলুন বেলা ৯টার সময় হ্রদের পশ্চিম তীরে উপনীত হইল। সেদিকে কেবল মরুভূমি ও কোন স্থানে ঘন বন ভিন্ন আর কিছুই ছিল না। বেলুন আরো অগ্রসর হইল। তখন দূরে নায়াঞ্জা হ্রদের প্রান্তদেশে উচ্চ গিরিমালার শুষ্ক কঠিন চূড়াগুলি দেখা যাইতে লাগিল। বোধ হইল যেন তথা হইতে একটী বেগশালী নদী বক্রপথে প্রবাহিত হইয়াছে। ফার্গুসন্ বলিলেন “দেখ—দেখ। আরবরা যা বলছে তা’ ঠিক। তারা বলেছে একটা নদী আছে, ইউকেরিও হ্রদের বারিরাশি সেই নদী দিয়ে উত্তরমুখে বয়ে যায়। ওই ত সে নদী। নিশ্চয়ই এই নদী নীল নদী।”
“নীল নদী!” কেনেডি বিস্মিত হইয়া কহিলেন, “নীল নদী।”
বেলুন তখন নদীর উপর দিয়া শূন্য-পথে ভাসিয়া যাইতেছিল। বিশাল পর্ব্বতশ্রেণী স্থানে স্থানে নদীর মুক্ত পথ রুদ্ধ করিয়া দণ্ডায়মান ছিল। প্রহৃত বারি-রাশি ফুলিয়া ফাঁপিয়া গর্জ্জন করিয়া কখনো ভীম জলপ্রপাতবৎ কখনো বা পর্ব্বতরন্ধের ভিতর দিয়া সহস্র ধরে’ বহিয়া যাইতেছিল। পর্ব্বত হইতে শত সহস্র ধারা নামিয়া সেই বেগশালী বারিপ্রবাহের সহিত মিলিত হইতেছিল।
ফার্গুসন্ বলিলেন, “এইটাই নীল নদী। নদীর নাম নিয়েও যেমন গোলযোগ, উৎপত্তি-স্থান নিয়েও তেমনি গোলযোগ।”