পাতা:বৌদ্ধ-ভারত.djvu/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম অধ্যায়

চেষ্টা সফল হইতে পারে না; এই পত্রপল্লবশাখাহীন তরুর মূলটা এদেশের মাটিতে রহিয়াই গিয়াছে।

 গৌতম বুদ্ধই সর্ব্বপ্রথমে বৈদিক ক্রিয়াকর্ম্মের বিরুদ্ধে দাঁড়াইয়াছিলেন, একথা সত্য নহে। তাঁহার প্রাদুর্ভাবের বহু পূর্ব্ব হইতেই বিরুদ্ধতা দেখা গিয়াছে। নিগ্রন্থ, আজীবক প্রভৃতি সম্প্রদায়গলিও বৈদিক ক্রিয়াকর্ম্মের কোনো প্রয়োজনীয়তাই স্বীকার করে না।

 এই বেদবিরোধী ক্ষুদ্র বৃহৎ দলগুলির প্রভাব সমস্ত দেশের উপর পরিব্যাপ্ত হইতে পারে নাই, তথাপি দেশের স্থানে স্থানে লোকের চিত্ত বিদ্রোহের তরঙ্গ তুলিয়াছিল। ঐ সকল ক্ষুদ্র দলের নায়কগণ সকলের গ্রহণযোগ্য কোন উন্মুক্ত সার্ব্বভৌম রাস্তা নির্দ্দেশ করিয়া দিতে পারেন নাই। দুই একজন নায়ক একদল লোকের চিত্ত জয় করিয়া সম্প্রদায়ের সৃষ্টি করিতে পারিয়াছিলেন, এইমাত্র। গৌতম বুদ্ধের অত্যুজ্জল প্রতিভার আলোক মানবের গম্ভব্য পথ প্রকাশিত করিয়া দিয়াছে। তাঁহার, সাধু চরিত্র এমন মাধুর্য্যে মণ্ডিত ছিল যে, তাঁহাকে সকলেই আপনার বলিয়া গ্রহণ করিল, তাঁহার উদারতা এমন বিশ্বব্যাপিনী ছিল যে কোনো লোকই তাঁহাকে আপনার বলিতে সঙ্কোচ বোধ করিল না। তাঁহার বাণী এমন ঋজু ও মর্ম্মস্পর্শী ছিল যে, তীক্ষ্ণ তীরের ফলার ন্যায় উহা যে কোনো শ্রোতারই হৃদয়ে বিদ্ধ হইয়া থাকিত। এখন প্রায় আড়াই হাজার বৎসর পরেও এই মহাপুরুষের নিষ্কলঙ্ক শুদ্ধ চরিত্রের পবিত্র-সৌরভ এবং নীতি ও ধর্ম্মের বাণী অসংখ্য নরনারীর চিত্তহরণ করিতেছে। তাঁহারই অপূর্ব্ব মৈত্রীমূলক ধর্ম্ম ভারতবর্ষের নানাপ্রদেশের নানা ভাষাভাষীদিগকে ঐক্যসূত্রে গ্রথিত করিয়াছিল। উদ্ভবকাল হইতে প্রায় পনর শত বৎসর এই সদ্‌ধর্ম কখনো উজ্জ্বল প্রভায়, কখনো মৃদুমন্দ ভাতিতে ভারতবাসীর চিত্তে আলোক দান করিয়াছে। তাহারপর সহসা রূপকথার রাজকুমারীর প্রাণের মত কে যেন কেমন